অণুগল্পঃ বোধন – তাবাস্বুম আরা (কলকাতা)

বোধন
তাবাস্বুম আরা


    মাথার লম্বা মুকুটটা প্যান্ডেলে আটকে যাচ্ছে বারবার। তাই এখনো লরিতেই অপেক্ষা করছি। ভিড়ের মধ্যে থেকে কে যেন হুংকার দিয়ে বলে উঠল—- “মায়ের গায়ে একটা আঁচড়ও যেন না লাগে!… ” চোখ বুলিয়ে দেখলাম তাকে। খুব চেনা মুখটা। কোথায় যেন দেখেছি!… কাল রাতেই তো! হ্যাঁ, কাল রাতে এই তো ছিল! ঠিক এইরকমই  হুংকার দিচ্ছিল না?…   লরির ড্রাইভার  তবু চেষ্টা করছে যদি কোনভাবে মঞ্চের আরেকটু কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু আবারও আমার মুকুটের উপরের একটুখানি আটকে যাচ্ছে। আর আবারও সেই হুংকার..  —- ” শালা, বলছি না মায়ের গায়ে আঁচড় লাগানো যাবে না!”…..  আবারও মনে পড়ল, কাল আমার গলায় আমারই ওড়না পেঁচিয়ে হিঁচড়াতে- হিঁচড়াতে  টানতে-টানতে এ’ই তো নিয়ে যাচ্ছিল না, পিছনের ঐ  জঙ্গলে?….   ‘হুংকার’ তার দুই শাগরেদ নিয়ে উঠে পড়ল লরিতে। শাগরেদ’দের একজন বলল, ” মায়ের আঁচলে টান পড়ছে, ছিঁড়ে যাবে। ঠিক করে ধর।”…. কাছ থেকে দেখলাম, নিশ্চিত  আমি। এরাই ছিল কাল। এরাই তিনজন। আমাকে বিবস্ত্র করে ছিন্নভিন্ন করতে সেকেন্ড লাগেনি এদের! অবাক হয়ে দেখছি আমি। আজ এরাই আমার মুকুট, আমার আঁচল সামলাচ্ছে! এরাই আমার দেহরক্ষী হয়েছে আজ? আমার রাগে- ঘৃণায় চীৎকার  করতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু পারছি না।…  হঠাৎ মনে পড়ল, এরাই তো কাল টেনে ছিঁড়ে নিয়েছে আমার জিভটা! আমার হাতের অস্ত্র অব্যবহারে বিকল। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। ঝোপের অন্ধকারে, কালও ঠিক এইরকমই অসহায় লাগছিল নিজেকে!…..  তবু শরীরের সবটুকু শক্তি জড়ো করলাম অন্তত আজ রাতটুকু পার করতেই হবে। কাল আমি আমার জবানবন্দি দেব —- লিখে। আর তারপর শুরু হবে বিকল অস্ত্রে শান দেওয়ার কাজ। যেদিন নিজেকে রক্ষা করতে পারব সেদিনই হবে আমার বোধন। তার আগে নয়। 

5 thoughts on “অণুগল্পঃ বোধন – তাবাস্বুম আরা (কলকাতা)

  1. বাহ্, এই লেখাটা সমাজের ছবি হয়ে সমাজেরই কাছে প্রতিবাদের আবেদন রেখে গেল, অপূর্ব।

  2. দারুণ লিখেছ। এমন করেই প্রতিটি ঘরের দুর্গারা জেগে উঠুক। অসুর নাশ করুক।

  3. এটাই বাস্তব। খুব ভালো লিখেছিস।

  4. অপূর্ব অভিব্যক্তি। সুস্থ সমাজের জন্য আমার মায়ের আকাঙ্খা। লেখা ও লেখার মানসিকতা অনবদ্য।

  5. আন্তরিক ধন্যবাদ সবাইকে— পড়ার জন্য, অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য।

Leave a Reply to ভূমিকা গোস্বামী Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *