অণুগল্পঃ একটি অসমাপ্ত গল্প – মলয় চৌধুরী

একটি অসমাপ্ত গল্প
মলয় চৌধুরী

‘’কেমন আছেন স্যার‘’?

ম্যাগাজিনের পাতায় ডুবে ছিলাম । ঘোর কেটে গেলো।

আমার উল্টো দিকে বসা এক মহিলা প্রশ্নটা করেছেন।

“আমাকে চিনতে পারছেন”?

স্মৃতির অলিগলি দিয়ে মুহূর্তের ভিতর বয়ে গেল সন্ধানী স্রোত। বেশ কয়েক অধ্যায় পিছিয়ে এসে একটা অধ্যায়ে এসে থেমে গেলাম ।

“সুস্মিতা না “?

“আপনি অনেক বদলে গেছেন ,তবু চিনতে পেরেছি “।

বয়সের সংগে সংগে শরীর ,মন ভারী ও গভীর হতে থাকে। সেটাই স্বাভাবিক।

আমি তখন বেকার গ্র্যাজুয়েট । মেসে থাকি । টিউশনি করে দিন কাটাই । নাইন, টেন, ইলেভেন, টুয়েলভ- এই চার বছর সুস্মিতাকে পড়িয়েছিলাম। বেশ একটা ভালোলাগার টান হয়ে গিয়েছিল । উল্টো দিকের আকর্ষণও বুঝতে পারতাম। মুখ ফুটে কেউ কিছু বলিনি ।

হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে শেষ যেদিন ওদের বাড়ী গেছিলাম, ফেরার সময় গভীর চোখে তাকিয়ে বলেছিল ‘’আমাকে আর কিছু বলবেন না’’?

আমি বলেছিলাম,”মন দিয়ে কলেজের পড়া কোর। ভাল থেকো “।

সুদৃশ্য মুখবন্ধ একটা খাম হাতে দিয়ে বলেছিল,” ঘরে গিয়ে পড়বেন প্লীজ “।

কিন্তু ঘরে আমার জন্য অন্য খবর ছিল । ঐদিন সন্ধ্যাতেই আমাকে বাইরে চলে যেতে হয়েছিল । আর ফিরতে পারিনি ।

“আমার চিঠিটা পড়েছিলেন”?

“হ্যাঁ “ ।

নিমেষের মধ্যে মুখের আলোটা যেন ম্লান হয়ে গেল ।

“আমার স্টেশন এসে গেছে। আসছি “।

নেমে গেলো সুস্মিতা ।

বললাম না সত্যিটা । খামটা মুখবন্ধ অবস্থায় আজও পুরনো ডায়েরির পাতার ভাঁজে সযত্নে রাখা

আছে ।পড়িনি । কী লেখা থাকতে পারে অনুমান করেও পড়ে দেখিনি । সে আমার অপ্রকাশিত প্রেম ।

6 thoughts on “অণুগল্পঃ একটি অসমাপ্ত গল্প – মলয় চৌধুরী

  1. অসাধারণ। শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ……

    1. গল্পটা বড় আন্তরিক। ভালো লাগলো‌।

  2. অপূর্ব প্রেম। থেকে যায় সারাজীবন। খুব ভালো লাগল।

  3. ভীষণ ভালো লাগলো।
    শুভেচ্ছা রইলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *