রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভূমিকা গোস্বামী
আমি যে সময় জন্মেছি রবীন্দ্রনাথ তার বহু বছর আগে তাঁর নশ্বর শরীর ত্যাগ করেছেন, কিন্তু তিনি সর্বদা আছেন আমার জীবনে। ভীষণ ভাবে অনুভব করি। যখন তাঁর “শান্তি নিকেতন ” পড়ি , মনেহয় , তিনি আমার পাশেই আছেন। তাঁর ভাবনার সাথে নিজের ভাবনাকে মেলাতে পারলে স্পর্শ সুখও মেলে। তাঁর ভোরের আলোচনা সভায় আমিও যেন এককোণে বসে আছি। তিনি একেক দিন একেক বিষয় নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোকপাত করছেন । আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। মনেহয় , আমার মনের ভাবনাগুলো যেন গুটিপোকার খোলস ছেড়ে পাখা মেলছে।
তিন বছর বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথের গানের তালিম শুরু হয়েছিল। তখন গানের অর্থ বোধগম্য হত না। শ্রুতির মতো মুখস্ত করে গেয়েছি। বড় হওয়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে গানের শব্দগুলো আমাকে ভাবতে শেখাল। যারে যায়না পাওয়া তারি হাওয়া লাগল আমার মনে। আমি তাঁর প্রতিটি গানে ভারতীয় দর্শন কে দেখতে পেলাম।
চল্লিশ বছর আগে উপনিষদ পড়তে গিয়ে সেদিন ভীষণ ভাবে বিস্মিত হয়েছিলাম। প্রতিটি শ্লোকে রবীন্দ্রনাথের গান মনে পড়ে যাচ্ছিল।
‘তেন ত্যাক্তেন ভুঞ্জিথা’–ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভোগ কর।(উপনিষদ)
‘ত্যাগাচ্ছান্তি রনন্তরম্’–ত্যাগেই অনন্ত শান্তি। (গীতা)
রবীন্দ্রনাথ বলছেন — “আমায় যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি”
এই গানের শেষ অংশে দেখি —
” আমার বলে যা পেয়েছি শুভক্ষণে যবে
তোমার করে দেব তখন তারা আমার হবে।
সব দিতে হবে। সব দিতে হবে।”
ঈশ্বরের কাছে কতটা আত্ম সমর্পণ বুঝতে পারছেন !
বেদের কবি বলছেন – ত্বম্ অস্যয়ন্তা সুক্তম্– এই সুক্তের তুমিই নিয়ন্তা প্রভু।
দেখুন , রবীন্দ্রনাথ কী বলছেন — “তুমি যা বলিবে তাই বলিব। আমি কিছুই না জানি।”
বেদের মহিলা কবি – বাক দেবীর একটি সুক্ততে পাচ্ছি….
অহং রাষ্ট্রী সংগমণি বসুনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্ —
আমি রাষ্ট্র শক্তি, আমিই বসু বা ঐশ্বর্যের লেনদেন। আমিই সৃষ্টি ক্রিয়া কান্ডের প্রথম যজ্ঞভাগী।
কি ? ‘আমি’ কবিতাটি মনে পড়ছে তো ?
“আমারি চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ, চুনি উঠল রাঙা হয়ে।”
ঋষি ভরদ্বাজ বলেছেন – পরিপূজা পরস্তাত্ হস্তং দধাতু দক্ষিনম্
রবীন্দ্রনাথ বলছেন – হাতখানি ওই বাড়িয়ে আন দাও গো আমার হাতে
ধরব তারে , ভরব তারে রাখব তারে সাথে।
শাস্ত্র বলছে – জীবস্য তত্ত্ব জিজ্ঞাসা ।
কত সহজ করে তিনি ভারতীয় দর্শনকে আমাদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন আমাদের কল্যাণের জন্য। সমস্ত আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসার উত্তর পেয়েছি আমরা।
তিনি বলছেন — “হৃদয় দেবতা রয়েছ প্রাণে মন যেন তাহা নিয়ত জানে।
পাপের চিন্তা মরে যেন দহি দুঃসহ লাজে। “
হৃদয় দেবতা যে প্রাণে বিরাজ করছেন, সেটা মন যেন সবসময় মনে রাখে। যেখানে প্রাণেশ্বরের আসন পাতা রয়েছে সেখানে কি পাপের ঠাঁই হওয়া সংগত ?
তাইতো কখনও তিনি আর্তনাদ করেন —
” এই দুয়ার দেওয়া ঘরে
কভু আঁধার নাহি সরে,
তবু আছ তারি ‘পরে
ও মোর দরদীয়া।
সেথা আসন হয় নি পাতা ,
সেথা মালা হয় নি গাঁথা,
আমার লজ্জাতে হেঁট মাথা
ও মোর দরদীয়া।
প্রতিটি মানুষ অমৃতের পুত্র। কিন্তু পঞ্চ ইন্দ্রিয়, ছ ছটা রিপু দিয়ে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন মানুষকে। এগুলো আবার কাটাও যায় না। এগুলোকে বশে রেখে পাঁকের মধ্যেই অমল কুঁড়ি ফোটাতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।
এভাবেই সদ্ গুরুর মতো আমাদের জন্য বহু মণিমুক্ত সাজিয়েছেন তিনি, তাঁর বিশাল গানের ভান্ডারের প্রতিটি ছত্রে। রবীন্দ্রনাথের গান ইষ্ট দেব মন্ত্রের মতো পূজনীয়।
অপূর্ব লেখা! সমৃদ্ধ হলাম।
অসাধারণ….খুব ভালো লাগলো । সমৃদ্ধ হলাম ।
ধন্যবাদ। অনেক শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ।অনেক শুভেচ্ছা।
অসাধারণ। ভীষন ভালো লাগলো।
খুব ভালো লিখেছেন। সমৃদ্ধ হলাম।
ধন্যবাদ। অনেক শুভেচ্ছা।
ভীষণ সুন্দর লেখা।
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ।অনেক শুভেচ্ছা।