সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষায়
জাহ্নবী জাইমা
নৈরিতের আই ভি এফ এর ডিসিশনটা নিয়ে বলে, চলো না একবার ট্রাই করে দেখি। চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।
“বেশ” সায় দেয় প্রতিচী। তবে চান্স কিন্তু ৩০%। কাজ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, সেটা মাথায় রেখো।
প্রতিচীর কথায় একটু উম্মা প্রকাশ করে নৈরিত। ‘তোমার সব সময় নেগেটিভ অ্যাটিটিউড। ভেবো না, ওই ত্রিশ
জনের মধ্যে আমরাও তো পড়ে যেতে পারি। ’ তা অবশ্য ঠিক। কবে যাবে বলো। সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নৈরিত
আর তার স্ত্রী প্রতিচী কৃত্রিম পদ্ধতিতে সন্তানের আগমনের আকাক্ষায় মনটা তৈরি করে নিতে লাগল। একে
একে ধাপ গুলো এগোতে শুরু করল। প্রতিদিন ইন্সটিটিউটে যাওয়া ডাক্তারের কাছ থেকে স্লিপ নিয়ে ঘণ্টার পর
ঘণ্টা অপেক্ষা, একটা ঘরে আলট্রা সোনোগ্রাফি (ইউএসজি), অন্য একটি ঘরে ইঞ্জেকশন আর একটিতে
ব্লাড টেষ্ট, যার যখন যে ঘরে দরকার সেখান থেকে স্লিপের নাম্বার অথবা নাম ধরে ডাকা হয়। নৈরিত সঙ্গে
যায় বটে কিন্তু লবিতে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া অন্য কোন কাজ নেই ওর। অলস কাটে সারাদিন কিন্তু কিছু করার
নেই, কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। প্রতিচীর কিন্তু সময়টা মন্দ কাটে না। একে একে আলাপ হয়ে যায় সহ-
যাত্রীদের সঙ্গে। সবারই একই গন্তব্য। একটা শিশু চাই সুন্দর মুখ, নিষ্পাপ- নির্মল। আপনার ক’দিন হল?
পাশের চেয়ারে বসা এক মহিলা প্রশ্ন করল। এই দিন দশেক প্রতিচী উত্তর দিল। ও তাহলে এখনও পিক আপের
দেরি আছে। পিক আপ কি? ওই যে, আপনার ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হবে ওটাকে বলে। ও সেটা আবার কিভাবে করা
হয়? একদিন হাসপাতালে ভর্তি হতে বলবে। অজ্ঞান করে কি সব করবে তারপর বিকেলের দিকে বাড়িতে ছেড়ে
দেবে। প্রতিচীর মুখটা ভয়ে সিটিয়ে পাংশু হয়ে এলো। সে আবার কি? ব্যথা লাগবে না তো? ওপাশ থেকে আর
একটি মেয়ে বয়স ত্রিশ বত্রিশই হবে, প্রতিচীর মতই বলে উঠল আপনার বুঝি এই প্রথম? হ্যাঁ, আপনার।
আমার ২য় বার। কালকে আমার পিক আপ। ‘খুব কি ব্যথা লাগে ? না অজ্ঞান করে নেয় তো! প্রতিচী গল্প করতে
করতেই দেখতে পায় ওদিক থেকে তিন নম্বর চেয়ারে এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন যার বয়স হবে অন্তত পক্ষে
প্রতিচীর মায়ের মতো। বছর পঞ্চাশেক কিংবা তার ও বেশি, কৌতুহল হল প্রতিচীর। এত বয়সেও সন্তানের
চেষ্টা ? তাহলে মানুষ করবেন কবে ? ভাবছি আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেল। খবরের কাগজের সঙ্গে চায়ের
কাপ নিয়ে সকালের মখমলে সোনালি রোদ্দুর গায়ে মাখতে মাখতে প্রশ্ন করে নৈরিত। প্রতিচী আজ ক’দিন হল
