কবিতাঃ মেঘনা মেয়ের গান – অনিরুদ্ধ সুব্রত

মেঘনা মেয়ের গান
অনিরুদ্ধ সুব্রত

বুকে সাঁকো ধরে রেখে, মানুষের চলাচল দেখে দেখে
আর সমস্ত দিন তরণী পারাপারে তার সুখ, লেখা ছিল এমনই করে
যেন না-বলা দিয়েও কিছু অভ্যেসে প্রচলিত সুরে সুরে গাওয়া গানে
সে যে নদী ছিল,গভীর নাব্যতা ছিল, স্রোত দিয়ে ঢেউ-এ চড়ে
কখনও তেমন করে আপন ধ্যানের মন্ত্রে জেগে, ভাবেনি ভাসাতে জানে
নদীকে প্রয়োজন করে ঘাট আর ঘাটে ঘাটে বাজার বসানো জন,জনপদ
যেন সে-ই তার ঈশ্বরীভূত পরিণাম, মানুষের কোলাহল-ই উৎসর্গের গান।
এতোদিনে আটপৌরে নদীটার বুকে চুপ চাপ সূর্যাস্তের নিথরতায় প্রত্যহ
এতো যে সহজে নামত রাত, স্বচ্ছ জল হতো ধীর লয়ে কালোর পাথার
পৃথিবীর দিকে একটুখানি খুলে রাখা কপাট সে স্বেচ্ছায় দিত বন্ধ করে
অর্ধেক জীবনের অলিন্দে পলি বালি আর বর্ণান্ধ জলে খেলা তারপর
সময়ের,মানুষের,দরকারের ছায়ায় মেঘনার গায়ে জ্যোছ্না নৃত্যের সংসার ।
একদিন আশ্চর্য আঘাতে ছিঁড়ে যায় যদি এমনই সূচি ছিদ্র মধ্যাহ্ন আকাশ
মাটির অন্তরে অন্তরে সর্পিল নদী যদি ভেঙে ফেলে ব্রত হঠাৎ, মৌনতার
ধ্বনির ছোটো ছোটো আঘাতের যোগে ওঠে কোনও বৃহতের নাদ,উন্মত্ততার
চির নিঃশব্দের কাছ থেকে বাধ্য প্রতিশ্রুতি ভেঙে,যায় যদি স্রোতিস্বিনী হয়ে
একদিন যদি নিজেরই ভাষার বুকে ভেসে উঠে তরঙ্গ সমূহ টানে অবাধ্য হয় ?
না, মেঘনা মেয়ের গান তেমন নয়, বড় ব্যথাতুর, নিদারুণ বেদনাময়
পৃথিবীর, মানুষের, জীবনের, সময়ের, প্রয়োজনের পায়ে পায়ে সে ফুল দেয়
ঈশ্বরীভূত পরিণামে হেসে চোখ মোছে, সূর্যালোকে খুলে দেয় উত্তর জানলা
হেমন্তের শিশির ছুঁতে একা একা সন্ধ্যায় অনন্তের উঠোনে নামে,শূন্যে তাকায়
নদীর শরীর নিয়ে মেঘনা মেয়ে টের পায় শান্ত বাতাসে একটি সাঁতার বয়ে যায় যেন।

3 thoughts on “কবিতাঃ মেঘনা মেয়ের গান – অনিরুদ্ধ সুব্রত

  1. প্রকৃতির লাবণ্য ছোঁয়া কবিতায় পেল এক অপরূপ কায়া। ভালো লাগল।

Leave a Reply to Gautam Sen Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *