বড়বাবু
দেবাশীস রায়
ব্যাঙ্কের ক্যাশ ভ্যান আজ অফিসের কাজে ছুটছে না। একটা বিশেষ মিশনে আমরা কয়েকজন চলেছি। অরোরাদাকে আমরা ভালোবেসে বড়বাবু বলি। আমাদের ব্যাঙ্কে ওনামের কোন পদ নেই। স্রেফ ভালোবাসার ডাক। বড়বাবু গম্ভীর মুখে সামনে ড্রাইভার পান্ডেদার পাশে। গম্ভীর হওয়ার কারন আছে। মাহাতোদা প্রায় দুমাস বাড়ী থেকে বেরিয়ে অফিস আসছে না। কোথাও মদের ঠেকের খোজ পেয়েছে। দিন কাটছে সেখানে।
গতকাল পান্ডেদা ঠেকের খোঁজ নিয়ে এলো। সেই মত আবগারী দপ্তরের লোক সেজে আজকের আমাদের অভিযান। আসল অস্ত্র এই ছাই রংয়ের ক্যাশ ভ্যান। সামনে লেখা ভারত সরকারের একটি উপক্রম।
ঠিক চিনিস তো জায়গাটা? বড়বাবু পান্ডেদাকে জিজ্ঞেস করেছে।
এই এসে গেছি অরোরাদা। আর একটু।
এ তো একদম ধানখেত যে…..
কৃষ্ণদা আমাদের সাথে পেছনে….তা কি বাংলা মালের ঠেক শপিং মলে হবে বড়বাবু?
অরোরাদা কিছু বলবার আগেই দেখতে পেলাম খানিকটা দূরের বাঁশঝাড়ের পেছন থেকে একঝাঁক লোক ছিটকে বেরিয়ে যে যার মত যেদিকে পারছে ছুটছে. অরোরাদা উত্তেজনায় বলছে…পান্ডে, জোরে চালা। সব পালাচ্ছে।
গাড়ীটা থামতেই আমরা যারা কমবয়স্ক, ছুটতে পারি…..তেড়ে দৌঁড়েছি ওদের পেছন পেছন। সবাই পালিয়ে গেলেও একজনকে ধরে ফেললাম। মাঠে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিল। কমল তার কলার ধরে টানতে টানতে অরোরাদার সামনে নিয়ে এল।
স্যার, বিশ্বাস করুন। আমি মাল খাই নি…….
অরোরাদা কোমরে হাত দিয়ে গম্ভীর মুখে দাঁডিয়ে আছে….তাহলে দৌঁড়োচ্ছিলি কেন?
স্যার, সবাই দৌঁড়োচ্ছিল বলে ভয় পেয়ে আমিও দৌঁড়োচ্ছিলাম।
হুমমমমমম। অশোক মাহাতো কোথায়?
আমি চিনি না স্যার। এ গ্রামের কাউকেই আমি চিনি না।
…. বুঝলাম। কিন্তু এখানে কেন তুই?
স্যার আমি এ গেরামের জামাই। শ্বশুর বাড়ি এয়েচি। কাউকে তেমন চিনি না স্যার। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেম। সবাই দৌঁড়োচ্ছে দেকে আমিও দৌঁড়োলেম স্যার….আরও অনেক কথা বলবার তার ইচ্ছে ছিল।
আচমকা কমল পেছন থেকে বলে উঠলো…..স্যার এ এমনি কিছু বলবে না। গুলি করে দেবো ?
আর যায় কোথায়। লোকটা সটান বড়বাবুর পা জড়িয়ে ধরেছে…..স্যার, গুলি করবেন না স্যার। দুটো ছোট বাচ্ছা আছে….বউটাও পোয়াতি। সব ভেসে যাবে স্যার। উমাআআগো….ডাক দিয়ে কাঁদতে লাগলো লোকটা…
অরোরাদা টেনে ওঠালো লোকটাকে…বেশ বল তবে..অশোক মাহাতো কোথায় ?
এরপরে যা যা হওয়ার তাই হোল। মাহাতোদাকে খুঁজে পাওয়া গেলো। বদ্ধ মাতাল অবস্থায়। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হল ইত্যাদি ইত্যাদি।
সব ঝামেলা মিটে যাওয়ার পরে আমি আস্তে করে অরোরাদাকে ধরলাম……কমল যখন বললো স্যার গুলি করে দেবো, তুমি হাসি চাপলে কিভাবে?
অরোরাদা গম্ভীর মুখে বললো…..মাহাতোদার বউ এর মুখটা মনে করছিলাম রে। স্বামীর এই অবস্থায় বউদির মনের অবস্থাটা ভাবছিলাম।
এই না হলে বড়বাবু।
বাঃ
খুব ভালো লাগলো।
বেশ লাগলো গল্পটা। জামাই এর কি হাল!!😀