তোমার পিরিয়ডের ? এই পাঁচদিন ক্যালেন্ডারে ডেটটা মার্ক করে রেখো ইঞ্জেকশনের তারিখটা যেন ভুল না হয়।
হ্যাঁ রেখেছি। ভুল হবে না। কোনও চিন্তা নেই তোমার। ‘পেপারটা গুটিয়ে নৈরিত বসতে বলে, সামনের চেয়ারে।
জানো প্রতিচী, আমি জোর করে এই আই ভি এফ এর ডিসিশনটা নিয়েছি ঠিকই কিন্তু তোমার কষ্ট দেখে এখন
পিছিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। এত গুলো ইঞ্জেকশন ফোটানো উফ! কক্ষণও না, এর আগেও তুমি ধৈর্য হারিয়েছো।
কত মহিলার এই একই প্রবলেম দেখছ না? প্রতিদিন অন্তত পঞ্চাশ ষাট জনকে দেখছি। এই একই প্রসেসের
মধ্যে দিয়ে সন্তানের চেষ্টা করছে। তারা যদি কষ্ট করতে পারে আমি পারব না কেন? প্রতিচী, তুমি বুঝতে
পারছ না প্রতিমাসে এই পনেরোটা দিন এক নাগাড়ে তোমাকে ইঞ্জেকশন নিতে দেখলে আমার যে কি অপরাধ
বোধ হয়, সে কি বলব। ‘ওসব ভেবো না তো। এসব দায় তো সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের ওপরেই চাপিয়েছেন। তাই
ভুগতেই হবে। পরে সাকসেস হলে আর এ কষ্টের কথা মনে থাকবে না। নৈরিত বলে, ‘তুমি এভাবে বললে আমি
একটু সাহস পাই। এই জানো, একজন মহিলাকে দেখছি মাঝে মাঝেই , ঠিক ওই তিন নম্বর চেয়ার টাতেই বসেন,
বয়স কত হবে বলতো? পঞ্চাশ পঞ্চান্ন। বলো কি? উনি নিশ্চয়ই মেয়ে বা ছেলের বউকে নিয়ে আসেন। না গো,
দুই একবার আমারও তাই মনে হয়েছিল কিন্ত এখনও সঠিক বুঝতে পারছি না। ঊনার নিজের জন্য না অন্য
কারুর জন্য। ইঞ্জেকশন নিতেও দেখেছি আমি ঊনাকে। ‘তাই নাকি? এই বয়সে কনসিভ করা যায় না কি? কি
জানি বুঝি না। ইউ এস জির ঘরে ঢুকল প্রতিচী। দরজা ঠেলে ঢুকতেই দেখল ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন ওই
বয়স্ক ভদ্রমহিলা। প্রতিচীর খুব ইচ্ছে করছিল কৌতুহল নিরসনের জন্য আজ জিজ্ঞেস করেই বসে, উনি কারো
সঙ্গেই বিশেষ কথা বলেন না তাই দ্বিধা হয়, সেধে কথা বলতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে থাকে
প্রতিচী। ডাঃ সাইনা ইউ এস জি এর রিপোর্টটা ভদ্রমহিলার হাতে দিয়ে বললেন, ‘এটা নিয়ে উপর তলার চার
নম্বর ঘরে চলে যান। ভদ্রমহিলা মিষ্টি করে হেসে বললেন ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’ প্রতিচী গিয়ে ডাঃ সাইনার কথা
মতো ইউ এস জি’র টেবিলে উঠে পড়ে। মনের ভিতরে ঘুরপাক খেতে থাকে ওই ভদ্রমহিলার কথা। ইচ্ছে হচ্ছিল
ডাঃ সাইনাকে একবার জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু না, থাক ওর নিজের ইউ এস জি হচ্ছে।
নৈরিত জানো, আজকে ওই ভদ্রমহিলার ইউএসজি হল। তার মানে উনিই পেশেন্ট, বলো কি? এই বয়সে? দ্যাখো
তাহলে মেডিক্যাল সায়েন্স কোথায় পোঁছেছে। তাঁর হাজব্যান্ড তো তাহলে সিক্সটি আপ। তা তো হবেই। তোমার
পিক আপের ডেট কবে, কিছু বলেছেন? না, এখনও বলেননি। এগ কাউন্ট ঠিকঠাক না হওয়া পর্যন্ত ডেট দেবেন
না। যদি না নাম্বার অফ এগস বাড়ছে ততদিন এই ইঞ্জেকশন চলতেই থাকবে। হ্যাঁ সেগুলো কালেক্ট করে
শুক্রাণুর সঙ্গে মিট করানো হবে ল্যাব এ তৈরি হবে ভ্রুণ। মৃত্তিকা বলে একটা মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছে
প্রতিচীর। মৃত্তিকা মাত্র চার পাঁচদিন আগে জানতে পেরেছে ও কনসিভ করেছে। ওর কাছ থেকে সবকিছু জানতে
পেরেছে প্রতিচী। পুরো প্রসেসটাতে কি কি অভিজ্ঞতা হয়। নৈরিতকে সে কথায় বলল প্রতিচী। এখানে আবার
অদ্ভুত নিয়ম। ব্লাড টেষ্ট করে জানতে হয় পজিটিভ না নেগেটিভ। মৃত্তিকা কি বলল জানো? বলল, পিক আপের
পর আবার ডেট দেবে ওই ভ্রুনাণুটা ইউটেরাসে পুশ করাবার জন্য। সেটাকে বলে ট্রান্সফার। ওই ট্রান্সফারের
পর নাকি দিন পনেরো রেষ্টে থাকতে হয় আসলে ইউটেরাস ওই নতুন বডিটাকে ভালোভাবে অ্যাক্সেপ্ট করে নেবে
নাকি রিজেক্ট করবে তাই দেখা। তারপর ব্লাড টেষ্ট করলেই জানা যাবে। সব শেষে মৃত্তিকা বলেছে তার বিয়ের
কয়েক বছরের মধ্যেই একটা রোড অ্যাক্টডেন্ট তার স্বামী মারা যায়। কিন্তু তার স্বামীর দেয়া স্পর্ম দিয়েই
এখন সন্তান গর্ভে এসেছে দু’চোখ বেয়ে জল বয়ে গেল দু’জনের। ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে বিজ্ঞানের এই
আর্শিবাদ কত মানুষের জীবনের স্বপ্ন পূরণ করে। পিক আপের ডেট পেয়েছে প্রতিচী। মনে ভয় ভয় ভাব।
রাত্রিতে বিছানার মৃদু আলোয় একান্তে জড়িয়ে ধরল নৈরিতকে। আলতো করে চুমু খেল নৈরিতকে। কপালে চুমু
খেয়ে বলল, কি হয়েছে সোনা? ভয় করছে? কিসের ভয়? পরশু পিক আপ তাই। ও মৃত্তিকা বলেছে তেমন কিছু হয়
না। একটু লাগে অজ্ঞান করে নিয়ে করে বলে বোঝা যায় না। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে নৈরিত সাহস দেওয়ার
চেষ্টা করে প্রতিচীকে। কিছু হবে না সোনা সবাই যখন সহ্য করতে পারে তুমিও পারবে। আমি থাকতে তোমার
কোনও ভয় নেই। নৈরিতের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পড়ল প্রতিচী পিকআপের দিন নির্দিষ্ট ঘরে অপেক্ষা করছে
প্রতিচী। একটু দূরের একটা ঘরের বেডের ওপর পা মুড়ে বাবু হয়ে বসে আছেন সেই বয়স্ক মহিলা। অবাক হয়ে দুই
এক পা এগিয়ে যায় দরজার কাছাকাছি। তাহলে নিশ্চয় ভদ্রমহিলা কনসিভ করেছেন। খুব ইচ্ছা করছিল কাছে
গিয়ে একবার জিজ্ঞাস করি। কিন্তু খারাপ লাগল, অন্যের ব্যাপারে এত কৌতুহল ভালো না। চলে এলো নিজের
চেয়ারে। রাত্রে বিছানায় শুয়ে আছে প্রতিচী। নৈরিত গরম দুধ এনে দিল নিজে হাতে। অ্যানাসথেসিয়া করায়
শরীটাতে একটা ঘোর বয়ে গেছে। খুব ক্ষীণ গলায় বলল প্রতিচী, জানো আজ পুরোপুরি কর্নফার্ম হলাম ওই
ভদ্রমহিলা নিজেই পেশেন্ট। কী করে? দেখলাম যেখানে বেডগুলো আছে সেই ঘরটাতে ওই ভদ্রমহিলা একটা বেডে
পা মুড়ে বসে আছেন। তাই নাকি? তার মানে পজিটিভ? তাহলে আমাদের হবে না এমন ভাবছ কেন? তেমন ভাবছি
না, আবার বেশি আশা করা ও ভালো না। এখনই এত আশা কোরও না, কি বলছ তুমি? স্বপ্ন না দেখে বাঁচা যায়?
