অণুগল্প এবং চিত্রাঙ্কনঃ সুপ্ত শৈশব – রূপালী রায়

সুপ্ত শৈশব
রূপালী রায়

বছর বারো র ছোট্ট সেই মেয়েটি । ছোটো ছোটো দুটি চোখে হয়তো অনেক স্বপ্ন ছিলো তার । অভাবের তাড়নায় স্বপ্ন যখন ঝাপসা হয়ে আসে তখন ওদের মতো ছোট্ট শিশুগুলির স্থান হয় কঠিন কংক্রিটের রাস্তায় বা রোদ ঝলসানো কোনো মাঠের ক্ষেতের সীমিত গন্ডিতে । তাই গ্রামের ছোট্ট কুঁড়েঘর থেকে তারও ঠিকানা হয়েছিলো অন্যত্র । ‘ জামলো মডকম ‘ নাম তার , ছোট্ট ছোট্ট নিপুণ হাতে সে অনায়াসে ঝুড়ি ভরে তুলে নিতো চিকন সবুজ কাঁচালঙ্কা । হ্যাঁ … তেলেঙ্গনার পেরুরে লংকার ক্ষেতে কাজ পেয়েছিলো সে । সংসারের গুরুদায়িত্ব ওই ছোট্ট কাঁধে নিতে পেরে সে নিশ্চই খুব গর্ববোধ করতো !!
এইভাবেই ক্ষুধা দারিদ্রের ভারী পর্দার আড়ালে ঘুমিয়ে থাকে তার শৈশব । দিন কেটে যায় ….
তারপর হঠাৎই একদিন নেমে আসে এক গভীর কালো ছায়া । সে শুনতে পায় পৃথিবীর নাকি মস্ত অসুখ , সারাটা পৃথিবীর দুষ্টু মানুষগুলোকে তালাবন্ধ করে রাখতে হবে তবেই সারবে পৃথিবীর অসুখ । কাজ বন্ধ , ক্ষেতের লঙ্কা ক্ষেতেই থাকবে , তার নাকি এখন দীর্ঘ ছুটি । সে ফিরে যাবে তার গ্রামের ওই ছোট্ট ঘরে । সবকিছু ভুলে তার মনে তখন একটা কথাই যেন হাজার মৌমাছি হয়ে গুনগুন করে ” ঘরকে চলো ” !!
কিন্তু গাড়ি যে চলছে না কেমন করে ঘরে ফিরবে সে ?
ঘরে ফেরার খুশিতে জামলো মডকম তো তখন যেন ডানা মেলা প্রজাপতি তাই হাল্কা ফুরফুরে প্রজাপতির মতো মন নিয়ে সে হাঁটতে শুরু করে । ছোট্ট ছোট্ট পায়ে একদিন দুইদিন তিনদিন , অভুক্ত ক্লান্ত শ্রান্ত সেই ছোট্ট মেয়েটি শেষরক্ষা আর করতে পারেনি। এতোটা পথ হেঁটে গ্রামের সেই ছোট্ট কুঁড়েঘরের অনতিদূরে পথেই লুটিয়ে পড়ে তার প্রাণহীন দেহ । …. তাকে তো দেখিনি তাই তাকে নিয়ে লেখা এই চিঠি …..
” এই মেয়ে তোর নাম কি ? … বাব্বা ছোট্ট একরত্তি মেয়ে তার নামের কি বাহার ‘ জামলো মডকম ‘ !!
তা বেশ তোর ঘর কোথায় ? শুনেছি তুই নাকি খেলার স্বপ্ন দেখিস ? স্বপ্ন দেখিস রঙিন ফিতে নতুন জুতো আর নতুন জামার ! আয় তোকে আজ নতুন জুতো নতুন জামায় সাজাবো , একজোড়া নতুন ফিতে তোর চুলে বেঁধে দি । দ্যাখ তোর জন্য পাখি এনেছি , রোজ রাস্তায় এদিক ওদিক থেকে খাবার খুঁটে খায় ওরা , আজ ওরা তোর সাথে খেলবে বলে এসেছে । কিন্তু কি যে হোলো তোর ঘরটা আঁকতে পারলাম না । তোকে সাঁজিয়ে যেই ঘর আঁকতে গেলাম অমনি পাতাটা পুড়ে গেলো । তোকে ঘর এঁকে দিতে পারলামনা …. ও মেয়ে আমাকে ক্ষমা করিস ….. ।

4 thoughts on “অণুগল্প এবং চিত্রাঙ্কনঃ সুপ্ত শৈশব – রূপালী রায়

  1. অপূর্ব হয়েছে ছবি ও গল্প।

  2. ছবি ও গল্প খুব সুন্দর কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেল!!

Leave a Reply to Krittika Bhaumik Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *