কবিতাঃ একটি ভোরের কোলাজ – শুভ্রকান্তি মজুমদার

একটি ভোরের কোলাজ
শুভ্রকান্তি মজুমদার


নির্ঘুম জরদগব পাহাড়, মৌণ নদী
ক্লান্ত শঙ্খনাদ, ভোররাতে জেগে ওঠে।

দূর থেকে মন্দিরের ঘন্টাধ্বণি
আর আজানের শব্দ ভেসে আসে,
পায়রাডাঙার রসুল মিঞা তখন গোসল করে
রোজের মত হেঁটে রওয়ানা দেয় কাজে।

ব‍্যাঙ্কের পোষা কাকেরা আবার
নতুন করে ফিক্সড ডিপোজিটে
সুদ কমানোর ঘোষণা করে,
জানান দেয় সুখের দিন আগত প্রায় দুয়ারে।

এলাকার সবচেয়ে পুরোনো দুধ
ব‍্যবসায়ী, সবার হারাধন জেঠু
ঘুম থেকে উঠে মোড়ের উপর
তার স্টলে অধীর অপেক্ষায়।
কখন দুধের কোম্পানির ট্রাক
এসে দুধের প‍্যাকেট ভরা ভরা
ক্রেট গুলো তার স্টলে নামিয়ে যায়।

শহরের হাসপাতালে আর
নার্সিংহোমে জন্ম নেয়
ভবিষ্যতের নাগরিক, হয়ত বা
ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী, অথবা
নানা পেশার মানুষ থেকে শুরু
করে এমন কি হয়ত কোনো
তুখোড় বাদ‍্যযন্ত্রী।

ব‍্যান্ডেলের প্রদীপবাবু যার
একটি ছোট মুদীর দোকান,
এদিকে ছেলেটি পড়াশোনায়
ভালো, জয়েন্টের সিট পড়েছে
কোন্নগরের একটি স্কুলে।

এদিকে লকডাউনে ট্রেন বাস বন্ধ,
প্রাইভেট ক‍্যাবের ভাড়া অনেক, তাতে
পোষাবেনা বলে, তিনি ছেলেকে সাইকেলের
ক‍্যারিয়ারে বসিয়ে নিয়ে
কোন্নগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা
দেন বাকী সব ভুলে।

ঠিক সেই সময় পাড়ার বড়
ঠিকাদারের মেয়ে ঐন্দ্রিলা
ভবিষ্যতে কিশোরী
আমনকারের মত গায়িকা হবার
আশায় হারমোনিয়ামে তান ধরে।

ওপাড়ার মেয়েটি যাকে সবাই
জাঁহাবাজ মেয়ে বলে, সক্কাল
সক্কাল কুয়াশা ভেজা ভোরে
পায়ে কেডস গলিয়ে বড় রাস্তার
ধার দিয়ে একমনে দৌড়াতে
থাকে পোষাকী নাম তার রত্না জানা।
দুই চোখে তার স্বপ্ন,
পরের এশিয়াড থেকে সোনা জয় করে আনা।

পাশের পাড়ার এক কাজ হারানো
অক্ষম প্রৌঢ়ের কালো অরক্ষণীয়া মেয়ে হাজার
চেষ্টা সত্বেও বিয়ে না হওয়ায়,নাইলনের দড়ি
জোগাড় করে গলায় ফাঁস দিয়ে ,

              ঝু


              লে 


               প


               ড়ে 

ঠিক সেই ক্ষণের একটু পরে,
সেই একই ভোরে।

2 thoughts on “কবিতাঃ একটি ভোরের কোলাজ – শুভ্রকান্তি মজুমদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *