প্রেম পর্যায়ের কয়েকটা কবিতা
অরিন্দম মুখোপাধ্যায়
১)
বাস্তবিকবাগানেরফুলএখনওফোটে শুভ্র থানের আঁচলে
আমাদের বাড়ির সামনের দ্রুত বেড়ে ওঠা আগাছাএখনওসবুজ
গ্রীষ্মেরসূর্যেরবিশুষ্কএবংউষ্ণরশ্মি; অশ্রু শুকিয়ে যায় চোখের কোলে
আমারসময়, হেমন্তের পড়ে থাকা শেষ বিকেল হাত নাড়ে
এবংআমারচুলে ধূসরতা দিয়েছে দেখা
যদিও স্পন্দিত হৃদয় তরুণ বসন্তের মতো উদ্দাম মাতাল
#
এইজীবনসংক্ষিপ্ত, তবু হয়তাড়াতাড়িগোলাপী গোলাপ
ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। আমারবুকেরউপরমাথারাখো, বিশ্রামনাও
আর হাঁটুমুড়ে বসো নামধ্যরাতে থানের আঁচল পেতে, সমাধিতে
যেতে পারি এবং যাবো একাকীমৃত্যুরঅন্ধকারগহ্বরে
তবু তোমারজন্যআমারক্ষরিতহৃদয়আবদ্ধ,যা এখনোবহন করে
সবকিছুরপরেও সর্বত্র, এই প্রেম এই নৈশব্দের উচ্চারণ
২)
উপত্যকার বাগানে ফোটা ফুলসুবাস ছড়িয়ে দেয় আলতো
দিগন্ত বিস্তৃত শান্তরাতে
সোনালি তুষারহতে বিচ্ছুরিত আলো
প্রত্যুষের স্নিগ্ধ সৌম্য রশ্মিরক্তক্ষরনের কালে
হৃদয়েবসন্ত নামে; পাখির বুকের পালকের মতো উষ্ণ
আমার ধূসর চুল, দিন প্রবাহের গল্প বলে
জীবন সংক্ষিপ্তযেন কয়েক মুহূর্ত
তবু এইখানে বসতে পাশেএসো প্রিয়তম এসো
দেহের নিবিড় স্পর্শে দুহাতের মায়ায় জড়িয়ে
মৃত্যুর নিগূঢ় অন্ধকার উপত্যকা থেকে সুর উঠে আসে
চোখের জলের ধারা পাথরের শরীর ভিজিয়ে
অবিরাম প্রবাহিতনদী তার সব কথা যায় ভুলে ফেলে
বাতাসে বাতাসে ঘুরে ফিরে ফেরে মধ্যরাতে করুণ প্রার্থনা
প্রাচীন সমাধিজুড়ে সোনালি তুষারসৌম্যস্নিগ্ধ রশ্মি মাখা
দিগন্ত বিস্তৃত রাতে সুবাস ছড়িয়ে দেবে উপত্যকার বাগান জুড়ে
তোমার সমাধির হৃদয়ে ফুটে ওঠা ফুলগুলো
৩)
কুমোর-টুলির পাড়া কুমোর কাঠামো ছাঁচ গড়ে
যে খড়ে মাটির পড়বে প্রলেপ আর দু-দিন পরে
নিতান্তই ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে জল ভরা কলসি কাঁকে নিয়ে
রোজ রোজ দেখে মূর্তি তৈরি আর সেই সব কাজ
আনন্দ উজ্জ্বল মুখে আলোর রূপসাজ
তারপর ফাঁকা মাঠ ঘাট লোকশূন্য চণ্ডীমণ্ডপ
নেশার উল্লাস যার উত্তাল সমুদ্রে আছড়ে পড়ে
বাকি পড়ে আছে জলে ইতস্তত এদিক ওদিক
খণ্ড মুখ, দগ্ধ দেহ, বিল্বপত্র, ত্রিশূলের ফলা
ভাসিছে দশমীর জলে, অসতী দুর্গা
৪)
ডুবে সেই কবেকার ঘন অন্ধকারে
যে বালিকা দৌড়ে ছুটে গেল তার উরন্ত চিকুর
হাজার নক্ষত্র রেখা পথ দূরে ফেলে এই যে যাত্রা
ডুবে সেই কবেকার ঘন অন্ধকারে
যে রূপে আমাকে তুমি পুত্র সাজিয়েছো
রূপ বদলে দিয়ে হল পিতা
শরীর আধারে জানি ভেদ ঘটে পুত্র কিংবা পিতা
তুমি তো তুমি ই মাগো রূপ ভেদে একই
আমি তো তোমার পথে শূন্য বসে থাকি
হাজার বছর ডুবে কবেকার অন্ধকারে
রূপের বদল হয় কন্যা পুত্র মাতা
পিতার তর্পণ স্নান। আকাশ গঙ্গায়
সতী দুর্গা। অনন্ত শক্তিময়ী দুর্গা মাগো , মানুষ যেন পশু না হয় আর। সুন্দর সুন্দর কয়েকটি কবিতা ।কবিকে ধন্যবাদ।
দুর্গা নামে শত শত নারী আজ ধর্ষিতা। সত্তর ঊর্ধ্ব মহিলাদের ও রেহাই নেই যারা প্রকৃত অর্থে জননী। এমনকি অর্ধনারীশ্বর রূপী কাউকে পাওয়া যায়না মায়ের রক্ষার্থে। শুধু পুজোটা হয়। দুর্গা (রূপক অর্থে) কে কেউ রক্ষা করে না আর আমাদের দেশে তো দুর্গা খেতেই পায়না দু বেলা পেট পুরে সে কি লড়াই করবে? তাঁর কোন সামাজিক সম্মান নেই। সে কোন মনোবলে লড়াই করবে বলুন তো? দুর্গা সতী শুধু গ্রন্থে, অসতী বাস্তবে। আমি কেবল বাস্তব কে নিয়ে বাঁচি (পরজন্মের কথা পরে ভাববো না হয়)।