কবিতাঃ উঠোন হারিয়ে গেছে – সাত্যকি (বারাসাত)

উঠোন হারিয়ে গেছে
সাত্যকি

রান্নাঘর পেরিয়ে এসে এখানেই জমত আসর – চাঁদের আলোয়
অন্ধকারকে হারানোর খেলা চলত প্রত্যেক পূর্ণিমা রাতে –
মাটির ফাটলের ভিতর সর সর সরে যেত হাওয়া – ঘাসের শিকড়ের পাশে
বসে থাকত নিঝুম ব্যাঙ – প্রত্যেক অমাবস্যা কেটে গেলে গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় মাদুর
বিছিয়ে এখানেই চাঁদের আলোয় গা মাখতেন আমার ঠাকুরদা – ঠাকুমা লন্ঠনের আলো
তুলে রেখে পাশে এসে বসতেন – ফুর ফুরে হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ত তামাকের গন্ধ –
এরই পাশে চাঁদের আলোর নিচে বসে থাকতে দেখেছি জীবনানন্দকে –
লেবু ফুলের আসনে তিনি বসে আছেন – আর ঠাকুরদাকে বলছেন,
লেবু ফুলের গন্ধের মত কলকাতার গল্প –
ঠাকুরদা কলকাতায় গিয়েছেন একবার – কোনো এক তুতো ভাইয়ের সঙ্গে –
শিয়ালদা স্টেশনের বাইরে খানিক দাঁড়িয়ে থেকে, পরের ট্রেনে ফিরে এসেছিলেন বাড়ি –
এই তার কলকাতা দেখা – বাড়ি ফিরে বলেছিলেন, কত মানুষ দেখলাম, আমাদেরই মত,
তবে, তারা খুব ব্যস্ত মনে হল – জ্যোৎস্নার নিচে আমিও বসে শুনছি কলকাতার পূর্ণিমা কত মায়াময়-
জীবনানন্দ বলছেন, ট্রাম গাড়ির গল্প আর হরেক মানুষের রুদ্ধশ্বাস কাহিনি –
ঠাকুরদা ফিরে আসলে রান্নাঘর থেকে ঠাকুমা বেরিয়ে আসতেন জলের গ্লাস হাতে – বাবা ফিরলে মা –
প্রতিবেশীদের এখানেই দেখেছি, মাদুরের উপর বসে বিকেলে গল্প করছেন –
এখনও সন্ধ্যা আসে – পূর্ণিমাও –
কিন্তু,সেই লেবু ফুলের গন্ধ, বনতুলসীর ঘন অন্ধকার থেকে ফোঁটা ফোঁটা জোনাকির আলো –
ঝিঁঝিঁ পোকার কিচকিচ ফিরে আসে না – উঠোনের সেই কোল ঘেঁষে এখন আমাদের বসার ঘর, প্রতিবেশীদের
যে উঠোন ছিল তাতে নতুন প্রতিবেশী এসেছেন – পূর্ণিমার আলো এখন উঠোন ছোঁয় না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *