অণুগল্পঃ অন্যরকম পুজো – কাকলি চট্টোপাধ্যায় ( কলকাতা)

অন্যরকম পুজো
কাকলি চট্টোপাধ্যায়

সকাল থেকেই পরিষ্কার মেঘমুক্ত আকাশ। এবার বুঝি তবে বর্ষা বিদায় নিলো, আকাশের দিকে চেয়ে আনমনে ভাবলো অতসী। ছোটবেলায় ঠিক এমন সময়ে সে স্কুল ছুটির অপেক্ষায় থাকত। আজকের দিনের মতো এতো আড়ম্বর না থাকলেও, মজা কিছু কম হতো না। অতসী যৌথ পরিবারে বড়ো হয়েছিল। ওর বয়েসী অনেকেরই তখন পুজোর জামার সংখ‍্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ‍্য বিষয় ছিল। তার সঙ্গে কোনো জনপ্রিয় সিনে-তারকার অনুকরণে সাজ-গোজও চলত। অতসীর আবার চিরকালের একটাই নিয়ম – পুজোয় পাড়ার মণ্ডপে থাকা, বান্ধবীদের সাথে অফুরন্ত আড্ডা, আড়চোখে কারোর দিকে তাকাতে চোখাচোখি হয়ে গেলে লজ্জায় রাঙা হওয়া আর দুপুরে মা বা কাকিমাদের বানানো সুস্বাদু খাবার খাওয়া। অতসীর আরেকটিও শখ ছিল – নানান প্রকাশনার শারদীয়া সংখ্যা জোগাড় করা। কতদিন আগেকার কথা – সে সব এখনো ভোলেনি ও।
জলখাবার তৈরি করতে করতে অতসীর চোখ পড়ল ওর মেয়ে তোড়ির ওপর। অতিমারীর কারণে তোড়ির স্কুল বহুদিন বন্ধ। বেচারি কোথাও বেড়াতেও যেতে পারছেনা, শুধু সকাল থেকে অনলাইন ক্লাস আর কখনও কিছু বায়না করলে বড়োদের চোখরাঙানি। মা হয়ে অতসী বোঝেওর কষ্টটা কিন্তু উপায় নেই। অতসী তার নিজের ছোটবেলার নানা গল্প বলে তোড়িকে ভুলিয়ে রাখে। সে আর পিনাকী, মানে তোড়ির বাবা, স্বপ্ন দেখে বড়ো হয়ে তোড়ি যেন সৃষ্টিশীল এবং কোমল অন্তরের মানুষ হয়।
কিন্তু এতো কিছুর পরেও যখন আজ তোড়ি মনমরা হয়ে বলল, “মা, এবার তো আমরা কোথাও বেড়াতে যেতে পারব না আর ঠাকুরও দেখতে পারব না”, তখন অতসী সত‍্যিই চিন্তায় পড়ল। নাঃ, এবার তো অন্য কিছু ভাবতেই হচ্ছে !
তোড়ির টেবিল গোছাতে গোছাতে অতসীর চোখে পড়ল তোড়ির বানানো একটি দূর্গাঠাকুরের শোলার মুখোশের দিকে। তাই তো ! এতদিন খেয়াল পড়েনি তো এটার দিকে।
বিকেলে, তোড়ি ঘুম থেকে উঠতেই অতসী ওর প্ল‍্যানটা বলল, “শোন, দুগ্গাঠাকুরের মুখোশটার সাথে দশটা হাত বানিয়ে নেব। তারপর বাবা পাড়ার ইলেকট্রিক কাকুকে ডেকে আলো লাগিয়ে দেবে। ব‍্যস, পুজো রেডি”। “কিন্ত মা, পুজোয় তো আমরা বাইরে খেতাম, সেটা তো আর…’, তোড়ি করুণ মুখে বলল। “চিন্তা নেই, সব না পারি, দু একটা পদ তো বাড়িতেই করা যাবে,” অতসী বলল। এবার তোড়ির মুখে হাসি ফুটল, আর তোড়ির সেই মিষ্টি হাসিতে যেন অতসী ফিরে পেল ওর হারানো ছোটবেলা।

7 thoughts on “অণুগল্পঃ অন্যরকম পুজো – কাকলি চট্টোপাধ্যায় ( কলকাতা)

    1. সুন্দর ভাবে এক বাচ্চার মনকে ধরা হয়েছে এই অনু গল্পে।
      এমন পরিস্থিতিতে আশা ও আলো এলো তোড়ির মনে। এই তো মায়ের কাজ!!

  1. বেশ ভালো লাগলো। এবারের পূজোটা আমরাও তোড়ির মতন উদযাপন করি । আরও ভালো কিছুর আশায় রইলাম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *