তিনটি কবিতাঃ স্বপন ভট্টাচার্য

তিনটি কবিতাঃ স্বপন ভট্টাচার্য

টোপ

মাংসে ফুটেছে কাঁটা, জিভ ধরে এসেছে আঠায়
গর্হিত ফুলের থেকে খসে যায় ঘামে ভেজা মধু
খাঁচার ভিতরে টোপ ওত পেতে বসে আছে, মৃত
নখর পরান্মুখ, সেখানে ফুটেছে ফুল, ঈষৎ ছোঁয়ায়
কূটযন্ত্রে পড়ে আছে মৃতবাস। ভক্ষ্য সে যদিও বা হয়,
তার চোখে জেগে আছে রাতটির নাম লেখা তারা।
#
জানে না বিপন্ন বাঘ কোথা থেকে শুরু করা যায়,
ক্ষুধাও কামুক তবে গায়ে তার ধূপের নির্যাস
চালচিত্র উপরন্তু পিয়া ভোলো বন্দিশে খাঁটি সনাতন
টোপের শরীর থেকে নির্ভুল ভেসে আসে অগরুসুবাস
#
হয়ত জীবিত টোপ, দূর থেকে মনে হয় মৃত,
তথাপি নখর আজ চায় অগ্নি হতে, মাংসে প্রোথিত।
সে যদি রক্ত দেয়, বাঘ তাকে দিতে পারে সঞ্জীবন জল
শীতঋতু ডাক দিলে বাঘ কেন বন্দী হবে টোপের খাঁচায়?
*


বেডরুম

একটা বালিশের থেকে পাশের বালিশটার দূরত্ব
ঠিক কী এককে মাপা যেতে পারে তা নিয়ে
অনেক ভেবেছি আমি। দেখেছি এ দূরত্ব কখনো
একটা মোবাইল ফোনের মত। কখনো একখানা
ভাঁজ করে রাখা চশমার মত। কখনো দূরত্ব
রচনাবলীর চতুর্থ খন্ড, কখনো জীবনানন্দ দাশ ।
একটা বালিশের থেকে পাশের বালিশটার দূরত্ব
কখনো পৃথিবীর দুটি গোলার্ধের, কারো দিন
কারো মধ্যরাত, তবু একসাথে শুয়ে আছে তারা
ঠোঁটের মধ্যে ঠোঁট এমনও দেখেছি এক আধবার।
একটা বালিশের থেকে পাশের বালিশটার দূরত্বে
রয়ে গেছে একটা টেকটোনিক ফল্ট। সেটা মাঝে মাঝে
অতলের টানে খুব কাছাকাছি এলে, দেখেছি বিস্ফোরণ হয়,
রিখটার স্কেলের মাপে ধরা যায় না এমন কম্পন অনুভূত হয়
দুটো বালিশের মাঝামাঝি। কখনো কখনো এই ফল্টলাইনের
দুপাশে দুটি মহাদেশের জন্ম হয় রাতে,সকালে আবার তারা
হয়ত মিলিয়ে যায়, ডুবে যায় টেথিসের জলে।
#
দুটো পাশাপাশি শুয়ে থাকা বালিশের কেন্দ্রীয় দূরত্ব
তাদের মধ্যেকার সংক্ষিপ্ততম রেখায় মাপার চেষ্টা করে
দেখেছি প্রায় কখনোই তা সরলরেখা নয়। তাছাড়া ইদানীং
দেখছি চশমা,মোবাইল ফোন, রচনাবলীর মত অন্তর্বর্তী
উপাদান সব ঘুমিয়ে কাদা, দুখানা বালিশ জেগে আছে।
*

এখনই

যা বলার এখনই বল। এইখানে।
পরে আর কথা থাকবে না। শ্বাসবায়ু।
যদি জন্মাতে চাও
তবে এখনই জন্মাও।
পরে আর গর্ভ থাকবে না।
যদি স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে ভাবো
এখনই অতীতে চলে যাও।
নিজের ছায়াকেও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবো।
স্মৃতি বা জীবন
অনিবার্য হেঁয়ালির মত কক্ষান্তরে চলে যাবে।
#
যদি ফিরে আসতে চাও
তবে এখনই ফেরো।
সমস্ত প্রত্যাবর্তন অতঃপর
বরফের স্তুপে চাপা পড়ে যাবে ।

2 thoughts on “তিনটি কবিতাঃ স্বপন ভট্টাচার্য

  1. তিনটি কবিতার পৃথক শরীর যেন কোথাও মিলেমিশে একটিই দীর্ঘ কবিতা; কোথায় মিশেছে, সে রহস্যই কবিতার শক্তি। চমৎকার

  2. তিনটি কবিতাই গভীর অর্থবহ। অসাধারণ।

Leave a Reply to Dr. S K Mukhopadhyay Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *