বন্দী সবার প্রান ও মন , কারাগারের নাম – স্মার্টফোন!
মানুষের জীবন ধারণের অপরিহার্য বস্তু কী কী? খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান। আর?… অক্সিজেন! আর?…. জল! আর…? এইরে! সবচেয়ে দরকারী জিনিসের নামটাইতো করা হয়নি–আমাদের সকলের.. বুদ্ধিমান দূরভাষ-যন্ত্র। আজ্ঞে হ্যাঁ স্মার্ট ফোন। যে শ্যামের বাঁশি বাজলে রাধার মতই তার সম্মোহিনী ডাক কে উপেক্ষা করা অসম্ভব। শয়নে স্বপনে জাগরণে আমাদের নিত্যসঙ্গী। কেতাদুরস্ত অ্যান্ড্রয়েড ফোন যার তাৎপর্য্য হার মানায় অক্সিজেন কেও। গ্লোবালাইজেশনের যুগে, এর প্রয়োজনীয় তা অনস্বীকার্য। আঙুলের একটা ছোঁয়া মহাবিশ্বকে চোখ এর সামনে নিমেষে হাজির করে। মেটায় সব জিজ্ঞাসা । কাঁটাতারের বেড়াজাল যেখানে পৃথক করে রেখেছে বিশ্বের সব দেশকে, সেখানে এই অন্তর্জাল তৈরী করেছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিলনের মহা প্রাঙ্গন। বিশেষতঃ এই নিউ নরমাল এ সে সর্ব ঘটে কাঠালি কলা। অ্যান্ড্রয়েড আর ইন্টারনেট এর মানিক জোরের জয়জয়কার সর্বত্র। তবে কখন যেনো আমাদের মনন চিন্তা সত্তা সব কিছু কে এই ইন্দ্রজালিক শক্তি চারিদিক থেকে আবদ্ধ করে ফেলেছে। সে জাল কেটে বেরোনো দুরুহ। সে নেশায় বুদ আপামর জনগণ। কোথায় এবং কখন প্রয়োজনীয়তা কে ছাপিয়ে গেছে বিনোদন সে খবর কেউ রাখেনি।
বিশ্বব্যাপী সম্মোহন বজায় রাখতে তার আছে কিছু সাকরেদ। আছে অতিনাটুকে ফেসবুক। বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ সেখানে কাচকলা নয় বরং এক অমোঘ পরিতৃপ্তি । আছে গল্পদাদু হোয়াটস অ্যাপ্। আছে বাকবিতন্ডি টুইটার । আর সবজান্তা ইউটিউব। সিধু জ্যাঠা গুগুল যদিও কিছুটা কাজের।
স্মার্টফোন ও তার স্মার্ট নেস দেখাতে পিছপা হবে কেনো । ফোনের চেয়ে ক্যামেরার ভূমিকা তার বেশি। সেখানে সৌন্দর্য্য আকৃতি প্রকৃতি বহুগুণে বাড়িয়ে কমিয়ে নিজের এডিটেড ভারসন পৃথিবী কে দেখানো যায়। আগে জানলে গ্রাহাম বেল্ টেলিফোন নয় ক্যামেরা আবিস্কার এই মন দিতেন বোধ হয়!
ভারচুয়াল হতে গিয়ে আমরা ভাবতে ভুলে গেছি। গতিময় হয়েছি কিন্তু হারিয়ে গেছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। ইমোজি দিতে শিখেছি কিন্তু ইমোশন হারিয়ে ফেলেছি।
আমরা রক্ত মাংসের মানুষ, আমাদের চালনা করে মস্তিস্ক, জিন, হরমোন সেগুলি কে যন্ত্রের দাস বানিয়ে ফেললে ক্ষুন্ন হবে আমাদের অভিব্যক্তি অভিযোজন। উন্নতির সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই যন্ত্রের হাতের পুতুল না হয়ে, হাতের যন্ত্রটিকে তার সীমিত গন্ডিতে রাখা টাই শ্রেয়। মাদকতার এই গড্ডালিকা প্রবাহ স্রোতের বিপরীতে, শুভবুদ্ধি ও সৃজনশীলতা কে আকড়ে ধরে মানব জাতি এগিয়ে যাক প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির নীল দিগন্তে।
বিঃ দ্রঃ : লিখন ও পঠন , সৌজন্যে সেই স্মার্টফোন!
বাহ্।
খুব সত্যি কিন্তু এই প্রবাহে গা না ভাসিয়ে উপায়ও নেই।