ছোটগল্পঃ স্বপ্ন – জাহ্নবী জাইমা (ঢাকা, বাংলাদেশ)

স্বপ্ন
জাহ্নবী জাইমা

হেনার সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে সুলতান সাহেব বিরবির করে বলে, হাসনাহেনার মাতাল গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে
উঠছে, এমনি এক গন্ধভরা মাতাল দিনে তোমাকে পেয়েছিলাম। তোমার স্বপ্নের বাগান ভরে উঠেছে শত
শ্রমিকের পদচারণায়। যদি তুমি পাশে থাকতে তা হলে হয়তো সুখ সংজ্ঞার রূপ হতো জীবন জলের মতো স্বচ্ছ।
আজ হৃদয় বলে বার বার, তুমি আছো আমার পাশে ছায়া মতো ভালোবাসা হয়ে। আনন্দে, চোখ টলোমল তাতে ছিলো
না বেদনার জল। আমাদের ছেলে শিক্ষা শেষ করে আগামী সপ্তাহে আসছে, ওকে দোয়া কর। তোমার আদর্শ ও
যেন কর্মে প্রতিফলন ঘটাতে পারে। আনন্দ বেদনার কুয়াশা সকলের অজান্তে বয়ে যায়।
হেনা স্ট্রেট এখন আনন্দে মুখরিত। স্ট্রেটের ছোট মালিক রাফার আগমনী বার্তায়। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির
সাথে মিশে আছে অসংখ্য শ্রমিকের শ্রম ঘাম, তবুও সাপ্তাহিক ছুটিতে কৃষ্ণকলিরা আনন্দে নেচে উঠে । যদি
ভাগ্যদেবী ভাগ্যের চাকা একটু উৎসব আনন্দে মাতে, তবে নিজ ভাগ্য হবে না বেসাতী।
সদ্য যৌবনা ময়নার মেয়ে মায়া, যেমন দেখতে তেমনি নাচে। মায়ার কন্ঠের মদিরতা শুধু মালিনিপুর নয় পুরো
সিলেটের পাহাড়ী জনোগোষ্ঠী মায়াকে একনামে চেনে। পাহাড়ী মেয়ে মায়া, গহীন অরণ্যে হরিণী যেন চঞ্চল ঝর্ণা
মায়াবী প্রকৃতির অপ্সরা। প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে বড় হয় মায়াবী মায়া। দারিদ্যতার কঠিন শিকল ভাঙ্গার
প্রত্যয় নিয়ে।
চা বাগানের রাস্তা বড়ই শুনশান, দূর হতে পায়ের তরঙ্গ ধ্বনি ভেসে আসে, মনটা অস্থির হয়ে উঠে। শ্রমিকরা
সাপ্তাহিক ছুটিতে মণিপুরি নাচে গানে হৃদয়কে রাঙিয়ে তোলে উৎসবের সাতরঙে। এলোমেলো ভাবনা নিয়ে একা চা
বাগানের পথ ধরে হেঁটে চলে সুলতান চৌধুরী। আজ বার বার কেন মনে পড়ছে তোমার কথা। আমার হাতে গড়া
বাগান, এই বাগানেই প্রথম হেনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে ছিলো। শিক্ষা সফরে রংপুর হতে সিলেট তার পর এই
বাগান। চা বাগানের নারী শ্রমিকের জীবন চিত্র দেখা এবং কমের্র সঠিক মূল্যায়ন হয় কিনা এই ছিলো তাদের
মূল লক্ষ্য। চা বাগানের সেই ছাতিম গাছ, হ্যাঁ এখানেই প্রথম তোমার সঙ্গে পরিচয়। তোমার সেই হাসির
ফোয়ারা এখনো এই বাগানের বাতাসে ধ্বনিত হয়। তুমি ভালো আছ তো? শুনশান বাতাসে হঠাৎ তরঙ্গে ঢেউ খেলে
যায়, মায়ার কথা কানে এলে দিবাস্বপ্নের ঘোর কাটে। ‘চাচা মি তড়াং আওরী গহে’ চাচা চাচা, ওচাচা আমরা
আপনার কাছে যাচ্ছিলাম। কেন মা পরী?
চাচা সবার কাছে পরী কিন্তু আপনার কাছে আমি সেই ছোট্ট মায়া। বাবাকে হারিয়ে আপনাকে পেয়েছি, তাই
আপনার মুখে সারাজীবন মায়া ডাক শুনতে চাই। আপনার কাছে একটা আরজি নিয়ে এসেছি। আগামি সপ্তাহের ছুটি
একদিন বেশি চাই, আপনি না করবেন না। আমরা সকলে আনন্দ করতে চাই, সকলের ছুটি যদি মঞ্জুর করেন
তবে।
মায়া তোর জন্য সব মঞ্জুর করতে পারি। এই ছুটির আনন্দ তোমাদের জীবনে নতুন আনন্দ বয়ে নিয়ে আসুক মা।
মাঝে কোথায় যেন বেদনার ছোঁয়ায় ভাবনার মাঝে চির ধরে।

মায়ার চঞ্চলতা অদম্য ইচ্ছা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। বড় হচ্ছে আর মাথায় ভূত চেপে বসেছে, এখন শুনছি
সে নাকি কি সব করে বেড়াচ্ছে। চা বাগানের সব শ্রমিকদের একত্র করে কি সব বোঝাচ্ছে। কেন জানি ওকে
কোন কিছু নিষেধ করতে পারি না। তাই ভাবলাম যা ইচ্ছে তাই করুক তেমন মন্দ তো কিছু করছে না। অল্প কিছু
দিনের মধ্যেই মায়া একটা সমিতি দাঁড় করে। সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকে। এখন নাকি শ্রমিকদের উন্নয়নে
সুদ বিহীন ঋণ দিচ্ছে। এর মধ্যে অনেকেরই ঘর সংসারে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পাশা পাশি সে একটা ছোট স্কুল
খুলেছে, যেখানে শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া করে। পুরো চা বাগান উৎসব মুখোর হয়ে উঠে উন্নয়নের
ছোঁয়ায়। মায়ার অদম্য ইচ্ছা দৃঢ় প্রত্যয় আমাকে মুগ্ধ করে। প্রতিদিন তিন মাইল পথ হেঁটে গিয়ে… স্কুলে যায়
আবার ফিরে আসে এই দুর্গম পাহাড়ী রাস্তায় এভাবেই সে স্কুল পাস করে। এখন কলেজে পড়ে। লেখাপড়ার
পাশাপাশি সে তার নিজ স্কুলে মাস্টারি করে। ওর এই অক্লান্ত পরিশ্রম আমাকে কষ্ট দেয়। মায়ার মায়ায় আমি
সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকি। নিন্তু মায়া থেমে নেই। তার সমিতি বেশ বড় হয়েছে। তার চিন্তা ভাবনা এখন
একটি ছোট হাসপাতাল তৈরি করা, কারণ অসুখ বিসুখে শ্রমিকদের ভোগান্তির শেষ নেই, ডাক্তার দেখাতে হলে
তাদেরকে তিন মাইল পথ হেঁটে যেতে হয়। তাছাড়া প্রসব কালীন এই সমস্যা আরো প্রখর হয়ে উঠে। তাই সে
নিজে ডাক্টারি পড়তে চায়। তার সমিতির সকল সদস্যদের একই ইচ্ছা। সমিতির সকলেই সম্মিলিতভাবে তাকে
আর্থিকভাবে সহায়তা করবে। এইচএসসি পাস করে মায়া রংপুর চলে যায় এবং রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি
হয় এবং নিয়মিত লেখা পড়া করে ভালো রেজাল্ট করতে থাকে। চূড়ান্ত পরীক্ষায় সে সর্বোচ্চ স্থান পাওয়ায়
মায়াকে কানাডায় লেখাপড়া করা জন্য স্কলারশিপ দেয়। সত্যিই মায়ার জীবন এতো সুন্দর হবে ভাবতেও পারি
নাই। এর পর থেকে শুধু এগিয়ে চলছে কিন্তু মায়ার সমস্ত সত্তাজুড়ে মিশে আছে এই চা বাগান। এই চা বাগানের
শ্রমিকদের নিয়ে, ওর এই অমানুষিক পরিশ্রমের মুক্তি এখনো মিলেনি। উচ্চতর ডিগ্রির পাশাপাশি ওদেশে
