মার্চ মাস
ফাল্গুনী পৈলান
বয়স তখন আমার ২২ কি ২৩ হবে। বিয়ে হয়ে সবে এসেছি,নতুন সংসার। যদিও সংসার বলতে তেমন কেউ ছিল না,সে আর আমি। কারণ আমি তো ১৫ দিনের মাথায় পুরো পরিবারকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম,দিল্লী। তাই শশুর,শাশুড়ি, দেওর,ননদ এদের কোনো ঝক্কি আমাকে পোহাতে হয় নি। যদিও এদের নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ ছিল না। আর দেওর ছিল আমার বন্ধুর মত।
সংসারের অভিজ্ঞতা আমার তেমন ছিল না,ছাত্রী জীবনের অনেকটা সময় কাটাতে হয়েছিলো হোস্টেলে । তাই পড়াশোনা ছাড়া বিশেষ কিছু বুঝতাম না। পড়াশোনায় তেমন ভালো নাহলেও আগ্রহটা ছিল,এই আর কি! যেটা বলছিলাম,সংসারের হাতে খড়িটা তাই স্বামীর হতেই। স্বামী উচ্চ পদে কর্মরত,তাই মনটা বেশ ফুরফুরে ছিল। তবে জীবন কিন্তু আর ৫জন সাধারণ নারীর মতোই। সকালে উঠে,রান্নাবান্না টিফিন,সবকিছু তাকে নিজেকেই করতে হতো।
বিকালে আবার অফিস ফেরত স্বামীর জন্য কিছু বানিয়ে রাখতেও ভুল হতো না,যতটা সম্ভব তার খেয়াল রাখা যায়,তার কার্পণ্য করতাম না।
অফিসের ব্যাগ থেকে খালি টিফিন বক্সটা নিয়ে চলে যেতাম রান্না ঘরে। বক্সটা সিঙ্কে রাখতে রাখতে স্বামীকে বলতাম,কিগো
রোজ খালি টিফিন বক্স আন,একদিন কি আমার জন্য কিছু আনতে ইচ্ছা হয় না! অন্যদিক থেকে উত্তর আসে — কিছু আনতে হয় নাকি?
–না, মানে কোনোদিন কি কিছু মনে হয় না!!
–কই তুমি তো কিছু বলনি।
–না বললে বুঝি কিছু আনতে নেই!
–না চাইলে কি ভাবে বুঝবো ,তোমার প্রয়োজন?
–কেন বাবা তো আনতো,বাবার কাছেতো কোনোদিন চাইনি,বাবা কিভাবে বুঝত? প্রতি উত্তরে বলে ,–আমি তো তোমার বাবা নই!
সেদিন বুঝেছিলাম অন্যের মধ্যে বাবাকে খুঁজতে চাওয়া ভুল ছিল,বাবারা হয়তো মেয়েদের মনের ভাষা বোঝে, না চাইতে ও যেখানে পাওয়া যায়।
বাবার অফিস থেকে ফেরার তেমন নির্দিষ্ট কোনো টাইম ছিল না,আর মার্চ মাস হলে তো কোনো কথা নেই, হিসেব নিকেশ নাকি এই মাসেই সব চুকিয়ে ফেলতে হয়। এপ্রিল থেকে আবার নুতন বছরের হিসাব শুরু হয়। বাবা তো ওনার অফিসে হিসাব রক্ষক ছিলেন তাই ওনার দায়িত্বটা একটু বেশিই ছিল, এই ব্যাপারে।
উনিও ফেরেন প্রায় রাত করেই। সারাদিন অপেক্ষার পর,মনে হয় কখন বাড়ির মানুষ বাড়ি ফিরবে।
সোফায় শুয়ে ছোট ছেলেটা দরজার দিকে মুখ করে,করুন দৃষ্টিতে অপেক্ষা করতে থাকে,তার সবচেয়ে পছন্দের পাপা কখন ফিরবে। সন্ধে সাতটা,
কলিং বেলটা বেজে উঠলো,সঙ্গে সঙ্গেই ছোট জনের মুখটা খুশিতে ভরে উঠলো,বলল – মাম্ পাপা। দরজা খুলে বলে উঠলাম, নারে বাবা ইস্তিরি
ওয়ালা। ছেলের মুখটা আবার ম্লান হয়ে গেলো।
কিন্তু কি করবি বাবা, তোর বাবা যে বড়ো চাকরি করেন, অনেক দায়িত্ব, অনেক কাজ করতে হয়, মন্ত্রীদের অভ্যর্থনাও করতে হয়। তাই তো তাড়াতাড়ি ফিরতে পারে না । বাড়ী ফিরতেই প্রতীক্ষার অবসান হলো। আমি বললাম, –এতো রাত করো,বাচ্চাটা দেখো তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে
–আরে!! এতো সকাল সকাল,আরো রাত হবে। এটা মার্চ মাস তুমি জানো না? জানি তো,তাতে তোমার কি? বৈজ্ঞানিক এর আবার মার্চ, এপ্রিল হয় নাকি? আমি জানতাম বাবার ই শুধু মার্চ মাস হয়।
–আরে!!বিভিন্ন প্রজেক্টে কতটা কাজ হলো,কতো মেটিরিয়াল দরকার সব কিছুর হিসাব এই মাসেই করে ফেলতে হয়।
হায়রে ভাগ্য! আমি ভাবতাম,বাবার ই বুঝি মার্চ মাস হয়, মানে যারা হিসেব রক্ষক তাদেরই বুঝি মার্চ মাস!!
ভালো লাগলো।
আশীর্বাদ করুন।আমার প্রণাম নেবেন।
বাহ্। সুন্দর লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ দাদা।
বাহ্ অসাধারণ। দারুণ লাগলো ।
ভালো লাগলো । ভালো থাকিস ।
সাবলীল গদ্য রচনা। সমাপ্তি তে ছোট গল্পের চমক। আরও লেখা পড়ার সুযোগ যেন পাই।
বেশ ভাল