ছুটি চুরি
সোমা চক্রবর্তী
বাবাই: নীল আকাশে রঙ-বেরঙের
উড়ছে কতো ঘুড়ি
চল্ না সিধু, আজকে একটা
ছুটি করি চুরি!
সিধু: হেই গো দাদা
তোমার মা যেই
জানতে পারবে কাল-
তোমার তো নয়,
চড়িয়ে সিধে
করবে আমার গাল।
বাবাই: ওই দেখ্ রে
দাঁতন ঝোপের ফাঁকে,
ঘোতন আমার তীর-ধনুকটা
ঠিক লুকিয়ে রাখে।
চল ই না, আজ
খেলি শিকার করা-
সিধু: যদি পড়ি ধরা-
রিকসা করে পৌঁছে দেবার
কাজটা আমার যাবে,
মা’র যে অসুখ,
ভাইটা তবে
বল্ দেখি কি খাবে!
বাবাই: আচ্ছা সিধু, পূজো পূজো
ভাবটা কি তোর জাগে?
নীল আকাশে ঘুড়ির মেলা
তোর কি ভালো লাগে?
সিধু: পূজোর সময় ভাড়া বেশী
পাঁচ টাকা, দশ টাকা,
তাই তো আমার সময়ই নেই
দুগ্গা ঠাকুর দেখা।
বাবাই: শিউলি ফুল আর স্থল পদ্ম
ফুটছে বাগান ভরে,
জানিস সিধু, মনটা আমার
কেমন কেমন করে;
ছাই রঙা সেই খোড়া কুকুরটা
থাকছে এখন বকুর বারান্দায়
চারটে বাচ্চা নিয়ে;
ইচ্ছে করে নিজের হাতে ধরে
দুধভাত আর বিস্কুট রোজ
খাইয়ে আসি গিয়ে।
ভাল্লাগে না স্কুলে যাওয়া।
কিন্তু আমার কপাল মন্দ,
যায় না সুযোগ পাওয়া!
সিধু: তোমার কথা শুনে পাচ্ছে হাসি;
দুধভাত আর বিস্কুট ওই
কুকুরগুলো খাবে?
বাবাই: ওরা কিছু পায় না খেতে,
কেউ যদি না দেয় রে ওদের,
এমনি মরে যাবে।
সিধু: আমরা যদি কাজ না করে
এমনি খেতে পেতাম-
ঠিক সময়ে
রোজ ইস্কুলে যেতাম!
ফর্সা জামাকাপড় পড়ে-
বাবাই: কান দুখানা মলে দিত
মাস্টার রোজ ধরে!
সিধু: তোমার বুঝি পড়াশোনা
ভাল্লাগে না, দাদা?
বাবাই: ধুর, ধুর! সব
আজব রকম ধাঁধা।
আচ্ছা বলতো,
কোন দেশে কি ফলে-
কিই বা হবে এসব জানা হলে?
সূর্য নাকি পৃথিবী
কে ঘুরছে যে কার পিছে-
আমার কাছে
এসব জানা মিছে।
সিধু: তোমার তবে
ইচ্ছেটা কি হয়?
বাবাই: জানতে ইচ্ছে করে আমার
দুঃখ কেন হয়!
ইচ্ছে করে জানতে কেন
রিকসা চালাস তুই?
আমায় কেন পড়তে হবে
নানান রকম বই?
সিধু: এই তো নিয়ম, দাদা-
বাবাই: নিয়ম নয় রে,
এসব শুধু
বড়োদেরই ধাঁধা!
আচ্ছা সিধু, আয় না রে, আজ
করে ছুটি চুরি,
তুই আর আমি দুইজনকে
বদলাবদলি করি!
সিধু: বলছো টা কি?
এসব কথা
শুনলেও হয় দোষ!
বাবাই: দোষ না হাতি!
আয়, তুই আজ
সিটের ওপর বোস।
তুই আজকে টিফিন খাবি
আমার ব্যাগের থেকে,
আমি খাব কলের জল, আর
বসবো ছায়া দেখে।
বসে বসে ঘুড়ির লড়াই
দেখবো আমি আজ,
ধনুক নিয়ে শিকার করা
আজ হবে তোর কাজ।
সিধু: জানো দাদা,
আমারও মন করে-
আকাশ-মেলা ঘুড়ির খেলা
দেখি পহর ধরে!
কিন্তু যদি দুপুরে না
ঘরে খাবার যায়,
মা’র যে অসুখ,
ভাইটা তবে
বল্ দেখি কি খায়!
বাবাই: কোনো মতেই
তোর হবে না ছুটি?
সিধু: অনেক হলো এমনি দেরী,
চলো এবার উঠি!
বাবাই: উঠবো কি রে?
স্কুলের ঘন্টা
বেজেছে কোন্ কালে-
সিধু: আমার সাথেই ঘোরো তবে,
ঘর যেয়ো বিকেলে।
বাবাই: আমার ছুটি হলো চুরি
তোর হলো ভন্ডুল;
তোর দেখি যে আমার থেকেও
কড়া রে ইস্কুল!
Asadharon… absolutely refreshing childhood days
অসংখ্য ধন্যবাদ।
মজার ছড়া হলেও,ছোটবেলার ভাবনা গুলো শিশু মনের মাঝে খুব সুন্দর আলোড়ন সৃষ্টি করে তার বর্ণনা বেশ আবেগময় ও স্বচ্ছ। অসাধারণ রম্য রচনা……..
অসংখ্য ধন্যবাদ।