গল্প নয়
ভূমিকা গোস্বামী
শরীর খারাপ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত শুভা। কিন্তু শরীর তো ওর ঠিক-ই আছে।গায়ে হাত দিয়ে দেখেছে – নাঃ জ্বর টর আসে নি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে ছেলেটার যেন কী হয়েছে। কেমন মনমরা ভাব। মুখে হাসি নেই। কথা নেই। পড়াশোনায় বরাবরই ভাল মিঠান। প্রতিবছর ক্লাসে প্রথম হয় ও। এখন তো করোনার জন্যে অন লাইনে ক্লাস করছে। ওর তো ফোন নেই। আর ক্লাস নাইনের ছেলের হাতে স্মার্টফোন দেওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবে নি শুভা। বিধানের ফোনটা স্মার্টফোন। ওটাই দিনের বেলায় এখন ছেলের দখলে। এখন একটা নতুন ফোন কেনাও সম্ভব না। প্রাইভেট ফার্মে বিধানের চাকরিটা এখনও টিকে থাকলেও মাইনে যা পায় তাতে সংসার চালাতেই হিমশিম শুভা। এদিকে নাইনে ওঠার পর ই পাড়ার কোচিং ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছে শুভা। টানাটানির সংসারেও ওরা তিনজন বেশ সুখেই ছিল এতদিন। ছেলেটাকে ঘিরেই তো ওরা দুজন বেঁচে আছে। সেদিন শুভার সাথে দেখা। চোখের নিচে কালি।মুখ শুকনো। কেমন আছো জিজ্ঞেস করতেই ভেঙে পড়ল। বলল — ছেলেটাকে নিয়ে সমস্যায় আছি। কি করব বুঝতে পারছি না।
সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে মিঠান। এই বয়ঃসন্ধিতে সমস্যা হতেই পারে। আমি মিঠানের সাথে কথা বলতে চাইলাম। ও আমাকে বেশ পছন্দ করে। ঠাম্মি বলে ডাকে। সখ্যতা আছে। পড়াশোনার খোঁজ নিতে নিতে বন্ধুদের কথা উঠতেই ও কেমন চুপ করে গেল। ধীরে ধীরে জানতে পারলাম ওর বন্ধুরা এ বয়সেই বিড়ি, গাঁজা, মদে অভ্যস্ত। বাড়িতে বাবা মা খায়। তাই শাসন নেই। ওকেও ওদের দলে টানতে চাইছে। ও রাজি না হওয়ায় সবাই মিলে ওকে অপদস্ত করছে। বলতে বলতে কেঁদে ফেলল মিঠান। আমি ওকে অনেক বোঝালাম –প্রায় পঞ্চাশ মিনিট ওর সাথে কথা বলেছি। ওর মুখে হাসি ফুটেছে। ওর সাহসী চোখ, মনবল ও দৃপ্ত ভঙ্গি দেখে বুঝেছি — মিঠান আলোর পথেই চলবে।
সব বয়সের মানুষের সামনেই দুটো পথ থাকে। একটা প্রিয়র পথ । সাময়িক ভাললাগা। ক্ষণস্থায়ী সুখ আর দীর্ঘস্থায়ী দুঃখের ।যা ধীরে ধীরে অন্ধকার থেকে গভীর অন্ধকারে টেনে নিয়ে যায়। কারো প্ররোচনা বা প্রলোভনে একটি ভুল পদক্ষেপ যে কী ভয়াবহ ভয়ংকর হতে পারে তা আমরা সবাই কম বেশী জানি।
আরেকটি শ্রেয়র পথ। আত্ম সংযম আর মনের লাগাম নিয়েই চলতে হয়। তাতেই দীর্ঘস্থায়ী সুখ। এটাই আলোর পথ। আনন্দের পথ।নব্য কৈশোরে পা দেওয়া সব মিঠানরা এই আলোর পথের সন্ধান পাবে তো ?
বাহ্, দারুন লিখেছেন।
খুব সুন্দর গল্প । গল্পের মাধ্যমে কত কিছু জানা যায়, শেখা যায়।
অল্প পরিসরে মূল্যবান বক্তব্য , প্রাসঙ্গিক চিন্তা-ভাবনা পড়তে ও শুনতে বেশ ভালো লাগে।
একদম বাস্তব সমস্যা। ছেলে আছে তাই উপলব্ধি করলাম ওই বয়সটাতে কত রকম সমস্যার সম্মুখীন হয় ওরা।
খুব ভালো লাগলো।
গল্পটি আপনাদের ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ।