ইচ্ছেরা
মৌমিতা রাবেয়া
ইচ্ছেরা হাত তুলে দিচ্ছে ক্রমেই। এখন সিনেমা দেখতে ইচ্ছা করে না, ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে করে না, গত সপ্তাহে ভাবতে ইচ্ছে করত আজ সকালে দেখছে সেটাও আর করছে না।
লকডাউনের প্রথম দিকে ভেবেছিল ভালোই হল খালি খাব, সিনেমা দেখব , আর ঘুমাব। অফিসে যেতে হবে না। বসের দাঁত খিঁচুনি খেতে হবে না। লেট পড়বে না, বিন্দাস জীবন, কত দিন চেয়েছিল এমন গা এলানো জীবন। সেই ছোট্টবেলা থেকে এমন একটা ছুটির স্বপ্ন দেখত তিতির।
দিন যত এগোয় লকডাউন এর জৌলুস কমতে লাগল। গ্ল্যামারটা চলে গেল। ছুটি চেয়েছিল ঠিকই তবে এই অন্তহীন ছুটি কেমন যেন ছুটির আনন্দটাই নিয়ে নিল।
এখন মাঝে মাঝে বসের দাঁত খিঁচুনি টা দেখতে ইচ্ছে করে , প্রতিদিনকার বাদুড় ঝোলা বাসগুলোর পাদানিতে ঝুলতে ইচ্ছে করে …
কি হয়েছে তিতিরের? যেগুলো থেকে পালাতে চাইত সেগুলো পেতেই বড় ইচ্ছে করছে।
চিরকাল লুচি খেতে খুব ভালোবাসে তিতির। মা মেয়ের মুড ঠিক করতে কাল রাতে বলল
“দেখ তিতি আজ রাতে লুচি মাংস “….
খাবার টা দেখে গা গুলিয়ে উঠল… চোখের সামনে একটা সিন দেখতে পেল থালা হাতে হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে খাবারের জন্য।
না খেয়ে উঠে পড়ল। মা কত ডাকল সাড়া দিতে ইচ্ছে করল না। ঘরের লাইট নিভিয়ে দিল, ঘুমাতে ইচ্ছে করল না।
সারা রাত জেগে ছিল না আধা জাগা ছিল বোঝার ইচ্ছেটাও করল না। ..
ঐ মানুষগুলি কোথায় যাচ্ছিল? ঐ মানুষগুলির মধ্যে তিতির নিজেকেও পরিষ্কার দেখতে পেল…
থালা হাতে হেঁটে চলেছে লাইন করে। কোথায় যাচ্ছে বুঝতে পারল না, সকালে আর স্বপ্নটাকে নিয়ে ভাবতেও ইচ্ছে করল না।
চারিদিক কেমন নিস্তব্ধ, কাকের ডাকে চোখ খুলল। খোলা চোখে দেখতে পেল একটা বড় হাঁ গিলতে আসছে। তিতির অনেক মানুষের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।
তিতির দেখল ইচ্ছেরা দূরে সরে সরে যাচ্ছে..
তিতিরের এবার ভয় করতে শুরু করে…..
ভাল লাগলো। শুভেচ্ছা রইলো।
Bhalo legeche