সম্পাদকীয়ঃ মন্দিরা গাঙ্গুলী

সম্পাদকীয় ৪

সকালে ঘুম ভাঙার পর জানলা খুলে দিলেই চোখের সামনে নীল আকাশ, চারদিকে সোনালী আলো মুহূর্তের জন্য মন খুশিতে ভরিয়ে দেয়। ততক্ষণে মগজের বুটিং শেষ, মনে পড়ে যায় আমার তো মন ভালো নেই। পিতৃ সম স্বজন হাসপাতালের আই সি ইউ তে ভাইরাস অসুরের সাথে লড়াই করছেন। প্রিয় বন্ধুদের কেউ কেউ জ্বরে আক্রান্ত। অন্যবারের মত গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, শপিং মল বাদ দিয়েছি , উৎসবের পরিকল্পনারও মগজে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছি। তবু এই যে আলো, এই আকাশ আমার জন্যই সাজেনি কি? আমি খুশি হব বলেই তো এই আয়োজন। মনে হয়, না-পাওয়ার বোঝা নিয়ে যে অতীত ঘাড়ে বসে আছে সে সত্যি নয়, আগামীর যে সব আশঙ্কায় ভেতরে ভেতরে কাঁটা হয়ে থাকি সেসব কিছুও সত্যি নয়, সত্যি শুধু এই মুহূর্ত । এই আলো, এই আকাশ। জীবনের শর্তই যখন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া, সেখানে না-পাওয়া কথাটারই কোন মূল্য নেই, যা পেয়েছি তা মানিয়ে নিতে পেরেছি বলেই আজ টিঁকে আছি। এমন হতে পারত কি তেমন হতে পারত ভেবে হতাশ হওয়া আসলে বিলাসিতার নামান্তর।

অবেক্ষণ পত্রিকার সেপ্টেম্বর তৃতীয় সংখ্যার কথামুখ লিখছি সেকথা ভুলে গেলে হবেনা। এ সপ্তাহে থাকছে কবিতা, গল্প , নিবন্ধ, ধারাবাহিক ইত্যাদি বিভাগ। পত্রিকার পক্ষ থেকে সমস্ত লেখক এবং পাঠকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আপনাদের সকলের উৎসাহে, ভালোবাসায় আমাদের পথ চলা। আপনারা সকলেই আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আমায় মেইল করে , ফোনে, মেসেজে জানিয়েছেন আমাদের পত্রিকা দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে, পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার মানও বেশ ভালো। পত্রিকা সাজানোর পুরো কৃতিত্ব শ্রী হিন্দোল গোস্বামীর। আর আপনারা ভালো লেখেন বলেই লেখার মান ভালো হয়।

প্রচুর লেখা পাচ্ছি , যাঁদের লেখা পাঠানোর ৪৫ দিন অতিক্রম করার পরও প্রকাশিত হলনা, জানবেন, আমরা আপনার কাছ থেকে আরো ভালো লেখা আশা করছি অথবা দেখেছি আপনি প্রকাশিত লেখা পাঠিয়েছেন। সেকথা আলাদা করে জানানো সম্ভব হয়না সব সময়। তাই বলছি, আপনার অপ্রকাশিত একটি ভালো লেখা পাঠান, নিশ্চয়ই প্রকাশিত হবে। উচ্চমানের পত্রিকা হোক তেমনই চাওয়া আমাদেরও। সেই চাওয়া অব্যাহত থাকবে আগামীতেও। সমস্ত সাহিত্য প্রেমী মানুষের নিজের হয়ে উঠুক এই পত্রিকা। আপনারা সঙ্গে থাকলে অবশ্যই সম্ভব হবে, বিশ্বাস করি। এই লেখার সঙ্গে শরতের আকাশের সুন্দর ছবিটি তুলেছেন অদ্রিজা মাহাতো। শিরোনাম দিয়েছেন শ্রীমতী শুভ্রা মাহাতো। এই ছবির শিরোনাম “শুভ্র শরত এল দ্বারে” ।

সকলে ভালো থাকুন। পত্রিকার সঙ্গে থাকুন। নমস্কার।

শুভ্র শরত এল দ্বারে ছবি তুলেছেনঃ অদ্রিজা মাহাতো

14 thoughts on “সম্পাদকীয়ঃ মন্দিরা গাঙ্গুলী

    1. সত্যি এই মূহুর্ত্ত এই সময়। অতীতের পাওয়া না পাওয়া আর বড় নয়। খুবই ভালো লাগলো।

  1. চমৎকার । সম্পাদকীয় এমন সুন্দর সাহিত্য হয়ে উঠেছে ! অসাধারণ।

  2. অল্প কথায় অত্যন্ত সুন্দর এই মুখপত্র। এই প্রবাহমান সময়ের সাথে আমরা হারিয়ে যাবো নিশ্চিত। হারিয়ে যাবে আমাদের মান অভিমান, সুখ দুঃখ, পূর্ণতা অপূর্ণতা। কিন্তু এই যে শরতের সোনালী নরম আলো, মৃদুমন্দ বাতাস, হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসার সুতীব্র আর্তি… এ সব কিছু থেকে যাবে আজীবন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীর বিজন ঘরে, অগোচরে, জেগে থাকবে ঘুমহীন প্রেমিকের চোখ। আর তার মধ্যেই আসবে, যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। তাই, এসো, আমাকে গ্রহন করো অনাবিল হয়ে। আমার সকল শুভ- অশুভ, পূর্ণতা- অপূর্ণতা, সত্য-মিথ্যা… এই সব নিয়ে গ্রহন করো অকৃত্রিম আমিকে। আমি সৎ হতে চাই, আমি সহজ হতে চাই, মুখোস খুলে উন্মুক্ত রাজপথে আমি চিৎকার করে বলতে চাই, ‘আমি ভগবান নই, রক্ত-মাংসে গড়া আমি এক মানুষ’।।

  3. খুব সুন্দর মুখবন্ধ। আশা করি এ দুঃসময় কাটিয়ে নতুন পৃথিবী পাব আমরা। আমাদেরও সে পৃথিবীর যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।

  4. সত্যি এই মূহুর্ত্ত এই সময়। অতীতের পাওয়া না পাওয়া আর বড় নয়। খুবই ভালো লাগলো।

  5. খুব সুন্দর ভাবনা । প্রকৃতি আর আকাশ এসময় নব নব রূপে প্রাণে এসে দোলা দেয়। ক্ষণিকের জন্য হলেও আতঙ্কিত ,শোকাহত ,অপামানিত আর বঞ্চিত প্রাণে বাঞ্ছিত বিস্মৃতি আসে। এক লহমায় মনের আয়নায় উদ্ভাসিত হয় কত বড় উপলব্ধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *