কবিতাঃ মৃন্ময় চক্রবর্তী

পাবলো নেরুদার দুটি কবিতা

ভাষান্তর : মৃন্ময় চক্রবর্তী

১.

।। দূরে যেওনা ।।

একটি দিনের জন্যেও দূরে যেওনা
কারণ– আমি জানিনা কীভাবে বলব :
একটি দিন বড় বেশী দীর্ঘ
আমি অপেক্ষা করি তোমার জন্য,
নির্জন স্টেশনে
যখন ট্রেনগুলো বিরতি নিয়ে ঘুমোতে যায় তখন অবধি।

আমাকে ছেড়ে যেওনা, এমনকি একঘণ্টার জন্যও না,
কারণ
তাহলে ফোঁটা ফোঁটা যন্ত্রণাগুলো একজোট হয়ে
দৌড়ে বেড়াবে।
কুয়াশার মতো এদিক ওদিক ঘর খুঁজে ফেরা
উদ্দেশ্যহীনতা আমার ভেতরে জমাট বাঁধবে
আর আমার হৃদয়কে রুদ্ধ করে রাখবে।

হয়ত তোমার ছায়া কখনো ধুয়ে যাবে না
সৈকত থেকে
হয়ত তোমার চোখের পাতা কখনো কাঁপবে না
এই দূরত্বের শূন্যতায়।
প্রিয়তমা, তবু আমাকে একটি মুহূর্তের জন্য ছেড়ে যেও না।

কারণ, এই সামান্য সময়ে তুমি অনেক দূরে চলে যাও
আর আমি পথ হারিয়ে ফেলি, পৃথিবীময় বোকার মত
জিজ্ঞাসা করে বেড়াই,
তুমি কি ফিরে আসবে আবার? তুমি কি আমাকে মৃত্যুর হাতে
ছেড়ে রেখে গেলে?

২.
।। কবিতা বিষয়ক।।

এবং এটা ঘটল এই বয়সে যে…… কবিতা এলো
আমার খোঁজে। আমি জানি না, জানিনা সে কোথা থেকে এলো,
শীত না নদীর ভেতর থেকে।
আমি জানিনা কীভাবে আর কখন,
না, তারা কোনো কন্ঠস্বর নয়, তারা কোনো শব্দ নয়,
কিম্বা নিস্তব্ধতাও,
কিন্তু রাস্তা থেকে আমাকে ডেকে আনা হল,
আনা হল রাতের ডালপালা থেকে,
হঠাৎই, অন্য সবকিছু থেকে,
হিংস্র আগুনের মধ্যে থেকে
অথবা ফিরতি একাকিত্ব থেকে,
সেখানে আমি ছিলাম অবয়বহীন
এবং তা আমাকে ছুঁয়ে দিয়েছিল।

কী বলতে হবে আমার জানা ছিল না, সমস্ত নাম জেনেও
আমার মুখ ছিল নিরুপায়,
আমার চোখ ছিল অন্ধ,
কিছু একটা শুরু হয়েছিল আমার আত্মার ভেতর,
জ্বর কিংবা বিস্মৃত ডানা,
আর আমি আমার পথ তৈরি করে নিয়েছিলাম,
সেই আগুনের পাঠোদ্ধার করে
আমি লিখেছিলাম প্রথম সেই সংজ্ঞাহীন পংক্তি,
অজ্ঞান, সারবত্তাহীন, খাঁটি
ছাইপাঁশ,
একজনের নির্ভেজাল আত্মজ্ঞান
যে কিছুই জানে না,
এবং আচমকাই আমি দেখলাম
স্বর্গ
আলগা
এবং দ্বারখোলা,
ধড়ফড়িয়ে উঠছে গাছপালা,
ছায়া ফুটো হয়ে যাচ্ছে,
ধাঁধার
তিরে, আগুন আর ফুল
হাওয়াপূর্ণ রাত, এই ব্রহ্মাণ্ড।

আর আমি, অসীমের এক অণুপরিমাণ সত্তা,
এই বিরাট নক্ষত্রময় শূন্যতাকে পান করে
মাতাল,
রহস্যের ইন্দ্রজালের সঙ্গে যার সাদৃশ্য,
নিজেকে মনে হল
এই অতলের এক খাঁটি অংশ হিসেবে,
আমি তারাদের সঙ্গে ঘুরতে লাগলাম,
আমার হৃদয় হাওয়ায় আলগা হয়ে গেল।

One thought on “কবিতাঃ মৃন্ময় চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *