শ্রীমদ্ ভগবত গীতা ও শ্রীমদ্ ভাগবত
ভূমিকা গোস্বামী
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হল– গুরু শিষ্য সংবাদ। অর্জুনের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ।জগতের গুরু শ্রীকৃষ্ণ। এখানে তিনি নিজের কথা নিজে বলেছেন। তাই তাঁর সব কথা বলা সম্ভব হয় নি। তিনি নিজের মুখে নিজে কত সুন্দর। কত মধুর। কত যে তাঁর প্রেমের আস্বাদন এসব তিনি নিজে বলতে পারেন না। নিজের কথা নিজে বললে সেটা রসাবহ হয়ও না ।
গীতার দৃষ্টি তত্বের দিকে । তত্বকে গ্রহণ করে যুক্তি। তাই গীতা যুক্তি প্রধান। গীতার চরম পরম তত্ব পুরুষোত্তম। এই তত্বটি গীতা খুব সুন্দর করে বলেছেন।
শ্রীমদ্ভাগবত ও গুরু শিষ্য সংবাদ। এখানে বক্তা গুরু – ভক্তশিরোমণি শ্রী শুকদেব। শিষ্য রাজা পরীক্ষিত। শ্রী শুকদেব ভক্ত। তাই তিনি শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত মাধুর্যের কথা অত্যন্ত সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন। ভগবদ্ভক্তি – ভক্তের সম্পদ, ভগবানের নয়, ভক্তের হৃদয়ে থাকে। বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের ভক্তি-সন্তানের হৃদয়ে থাকে। পতিপ্রেম পত্নীর হৃদয়ের বস্তু। তেমনি ভগবানে ভক্তি– ভক্তের হৃদয়ের ধন। তাইতো ভক্তিপ্রেমের কথা ভক্তের মুখ থেকে শুনতে অতি মধুর লাগে।
গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ে ভক্তের লক্ষণ , সাধকের লক্ষণ বলা হয়েছে। সেটা আমরা ভাগবতে প্রহ্লাদের চরিত্রে দেখি। আবার গীতার “সর্বধর্ম্মান্ পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ” এই সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্রটি ভাগবতের রাসলীলায় গোপীদের অভিসারে জীবন্ত হতে দেখি। ভাগবতের দৃষ্টি রসের দিকে। রসকে গ্রহণ করে চিত্তের ভাব। তাই ভাগবত ভাব প্রধান।
তত্ব ও রস দুটি কথাকে একটু আলোচনা করি।
রসগোল্লা একটি অত্যন্ত সুখাদ্য বস্তু। এরমধ্যে কি কি উপাদান আছে, কিভাবে এটা তৈরী হয়। এসব আলোচনা হল – রসগোল্লার তত্ব আলোচনা।
আর রসনার সাথে রসগোল্লার মিলনে যে অনির্বচনীয় সুখানুভূতি হয় তার স্বরূপ ও বৈচিত্রের আলোচনা কে বলা যেতে পারে রসালোচনা।
পরমতম ব্রহ্ম বস্তুর তত্ব আলোচনায় উপনিষদ, ব্রহ্মসূত্র, গীতা, ভাগবত একই পথের পথিক। কিন্তু রসের বিন্যাসে, বিস্তারে ও আস্বাদনে শ্রীভাগবত সব শাস্ত্রের শিরোমনি।
তাই তো আচার্য যাঁরা তাঁদের কথা অনুযায়ী উপনিষদকে বলা হয় শ্রুতি -প্রস্থান। ব্রহ্মসূত্রকে বলা হয় ন্যায় -প্রস্থান। গীতাকে বলা হয় স্মৃতি – প্রস্থান। এই দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রীমদ্ভাগবতের পরিচয় হতে পারে– রস-প্রস্থান।
শ্রুতিতে “রসো বৈ সঃ” মন্ত্রে যাঁর স্বরূপের সন্ধান। মধুব্রহ্ম , আনন্দব্রহ্ম নামে যাঁর পরিচয় , ভাগবত তাঁরই নিরূপণে রসলীলার কথা বলেছেন। শ্রীকৃষ্ণ লীলার মধ্যে ঐ রস, ঐ মধু, ঐ আনন্দ আস্বাদিত হয়েছে।
খুব সুন্দর
খুব ভালো লাগলো। এভাবে ভাবতে পারছি এখন এই লেখা পড়ে।