আমার রবীন্দ্রনাথ
সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য
ছোটবেলা থেকে ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে আর কাঠবেড়ালী কাঠবেড়ালী পেয়ারা তুমি খাও…সেই কবে থেকে যে প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি করে পুরস্কার নিয়ে এসেছি ভুলে গেছি।তখন ভাবতাম এই রবি ঠাকুর আর নজরুল লোকগুলো কি করে এভাবে মিলিয়ে মিলিয়ে লিখেছেন রে বাবা !ইয়া মোটা এক সঞ্চয়িতা আর তার বোন সঞ্চিতা।কী মিল!
তারপর এল কিশলয়।তারপর জীবন স্মৃতি।”জল পড়ে পাতা নড়ে “আস্তে আস্তে হাতে উঠে এল নিবারণ চক্কোত্তী।তোমারে দিই নি সুখ/ মুক্তির নৈবেদ্য গেনু রাখি…সেই থেকে ব্যাগের ভেতর এক কোণে “শেষের কবিতা”।লাবণ্য আর কেতকীর মধ্যে লুকিয়ে জেগেছে সিসি,লিসিও।যখন মধ্য কোলকাতায় মামাবাড়ীর জাফরিকাটা জানালার খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে দুপুরবেলা বিভিন্ন ফেরিওলার ডাক শুনতাম তন্ময় হয়ে তখনই পড়েছি নষ্টনীড়। গল্পগুচ্ছর পাতা তন্ন তন্ন করে খুঁজে পেতে চেয়েছি প্রাণের আরাম।গোরার দৃপ্তভঙ্গিমার মধ্যে ছিল আমার রবীন্দ্রনাথ।ঘরে বাইরের সন্দীপ অদ্ভূত একটা চরিত্র চিত্রন করেছিল আমার মনে।আর চারুলতার দেওরটির মধ্যে লুক্কায়িত প্রেমিক টিও আমার রবীন্দ্রনাথ। শেষরক্ষার বিনোদবিহা্রী,গদাইগনেশ, চন্দ্রদাও মিলেমিশে আমার রবীন্দ্রনাথ ।ললিতকেই বা বাদ দিই কি করে? নৌকাডুবির নোলক পরা বধুটির(ক ম লা) চোখের পাতার কাঁপনের মধ্যেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল আমার রবীন্দ্রনাথ।যোগাযোগের কুমু,চোখেরবালির শাণিত বিনোদিনী কিম্বা নৌকাডুবির পরিশীলিত হেমনলিনী,রক্ত করবীর নন্দিনী,রাজার সুদর্শনা বা অবশ্যই সুরঙ্গমা সব্বার মধ্যেই ছড়িয়ে আছেন তিনি, আমার রবীনদ্রনাথ।আমার চোখে কাদম্বরীর চরিত্রের সব কটি গুনের মিলিত সুবাস দিয়েই সৃষ্ট রবীন্দ্র নায়িকারা।তারাই আমার রক্তকরবী, আমার গীতবিতান আমার প্রবাসের চিঠি আমার প্রেম,আমার বিরহ,আমার কর্তব্য আমার জীবনবোধ,আমার রবীন্দ্রনাথ।যতটা না প্রণাম জানাই তার থেকেও বোধহয় বেশী ভালবাসি তোমাকে।আমার বীরপুরুষ,আমার অমল, আমার নিখিলেশ,আমার রবি বাবু,আমার স্বপন।আমার প্রবাসের চিঠি,আমার চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা,চন্ডালিকা অথবা অথবা ওই যে ওই যে আমি যে গান গেয়েছিলাম জীর্ণপাতা ঝরার বেলা ঘিরে আমার প্রতিটি প্রশ্বাস।আমার জীবন মরণের সীমানা ঘিরে যার অবস্থান।
“এই কথাটি মনে রেখো” কিন্তু তুমি,
আমার কবিঠাকুর আমার রবিঠাকুর।
ভাল লেগেছে আপনার মুক্ত গদ্য। রবি ঠাকুরকে নিয়ে নস্টালজিক উপলব্ধি!!
নস্তালগিক খানিক্ষণ।