একটা চাকরি জোগার করে নিয়েছে। প্রতিমাসের মোটা অংকের বেতন পাঠিয়ে দেয় তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন
করতে। এই গহীন অরণ্য ঘেরা চা বাগানে এখন ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। মায়ার
এই মহৎ কাজ বাস্তবায়নের স্বার্থে মায়াকে একবিঘে জমি দিয়েছি। প্রায়ই স্বপ্ন দেখি মায়া এই হাসপাতালে
ডাক্তার হয়ে এসেছে আর আমি শখ করেই সেই হাসপাতালে রোগি হয়ে যাই। মায়ার হাতের স্পর্শ পেতে, কি ভীষণ
মমতায় ভরা মায়ার স্পর্শ। যখন ওর কোমল হাত আমার মাথায় বুলিয়ে দেয় আমি স্বর্গের সুখ অনুভব করি।
জানো হেনা মায়ার জন্য গর্বে বুক ভরে উঠে, সে যে আমার মেয়ে, তুমি কী করে বুঝবে? আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে
গেলে। ওদের ঘিরেই তো আমার বেঁচে থাকা।
বয়সের ভার কিছুটা বেশি মনে হওয়ায় সুলতান সাহেব একমাত্র ছেলে রাফাকে, হেনা স্ট্রেটের দায়িত্ব দেন।
রাফা বাবা-মায়ের আর্দশ অক্ষুণœ রেখে দায়িত্ব পালন করার প্রত্যয়ে তা গ্রহণ করে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে মন চলে যায় মায়াবী মায়ার কাছে, রাফা কিছুতেই মায়াকে ভুলতে পারে না। মায়া স্বপ্নের
সাথে নিজেকে জরিয়ে ফেলে। রাফা এখন মায়ার স্কুলে মাস্টারি করে, এই স্কুলের মাঝে রাফা খুঁজে পায় মায়ার
অস্তিত্ব। মায়া যেন তার সমস্ত অতিস্ত জুড়ে আছে। কি এমন হয়ে গেল রাফার মায়াকে ছাড়া যেন তার জীবন
অর্থহীন। অসম্পূর্ণ তার পুরুষ জন্ম। ইদানিং রাফার বিষণœ মনের ছায়া পড়েছে তার চোখে মুখে। খুব সহজেই
বোঝা যায় তার সাদাকালো জীবন, যেন জীবনের রঙ মুছে গেছে।
রাফার বন্ধু শ্রাবণ লম্বা ছুটি সঙ্গে বউ-বাচ্চা নিয়ে দেশে এসেছে। শ্রাবণের বউ চা বাগান দেখতে চায় আর
শ্রাবণ রাফাকে। ব্যাটে বলে ছক্কা, গাড়ি হাকিয়ে সোজা সিলেট মালিনীপুর। অনেক দিন পর দুই বন্ধুর দেখা।
বন্ধুত্বের জোয়ার যতটা জলচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার কথা ঠিক ততটা হলো না। যেন অমাবস্যা লেগে আছে রাফার
আকাশ জুড়ে। শ্রাবণের কৌতুহল বেড়ে যায় তাই বউ-বাচ্চা বাংলয় রেখে রাফাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে পাহাড়ী

নির্জনতায়। কিরে রাফা এ তোর কী হাল হয়েছে? অভাব তো তোর জীবনকে স্পর্শ করে পারে না। কি নেই তোর
জীবন চলার মতো একজন মানুষের আর কী চাই। তবুও তোর এই অভাব অসম্পূর্ণতা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।
জীবনকে উপভোগ কর। আমাকে বল কি হয়েছে তোর?
বাদ দে সে সব কথা, অর্থ, বিত্ত আর ভোগবিলাস দিয়ে জীবন চলে না। জীবনের দর্শন আজ আমার কাছে ভিন্ন!
তুই কি জানিস ট্রয় নগরী কেন ধ্বংস হয়েছিলো, কেন শাজাহান তাজমহল গড়েছিলো, সেক্সপিয়ার কেন
লিখেছিলেন রোমিও জুলিয়েট?
ও বুঝেছি! তুই তাহলে দাড়ি ছাড়া আধুনিক দেবদাস! বল না সেই পার্বতীর কথা। শ্রাবণ এতো উতোলা হওয়ার
কিছু নেই। মানুষ উদ্দেশ্যহীনভাবে বেঁচে থাকে যখন তার জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলে। সকল প্রাপ্তিই সুখের
স্বাদ নষ্ট করে দেয় তবুও প্রাপ্তির আকাঙ্খা কমে না। চল রাতে আরো কথা হবে, ভাবী হয়তো তোকে মিস
করছে। ওরা বাংলোয় ফিরে এলো।
শ্রাবণের আগমনে পাহাড়ী রীতি অনুযায়ী বিকাল থেকেই সেজে উঠে, আয়োজন করে মনিপুরী নৃত্যের। সন্ধ্যা
হতেই শুরু হলো নাচ গান আনন্দে ভাসছে চারিদিক আর দুঃখ বেদনায় ডুবে আছে রাফাত যেন তার কাছে এই
সুন্দর পৃথিবীর এতো সব আয়োজন সব কিছুই অর্থহীন। কিরে কি হলো তোর? না কিছু না। এমনি এক সন্ধ্যায়
জমকালো আয়োজনে দেখা হয়েছিলো আমার পার্বতীর সাথে। যেন স্বর্গলোক থেকে কোন এক অপ্সরা এসে
মনিপুরী নাচ নাচছে। তাই নাকি, তবে তোর অপ্সরীরূপী পার্বতীর নাম কি? মায়া যে একবার মায়ার নাচ দেখেছে
তার কাছে পৃথিবীর সব সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়। আজ সাত বছর তারই অপেক্ষায় আছি। তার স্বপ্নকে সার্থক
করে তুলতে আমি হয়েছি তার স্বপ্নকারীগর। জানিস মায়া অনেক পরিশ্রম করে। তার সেই পরিশ্রমের টাকায়
গড়ে উঠেছে এই ছোট বিদ্যালয়, ছোট হাসপাতাল। মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয় কথা হয় এই সব বিষয়ে এর বাইরে
কোন কথা হয় না। মনে হয় মায়া মন ছাড়া মানুষ কথাবার্তায় তার মনের মধ্যে আমার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাই
না। কিন্তু আমার সমস্ত মন জুড়ে আছে মায়া।
ভুল করেছিস তোর মনের কথা মায়াকে বল, তা না হলে একদিন পস্তাতে হবে। আমিও বলতে চাই কিন্তু ওর
সঙ্গে যখন কথা বলি তখন সব কিছু ভুলে যাই। কত বার বলবো বলে মনে করেছি শেষ পর্যন্ত ভুলেই গেছি। কি
যে আছে ওর মধ্যে কিছুই বুঝতে পারি না। ও আমার রহস্য মানবী। শুন আধুনিক দেবদাস, পার্বতীর রহস্য খুব
দ্রুত উদ্ধার করতে হবে। আগামী সপ্তাহে আমি চলে যাচ্ছি। তোমার পার্বতীর ঠিকানা দিয়ে দিও আমি তার
সাথে দেখা করে তোমার সব কথা বলবো। তার আর প্রয়োজন হবে না শ্রাবণ। সামনে মাসে সে আসছে। তার পর
হয়তো একটা কিছু হয়ে যাবে। মৃত্যু সকল জীবের জন্য অনিবার্য প্রাপ্তি তাই মৃত্যুকে কেউ আশা করে না। শুধু
বাঁচতে চায়, আমিও তার কাছে বাঁচতে চাইবো। প্রতিটি প্রহর প্রতিটি ক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে আজ প্রায়
সাত বছর কেটে যাচ্ছে এই দুর্বিসহ দাবানলে পুড়ছে বুকের ভিতর। আর তো মাত্র একটা মাস। পুড়তে পুড়তেই
কেটে যাবে। সকালে শ্রাবণ বউ বাচ্চা নিয়ে হাসি মুখে চলে গেলো আর আমি পুরাতন চেনা অপেক্ষায় স্থীর হয়ে
চেয়ে থাকি, ওদের চলে যাওয়ার পথে। এভাবেই চলে এলো সেই প্রতিক্ষায় সময় আজ আসছে মায়া।
শাহ্ জালাল বিমান বন্দর থেকে সিলেটের পথে রওনা হয় তার পর পাহাড়ী পথে কিডনাপ হয় মায়া। তিন দিন পর জানতে পারি টিভির সংবাদ
মাধ্যমে। তবে আমার প্রতিক্ষার কি কোন দিন শেষ হবে না? কেন এতো অপেক্ষা? সে যদি হারিয়ে যায়, যাক না।
অনেক দিয়েছে আমায় তার স্কুলের কতগুলো সন্তান, বৃদ্ধ বয়সে সেবা শুশ্রƒষার জন্য দিয়েছে হাসপাতাল। আর
কি চাই আমার। শুধু বাকি থাকলো এই প্রশ্নের উত্তর।

4 thoughts on “ছোটগল্পঃ স্বপ্ন – জাহ্নবী জাইমা (ঢাকা, বাংলাদেশ)

  1. গল্পটি ভালই। বেশ কিছু বানান ভুল চোখে পড়ল। সম্পাদককে অনুরোধ করব এ বিষয়টায় নজর দিতে।

      1. গল্পটিতে কথার জাগলারি আছে।কিন্তু পরিনতি নেই।

  2. গল্পটা ভালো লাগলো। তবে মায়ার রহস্যময়তা থেকেই গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *