শঙ্খ ঘোষ বাংলা কবিতার কবিদের কবিজ্যোতিষ্ক ,নক্ষত্রপুরুষ শতসহস্র সূর্যোদয়
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়
ছিল নেই মাত্র এই ,…আর সব ধ্যান ধান নষ্ট হয়ে যায়…
এভাবে শুরু করা যেতে পারে এই রচনা
কেননা …ছিল নেই মাত্র এই …শুধু এই কথা
টুকুর মধ্যে কতকিছু যেন বলা আছে ,
কবিতা আমাদের সংহত হতে শেখায
কবিতা কি,কবিতা কেন?
এরকম অজস্র প্রশ্নের মাঝখানে দাঁডিয়ে বলা যেতে পারে নির্মানে অচল বহুরৈখিক সচেতন প্রযাস ,কেউ কেউ বলে চলেছেন কবিতাকে সাবজেক্টিভ থেকে অবজেক্টিভ করার কথা …
কেউ কেউ আবার বলছে ,art for art sake ..কবিতা শুধু কবিতার জন্যেই .
অন্যদিকে পরীক্ষা নিরীক্ষাও চলছে …সেখানে অজস্র বিশেষ্যকে ক্রিয়াপদীয করণের ঝুঁকি
নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন ,নগরাযন শিল্পাযন
ক্যানোনাযন সংকরায়ন ইত্যাদি টার্ম ব্যবহার
হচ্ছে,হোক না তাতে কি ?
তাহলে প্রশ্ন একটাই কবি কি বাস্তব থেকে মুখ
ঘুরিয়ে থাকবেন …
শঙ্খ ঘোষের উপরোক্ত কবিতাটি যতই ফিলজফিক্যাল হোক না কেন তিনি বাস্তবকে
ফেলে দিতে পারেন নি ,গর্জে উঠেছে তার কলম
সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবি ,না বলা কথা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার কবিতার মধ্যে …
যেমন ধরা যাক এই কবি তায়
হিমালয়ে গেঁথে থাকে তিন খন্ড ত্রিশূলের মুখ
…শামুখ,শামুখ শুধু দেশজোড় শামুখ শামুখ …ইয়ে তো পহেলা ঝাঁকি হ্যা… /হাওয়ায় হাওয়ায়
ঝাঁকি …
অক্ষরেে অক্ষরেে জাগুআর /স্বপ্নের ভারতবর্ষ স্বপ্নের ভেতরে অন্ধকার …ছয় ডিসেম্বরের ছবি
দাঙ্গার ছবি মনে চলে আসে ,উল্লাসেে বলা সেই কথা যেন মূর্ত হয়ে ওঠে কবিতাজুড়ে শামুখ…শামুখ …
সত্যিতো যে দিকে তাকানো হয় শুধুই শামুখ ,মানুষ কোথায়? চারিদিকে যেদিকেই তাকাই অমেরুদণ্ডী সব,কোথাও মানুষ নেই।
সত্যি রক্ত গরম হয়ে যায়…বিরাট গণতন্ত্রের এই দেশে কোথায় গণতন্ত্র আজ?সেখানে কবিতার জ্ঞানগর্ভ হাইপারলিঙ্ক কিংবা ডিসকোর্সের ডিকনস্ট্রাকসান অথবা অবিনির্মাণ সব একাকার হয়ে যায়…তাই না ?তখন কোথায় থাকে কবিতার ব্যাকরণ।
……………………..
