কবিতাঃ চিরশ্রী দেবনাথ

পৃথিবীর এক গভীর দুঃসময়ে কোথাও কোথাও নতুন দ্বীপের জন্ম হয়, এই খবর কোন নিউজ চ্যানেল  দেখায় না, হয়তো ঝড় থাকে চারপাশে তবু কারা যেন সেখানে একটি মোম জ্বালিয়ে স্বপ্ন দেখে, কখনও নিভবে না আলো, আমিও সেই স্বপ্ন দেখি, একে কি আদর বলে, জড়িয়ে ধরা বলে, ভেসে যাওয়া বলে জানি না তো ! তবুও বিচ্ছিন্ন পংক্তিতে হারিয়ে না যাওয়ার স্বপ্ন শুধু আমাদের জন্য থাক। 

 পৌঁছে যেও নিঃসঙ্গ পারিজাত বনে
চিরশ্রী দেবনাথ  

আগামীকাল নির্ভয়ার দোষীদের ফাঁসি
হয়তো এসব লিখতে লিখতে তারা পৌঁছে যাবে
নির্ভয়ার কাছে অবশেষে
রক্তের দাগহীন একটি ধবধবে সাদা শাড়ি পরে নির্ভয়া কাঁদছে
জ্যোস্নালালিত স্বর্গে, পারিজাত বনে
যন্ত্রণা কমেনি তার, শুধু রক্তের দাগ মুছে গেছে
প্রতিদিন তাঁর রক্ত ছুটে ছুটে চলে যায়
অন্য আরেক একটি যন্ত্রণার কাছে,
ফেসবুকে ছবি আপলোড হয়,
গোটা দেশ পোড়া গন্ধ নিতে নিতে রাতের খাবার খেয়ে ফেলে

তার দুদিন পর ব্ল্যাক আউট, একটি নিরপরাধ মহামারী
 ইরানে বিমান থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে মানুষের লাশ
নীচে গর্ত, ঝটপট কবর, সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা,
স্বজন কোথায়?  হে মৃতদেহ ! প্রিয়ার হাত?
 ভাইরাসের কাছে চলে গেছে সব অলিখিত
গোপন মেসেজ, সতর্কবার্তা,
 শাট ডাউন পৃথিবী ! শাট ডাউন!
  অনেক হয়েছে, নিস্তব্ধ হও নিজের কাছে
চুপচাপ পাঠাতে থাকো ভালোবাসার কবিতা, শেষবারের মতো
জানো তো ভালোবাসা নিঃস্তব্ধ থাকতে ভালোবাসে, হয়তো নিঃসঙ্গও,
 তাই নিজের কাছে লালন করে বিষাক্তজীবাণু, প্রতিষেধকহীন, 

বাজার থেকে কিনে নিতে পারো “মোকাবিলা “
 ফোন করে বলে দাও সবাইকে …
“আমাদের বাড়ি এসো না “
আমরা অস্ত্রহীন হয়ে খুঁজে পেয়েছি সাদা কালো
লুডোর ছক্কা,
কিছু অবসর 

এখন আমার পালা, দক্ষ খেলুড়ে নই, পরাজয়ে বিশ্বাস রাখি
পৃথিবীর বেঁচে থাকা বৃক্ষকে সাক্ষী করে বলছি
কোনদিন তেমন কিছু চুরি করিনি,
শুধু জমিয়ে রেখেছি নদীর জল, কিছু শায়েরি,
রুবাইয়াত আর মেধাবী চাকর।
অস্ত্র কিনতে কিনতে ভরে ফেলেছি সিন্ধু
সভ্যতার বাড়িঘর

চালু থাক ইন্টারনেট, বসন্তের গান,
প্রেমের ছড়া আদ্যোপান্ত রহস্যহীন
তুমিও তো ফিসফিস করে বলো
হ্যান্ডওয়াশ দরকার খুব,
গলা জ্বালা করছে, শ্বাসকষ্ট
অথচ শেষ হচ্ছে না, লতা – রফি মিউজিক নাইট
এখনো মানুষের কাঁদা বাকি, হাত তুলে নাচ করা বাকি
গেন্দাফুলের মালা নিয়ে চোখ টেরিয়ে টেরিয়ে তাকাচ্ছে
গণপ্রজাতন্ত্রী দেশের চালু যুবক
তাতেই নাকি দ্বিখণ্ডিত তেজী  “কোভিড ১৯ “

এই অবাঞ্ছিত মার্চ মাস শেষ হয়ে গেলে
সকল স্থগিত উৎসবে আমাকে নেমতন্ন করো
আমি পৌঁছে যাবো দ্রুত, পকেটে বেকারত্ব, বিপন্ন অর্থনীতি,
কিছু আকাশী রঙের ছাড়পত্র, তাতে ঈগল আঁকা
ডানা দিয়েছে আমাকে, পারো নি বুঝতে?
নখ, দাঁত দুর্বল হয়ে গেছে, ডানায় চড়ে খুঁজতে যাবো
অলৌকিকের ঠিকানা

গরীব মেয়েরা তাকিয়ো না, আমিও খুব গরীব,
শুধু হৃদয়ে মোহর ভরেছি বলে, ঝকঝক করে উঠি শেষ বিকেলে
একটি গভীর কবর আমিও খুঁড়ছি প্রতিদিন
ভয় হয় জড়াতে, ভয় হয় ছাড়তে,
ভয় হয় কথা বলতে,
যদি জড়িয়ে যাই
যদি নৃশংস যক্ষ এসে দেখে ফেলে সুতীব্র আলিঙ্গন
আসলে তো হাত নেই, পা নেই, নিঃশ্বাসও নেই
পাথরের ভাস্কর্য গড়ে দিয়ে মরে গেছে বিখ্যাত ভাস্কর

তবুও স্পর্শ চাই না, দূরে যেতে যেতে
পৃথিবী থেকে বিনা অপবাদে চলে যেতে চাই
চৈত্র কুয়াশার ভেজা কিংশুকে ঘুমিয়ে আছে পেনডেমিক !
একথা বিশ্বাস করি না,
যাক মানুষ মৃত্যু পেয়ে ধর্ম ভুলেছে কিছুদিন,
ধার করা আলোতে টিমটিম করে জ্বলছে দেবতার গৃহ
প্রার্থনা না করে মানুষ অবলীলায় শরীরে ঢোকাচ্ছে সূঁচ
জীবন খুব ভালোবাসে সবাই, আমিও কি?
অন্যমনস্ক বিচরণ ছেড়ে হয়তো
আমিও কোথাও যেতে চাই না।
খুলে ফেলতে চাই তাবৎ বাহু ডোর,
মহামারীতে আক্রান্ত লোককে
গুলি করে মেরে দেওয়া হয়,
তবুও মধ্যরাতে আমি লিখি
শেষরাতে মৃত্যুদণ্ড
মেয়েটিও রাজপথে ছিল গভীর রাতেই
শাট্ ডাউন পৃথিবী ! আপাতত…

লেখার সময়ঃ রাত : ১:৪০, বৃহস্পতিবার, ১৯/০৩/২০২০

5 thoughts on “কবিতাঃ চিরশ্রী দেবনাথ

  1. এক অন্যমাত্রার লেখা। কয়েকটি লাইন দারুণ প্রশংসনীয়। তারমধ্যে একটি ‘ শুধু হৃদয়ে মোহর বলেছি বলে ঝকঝক করে উঠি শেষ বিকেলে’ আমার খুব ভাল লাগল।❤️💐🙂

  2. অনেক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ কবিতাটি।ভাল লাগল।

Leave a Reply to Chirasree Debnath Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *