উৎসব
থোর বড়ি খাঁড়া আর খাঁড়া বড়ি থোরের জীবনে ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতো উৎসব আসে | সে আসবে বলে আমরা অনেক আগে থেকেই তৈরী হতে থাকি একটু একটু করে | কয়েক মাসের খরচ কয়েক দিনে খরচ করেও যেন আফসোস হয় না | কিছুটা কৃপণতাকে সরিয়ে অকৃপণের সাথে মিলিত হওয়ার খুশি | উৎসবের মেজাজই এমন |
কালের নিয়মে এবারও আশ্বিন এসেছে। কাশ ফুটেছে।নীল আকাশের ঘুম ছুটিয়ে শরৎ উঠোনে পা রেখেছে।মা আসছেন। কিন্তু এবারের ছবিটা আমাদের কারোরই পরিচিত নয়। রোজ- ই আপনজন হারানোর বেদনা আমাদের কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। হাজারে হাজারে নতুন করে করোনা সংক্রমণ। প্রিয়জন যারা দূরে আছে বা কাছে– তাদের জন্য ভয়ংকর উৎকণ্ঠা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস — বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করতে বাড়ির বাইরে পা রাখতে আতঙ্কিত।
এদিকে বহু মানুষ কর্মহীন , তাদের হাতে টাকা নেই। যাঁরা একসময় বাজারে ব্যাগভরে রোজ বাজার করতেন তাদের অনিয়মিত বাজারে যাওয়া বুঝিয়ে দেয় সমাজের আর্থসামাজিক চিত্র। তার ওপর সবজি থেকে মাছ সবকিছুর দাম আকাশ ছোঁয়া। মনে উৎসবের রেশ কোথায় ? বরং গলার কাছে দলা পাকানো কষ্ট। এর মধ্যে দোকানে দোকানে ঘুরে নতুন পোষাক কেনা , প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে প্রতিমা দর্শনের কথা ভাবতেই পারছিনা। আমার তো ভয় করছে এই ভেবে যে , বেশী উৎসাহী মানুষের এই সময়ে লাগামছাড়া ঘোরাঘুরির ফলে সংক্রমণ বেড়ে না যায়!
সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ, ঘরে আপনজনদের সাথে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করুন।সবাই সুস্থ থাকুন।এবছর কিছুই তো আগের মতো নেই। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। পড়াশোনা পরীক্ষা সবকিছু ঘেঁটে গেছে। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বহুতলমলগুলো বন্ধ। সিনেমাহল বড় বড় হোটেল রিসর্ট সব বন্ধ।এসবের মালিকরা নিজেদের সর্বস্ব দিয়েও হয়তো কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে এই ব্যবসা করতে এসেছিলেন তাদের কী অবস্থা ! ভাবুন তো , এসবের সঙ্গে কত কত মানুষ যুক্ত ছিলেন তারাও পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছেন।
এই অবস্থার জন্য আগে থেকে আমরা কেউই তৈরী ছিলাম না। পরিস্থিতি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিচ্ছে।বহুদিনের সংস্কার ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম সব কিছুই এই সময়ে দাঁড়িয়ে মূল্যহীন।করোনায় মৃত সব ধর্মের মানুষের জন্য একই নিয়ম। প্রিয়জনের মুখাগ্নি হবে না ।এমনকি হাসপাতালে ভর্তি র পর যতই আদরের জন হোক না কেন দেখা করা যাবে না। যদি ভাল হয়ে যায় তো ঠিক। তা না হলে দেখা হওয়ার সুযোগ নেই।
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে যাঁরা মরছে কষ্টে আছে তারা মানুষ।এই পরিস্থিতি আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষের একটাই ধর্ম । তার নাম মনুষ্যত্ব। এভাবেই জগতের নাথ হয়তো আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন– সব মানুষ এক। সে যে দেশেই থাক। যে মতেই থাক। বসুধৈব কুটুম্বকম্।
জগতের নাথ নিশ্চয়ই একদিন এই রাতের তামস কাটিয়ে নতুন দিন আনবেন। ইতিমধ্যে তিনি আর কী কী শেখাবেন তা তো তিনিই জানেন।
আমরাও সেদিনের আশায় রইলাম।
বাঃ। সুন্দর নিবন্ধ। সব মানুষের মঙ্গলকামী রচনার জন্য লেখিকা ধন্যবাদার্হ। অবশ্যই ধন্যবাদার্হ সম্পাদক মন্দিরা গাঙ্গুলীও তাঁর নিত্য নতুন বিষয় নির্বাচনের জন্য।
সহমত আপনার সঙ্গে।বিষয় নির্বাচন এবং লেখনী উভয়ের প্রতি আমার সম্মান জানালাম।
আসুক ভালো দিন আসুক তারপর আবার উৎসব করব। এই বছরটা থাক।