স্বপ্ন নিয়েইতো সবাই বাঁচে। ভয়ে চোখ দুটো জলে চিকচিক করে উঠে প্রতিচীর। নাইটি পড়া শরীরটা অবসন্ন
হয়ে এলিয়ে রেখেছে বিছানায়। তার মাথায় হাত বোলাল নৈরিত। মাসখানেক কেটেগেল। নৈরিতের স্পার্ম কালেকশন
হল। এবারে ট্রান্সফারের ডেট পেল প্রতিচী। ইতিমধ্যে যতবার ইন্সটিটিউটে গেছে ততবারই উঁকি দিতে ইচ্ছে
করেছে ওই ঘরটায়। ভদ্রমহিলা বেডে আছেন কি না দেখার জন্য। প্রত্যেকবারই দেখেছে ওই বেডটাতেই আছেন
উনি। কোন দিন বসে আছেন, কোনও দিন ধীরেধীরে হাঁটছেন, কোনদিন খাচ্ছেন, কোন দিন ঘুমোচ্ছেন।
ভদ্রমহিলাও মৃত্তিকাকে দেখে অনুপ্রেরণা পায় প্রতিচী। ট্রান্সফারের দিন প্রতিচীকে নিয়ে যাওয়া হল একটা
ছোট ওটিতে, আজ আর অজ্ঞান নয়। বলা হল ট্রান্সফারের পরে এক ঘণ্টা হাঁটতে পারবে না। বেড নাম্বার দিয়ে
দেওয়া হল যেখানে শোয়ানো থাকবে ওই একটা ঘণ্টা। নৈরিত ওই নির্দিষ্ট বেডের কাছাকাছি অপেক্ষা করছে।
ষ্ট্রেচারে করে নিয়ে আসা হল প্রতিচীকে বেডে শুয়িয়ে দেওয়া হল। বেডে শুয়েই প্রতিচী বলল আগামী
পনেরদিনের পরীক্ষা। কি সাংঘাতিক ঝড়ে কাটবে, একবার কি হচ্ছে ভিতরে কেউ জানি না। নৈরিত প্রতিচীর
খোলা হাতে আদর করতে করতে বলল তোমার কোনও কষ্ট হচ্ছে না তো প্রতিচী? না আজ কোন কষ্ট নেই। শুধু
মনের ভিতর কেমন যেন করছে। দেখবে আমাদের ভালোই হবে। দুজনেই চুপ করে যায় একসঙ্গে, নৈরিত ও
প্রতিচী হাতে হাত রেখে চেপে ধরে দু’জনে দু’জনকে। মনের এতটা কাছাকাছি বোধ হয় কোনও দিনই আসেনি ওরা।
আজ একে অপরের উৎকন্ঠার সঙ্গী কিছুক্ষণ পরেই সামলে নেই, নৈরিত বলে, বি পজেটিভ বেবী। এই পনেরটা
দিন মনটা খুশি রাখো। প্রতিচী ইশারা করল পাশের বেডের দিকে তাকাতে। নৈরিত সেই ভদ্রমহিলাকে আজ প্রথম
দেখল। অবাক হয়ে বলল, এই বয়সে কনসেপশন? তবে কি আমি এমনি বলেছি এতোদিন? নৈরিত চলে গেল মিনিট
পনের পরেই। ঐ ঘরে পুরুষদের বেশিক্ষণ থাকার নিয়ম নেই। নৈরিত চলে গেলে ভদ্রমহিলা নিজেই ধীরে ধীরে
এগিয়ে এলেন প্রতিচীর বেডের সামনে। বললেন তোমার ট্রন্সফার হল বুঝি আজ? হ্যা,ঁ প্রতিচী ভিতরে ভিতরে
বেশ উত্তেজনা অনুভব করল। যাক উনি নিজেই এলেন তাহলে। এবার জানা যাবে ব্যাপারটা
উপযাচক হয়ে বলল প্রতিচী, যত বারই এখানে এসেছি আপনাকে দেখেছি। খুব ইচ্ছে করছে জানতে যে, এই
বয়সেও আপনার এত সাহস এল কি করে। আমার ট্রান্সফার হয়েছে পজিটিভ। আমি কুড়িদিন ধরে এখানেই রেস্টে
আছি। বাড়িতে থাকলে রেস্ট হয় না। উনি যখন থেমে গেলেন, আর কিছু জিজ্ঞাসা করা ঠিক হবে না। সে যাত্রায়
প্রতিচীর নেগেটিভ হল। দু’জনেই স্পোটিংলি নিল ব্যাপরটা এখনও ছয়টা এগ রাখা আছে ল্যাবে নৈরিত প্রতিচী
রাজি থাকলে ডাক্তার সাইনা আর একটা ট্রাই করবেন। এইটাই নিয়ম। রাজি না হওয়ার কোনও কারন নেই। মাস
পাঁচেক পর আবার একটা ট্রান্সফারের ডেট পড়ল প্রতিচীর ভ্রুানাণু তৈরি হল ল্যাবে নির্দিষ্ট দিনে আবার সেই
একই ঘরে এবার অনান্য বেডে। কিন্তু সেই ভদ্রমহিলা এতদিনে ছ’মাসে পা দিয়েছেন। প্রতিচিকে দেখে এগিয়ে
এলেন। বললেন, এটা তোমার সেকেন্ড ট্রাই? হ্যাঁ আপনার ক’মাস হল? এই ছ’য়ে পড়ল। একটু থেমে বললেন,
আমাকে দেখে অবাক হচ্ছ নিশ্চয়ই। “ভদ্রমহিলা অর্থবহ হাসি হেসে আঙুল দিয়ে দেখালেন নিজের বেডের দিকে।
প্রতিচী দেখল প্রায় ওরই বয়সী একটি সালেয়ার কামিজ পরা বিবাহীত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভদ্রমহিলার বেডের
সামনে। বোকার মত মুখ হয়ে গেল প্রতিচীর। বলল, মানেটা তো বুঝলাম না কিছু। অস্ফুটভাবে বলল প্রতিচী।
বুঝলে না? না বোঝরাই কথা। ও হল আমার মেয়ে আর আমি আমার মেয়ের সন্তানের সারোগেট মাদার। বুঝলে
এবার? আকাশ থেকে পড়ল প্রতিচী। ডান হাত মুখের উপর চাপা দিয়ে আস্ফুটো বলল, তার মানে? ভদ্র মহিলা
এটাই স্বাভাবিক ভাবে বললেন, অবাক হচ্ছ? তোমাকে বরাবর দেখেছি আর বুঝতে পেরেছি তুমি আমার ব্যাপারে
খুব কৌতুহলী। কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করাটা উচিত হবে কিনা বুঝতে পারেনি, তাই তো? হ্যাঁ তাই, মানে.. ঠিকই?
শুধু তুমি নয় আমার এই বয়সে এরকম ডিসিশনের জন্য অনেকের অনেক রকম কথা শুনতে হয়েছে আমার। আসলে
আমার মেয়ের ইউটেরাসে একটা প্রবলেম আছে, কিছুতেই এমব্যায়ো থাকতে চাই না। বারবার মিস ক্যারেজ হয়ে
যায়। ডাঃ সাইনা বলেছিলেন পেট ভাড়া নিলে বেবি হতেও পারে চেষ্টা করে দেখতে। আমি ওর বাবার সঙ্গে কথা
বলে সিন্ধান্ত নিই আমাকে যদি ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেন আমি ক্যারি করতে পারবো হাতলে নিজেদের
পরিবারে মধ্যেই ব্যাপারটা থাকে। বাইরের কারুর উপর নির্ভর করতে হয় না। মন্ত্র মুগ্ধের মতো কথাগুলো
শুনছিল প্রতিচী। মহিলা বললেন, মেয়ের জন্য মা হয়ে এটুকু করতে পারব না? আর নাতি নাতনি? যেই আসুক,
তাকে ন’মাস নিজের শরীরে আগলে রাখব এ তো আমার কাছে পরম আনন্দের। কি বলো? তোমার কৌতুহল
নিরসনের জন্যেই কথাগুলো বললাম। “ হাসলেন ভদ্রমহিলা, প্রতিচী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না। শুধু
বিড়বিড় করে বলল, হ্যাটস অফ আন্টি হ্যাটস অফ। আপনি অন্য রকম, উত্তর আধুনিক প্রগতিশীল মা।
আপনি সফল মা…।
বিজ্ঞানের নিত্য নব জয়যাত্রার সঙ্গে আধুনিক ও উত্তর আধুনিক যুগের মানুষরা নিজেদের অভ্যস্ত করে তুলছেন। বাঃ। ধন্যবাদ।
ভাল লাগল।
বিষয়টা বেশ নতুনত্ব। খুব ভালো লাগলো।