ধনতেরাস
রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী
ধনতেরাস প্রায় তিন দশক ধরে ধীরে ধীরে বাংলারও এক জাতীয় উৎসব হয়ে উঠছে। আগে এই উৎসব ” বারো মাসে তেরো পার্বনের ” বাংলায় প্রচলিত ছিল না। কিন্তু উৎসাহী বাংলার মানুষ চিরকালই নতুনকে বরণ সহজেই করে নেন। তা রীতি হোক বা সংস্কৃতি হোক, বাংলার মানুষ আপন করে নিতে দেরী করেন না। এই ধনতেরাস অর্থাৎ ধনত্রয়োদশীকে দীপাবলীর মরশুমের মধ্যে আপন করে নিতে বেশি সময় বাংলার মানুষের লাগলো না।
কার্তিক মাসের শ্যামাপূজার আগে ত্রয়োদশী তিথি তে ধনতেরাস পালন করা হয়। ধন ত্রয়োদশীর রাতে দীপমালা সাজানোর নাম যম দীপদান। দীপাবলি চলে ধনত্রয়োদশী থেকে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া পর্যন্ত।
দীপাবলি উৎসবের তৃতীয় দিনটি হল দীপাবলির রাত। এই রাতে হয় শ্যামাপূজাও। এই রাতে আলোক মালায় সেজে ওঠে দেশ। ব্যবসায়ীদের অনেকেই নতুন ভাবে ব্যবসার বছর শুরু করেন নতুন হালখাতা খুলে। কেনাকাটার উৎসব ধনতেরাস।
জানা যায়, এই বিশেষ দিনে যাঁর যা সাধ্য তেমনভাবে সোনা, রূপা, পিতল, কাঁসা, স্টীলের জিনিষ কেনেন। ভারতের উত্তরার্ধ অংশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের বিশ্বাস এই কেনাকাটা হলে মা লক্ষ্মী খুবই প্রসন্না হন আর তার ফলে মা লক্ষ্মীর বাহন ধনপতি কুবেরও সন্তুষ্ট হয়ে ক্রেতাদের অশেষ আশীর্বাদ করেন।
একটা কথা স্বীকার করতেই হবে ধনতেরাস উৎসব পালন করলে দেবলোকের লক্ষ্মী যদি প্রসন্না হন প্রতিটি গৃহের গৃহলক্ষ্মীরাও প্রসন্না হয়ে থাকেন। এবং তাতে গৃহের শান্তি বৃদ্ধিও হয়। এছাড়া, ফি বছর সোনা-দানা কেনার উৎসব কোন্ বৌ মায়েদের না ভাল লাগে ?
আবার এও শোনা যায়, এবছর যত মূল্যের কেনাকাটা করা হলো, পরের বছরে তার চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যের কেনাকাটার সামর্থ্য মা-ই যুগিয়ে দেবেন। অর্থাৎ প্রতি বছর সংসারের শ্রী-সমৃদ্ধি বাড়তে থাকবে। এমন উৎসব ভালো না লেগে পারে না। তাই, বাংলার ঘরে ঘরে ধনতেরাস উৎসব পালন দিন দিন বাড়ছেই।
এই দিনটিকে ‘ কুবের দিবস ‘ বলেন অনেকেই। কুবের লক্ষ্মীর সেবক দ্বারপাল। কুবেরের পূজা না করলে লক্ষ্মীপূজা অসম্পূর্ণ থাকে।
আয়ুর্বেদ প্রবর্তক ধন্বন্তরীর জন্মদিনও এই ত্রয়োদশী। কেননা এই বিশেষ দিনে সমুদ্র মন্থনের ফলে অমৃত কলস হাতে ধন্বন্তরী উঠে আসেন। তাই কেউ কেউ এই দিনটিকে বলেন ‘ ধন্বন্তরী দিবস ‘ট।
এই ত্রয়োদশী তিথির আরেক নাম ‘ জয়া ‘ তিথি। সব কাজেই জয় কামনা করে অনেকে জয়া তিথিতে সব কাজ শুরু করেন।
ভাল লেখা।
খুব ভালো লাগলো ।