ছিন্ন হাত,ছিন্ন শরীরের অংশ,ছিন্নমাথা পড়ে থাকে যেন সর্বনাশ হয়ে…
পঞ্চাশের এই কবিই লিখছেন এক জায়গায়
…নারায়ণ নয়,আমি পেয়ে গেছি নারায়ণী সেনা /যতদূর যেতে বলি যায়এরা,কখনো আসে না/…
ভাবলেশহীন ধ্বংস হাতে ছুটে যায়/যদি বলি দিন এরা বলে দেয় দিন /যদি বলি রাত বলে রাত…
শাসকের এই দম্ভ ,এই বিবেককে পদদলিত করার হুঙ্কার ছেয়ে ফেলে সারাটা দেশ ,মাস্তানবাহিনীর ছবি ফুটে ওঠে …যেখানে আমিই শেষ কথা …আমিই আসমুদ্র হিমাচল …
পেশী শক্তি ই তখন শেষ কথা ।
আর সব ধ্যান ধান নষ্ট হয়ে যায় ।
ছুরি বা কালো গগলস পরিহিত কয়েকজনকে
পাঠক দেখতে পাচ্ছেন ,এই অন্ধ প্রভুত্ব …এই সব অনুগত ক্রীতদাসের দল এমন কিছু নেই যে করতে পারেনা তখন…
খুব অল্প পরিসরে কবিকে ধরা বাতুলতা মাত্র ।
প্রতিবাদ প্রতিরোধ তার কবিতার অঙ্গ ঠিক ই কিন্তু
প্রকৃত কবিতার যে মূল সুর তা কখনোই ব্যাহত হয়ে নি।
কবি শঙ্খ ঘোষ সর্বদাই চলমান সম য় থেকে চিরসময়ের দিকে তাকিয়ে থেকেছেন।এগিয়ে থেকেছেন।মেধা ও মনীষা তাকে সর্বদাই এগিয়ে রেখেছে।
…ও যখন প্রতিরাত্রে মুখে নিয়ে এক লক্ষ ক্ষত
আমার দরজা খোলা পেয়ে ফিরে আসে ঘরে
দাঁড়ায় দূয়ারপ্রান্তে সমস্ত বিষের স্তব্ধতা য়
শরীর বাঁকিয়ে ধরে দিগন্তের থেকে শীর্ষাকাশ
আর মুখে লেগে থাকে লক্ষ লক্ষ তারার দহন …
এমনকি প্রতিবাদ যেখানে করার দরকার সে পর্যন্ত পৌঁছয় না সে প্রতিবাদ: ..
আগুন ই. কোথাও নেই _কী হব ঐ বা জ্বালানীর খোঁজে. .
সে
জন্য এক জায়গা য় এও আমরা লক্ষ্য করি
…এত যদি ব্যূহ চক্র তীর তীরন্দাজ তবে কেন
শরীর দিয়েছো শুধু বর্মখানি ভুলে গেছ দিতে?…
এখানেই কবি শঙ্খ ঘোষ অনন্তকালের এবং অননুকরণীয় ।আসলে এও এক ধরনের সম্প্রসারণ
আকাশ ভূমি জল …কবি যেন লিখে চলেছেন শত দুর্ঘটনা ঝড় উপেক্ষা করে ।কোনও কিছু ই তাকে টলাতে পারছে না।
অন্ধকার ঘরে মোম জ্বলছে।
…কালপুরুষের নিচে মাথা তুলে দাঁড়ায় শহর
যযাতি জীবন পায় মূর্ছিত পুরুর শিরোদেশে …
এইসমস্ত কবিতার মধ্যে মিথ এবং পুরাণের ব্যবহার দক্ষতা ও নিপুণতার সঙ্গে পরিলক্ষিত হ য় ।
আবার একটু অন্যদিকে শান্ত দৃঢ় এবং মূলস্পশী অভাবনীয় অকল্পনীয় নিখাদ শিল্পশাসন চোখে পড়ে।
……………?.?……..
যে দূর দূরত্ব নয় তার কোরকের থেকে দেখি
আমাদের মোহগুলি সঞ্চিত অধীর অন্ধকারে
বীজ হয়ে বেঁচে থাকে উৎসবে ব্যসনে দু:খ শোকে
এ যদি না সত্যি তবে কাকে আর সত্যি বলে লোকে …
আমরা যখন ক্ষমতার দম্ভ দেখি।যখন দেখি মানুষের উপর অত্যাচার শুরু হবে ।তবু আমরা নিস্তব্ধ থাকি।
আমরা প্রতিবাদ করিনা,আসলে করতে ভয় পাই ।
ক্ষমতার উৎস থেকে ক্ষমতার মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত
থাকে সেই হাত।
শঙ্খ ঘোষের লেখা আমাদের সেই দিক নির্দেশ করে।আমাদের সতর্ক করে ।
নিশ্চিত যে তার কবিতার আরো বিস্তৃতভাবে আলোচনার সুযোগ পাবো একদিন ।
এখন এখানে শেষ করছি স্মৃতি নির্মিত এই প্রবন্ধ ।