গান্ধীজীও হত্যা করেন
পার্থ রায়
সেদিন মাস পয়লা। প্রথম রবিবার। মাটন ডে। ভাবছেন সে আবার কোন ডে? আহা, চকোলেট ডে, টেডি বিয়ার ডে, আইসক্রিম ডে কত রকমের ডে আছে। ৩৬৫ দিনই তো এক একটা ডে। মাটন ডেই বা না হবার কী আছে? যাই হোক, বাজারে ঢোকার মুখেই বাধা। “ও, পার্থবাবু শুনছেন?”। শুভ কাজে পিছু ডাক। বিরক্তির এক শেষ। ভাল্লাগে? মাংসের দোকানে লাইন দিতে হবে। দেখে শুনে গর্দান না হলে রান। কিছু সলিড মাংস, কিছু হাড়। তবেই তো সেই মাংসের স্বাদ। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি বটুকবাবু। স্বভাব শান্ত মানুষটা প্রবল উত্তেজিত হয়ে আছেন। কী করে বুঝলাম? চোখ মুখ দেখে একটা মানুষের মনের অবস্থা না বোঝার মতো বোকা না কি আমি? এই যাহ! কথায় কথায় বটুকবাবুর পরিচয়টা দেওয়া হয়নি। বটুকবাবু মানে বটুককেশ্বর দত্ত এলাকার একজন সুপরিচিত অভিজ্ঞ শিক্ষক। তায় আবার যে সে বিষয়ের নয়। ইংরেজির। ওনার হাত দিয়ে বের হওয়া এমন বহু ছাত্র ছাত্রি দেশে বিদেশে ছড়িয়ে আছে। কেউ কেউ আবার রীতিমত হোমরা চোমরা। কেউকেটা। ইংরেজিতে যাকে বলে বিগ গান। এহেন মানুষটা সাত সকালে এমন রেগে আছেন কেন বোধগম্য হলনা। যথেষ্ট ভাবনার ব্যাপার। এমনিতেই মাস্টারমশাইদের রাগ করতে দেখলে আমার স্কুল বেলার কথা মনে পড়ে। ওরে বাবারে। কত রকমের শাস্তি। স্ট্যান্ড আপ অন দ্য বেঞ্চ, বেত্রাঘাত, নিল ডাউন, দুই আঙ্গুলের মাঝে পেন্সিল ঢুকিয়ে চাপ দেওয়া। কতো রকমের যে কায়দা কানুন জানতেন তখন মাস্টারমশাইরা। মিথ্যা কথা বলার অপরাধে ভূগোলের সাহাবাবুর হাতে পশ্চাতদেশে বেতের বারি। কম অভিজ্ঞতা আমার? ছোট ক্লাসে থাকার সময় ক্লাস টিচারকে আপনি না বলে তুমি সম্বোধন করার জন্য স্কুল ছুটির পরে আধ ঘণ্টা ডিটেইন্ড থাকা, ক্লাস চলাকালীন গল্প করার জন্য বেঞ্চের ওপর ক্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকা। এসব কি জনসমক্ষে বলার কথা? বলা যায়? না বলা উচিত? অবশ্য শাস্তি দিলেও মাষ্টারমশাইরা ছাত্রদের ভালবাসতেনও। আর বিদ্যা দানের ক্ষেত্রে তাঁদের নিষ্ঠা? অসামান্য, অসাধারণ, দুর্দান্ত মানে যত রকমের ভাল ভাল বিশেষণ আছে, সব প্রযোজ্য। অথচ কতো কম মাহিনা পেতেন সেকালের শিক্ষকমশাইরা। ছাত্রদরদী শিক্ষক ছিলেন তাঁরা। শ্রদ্ধেয় কবি কালিদাস রায়ের “ছাত্রধারা” পড়লে উপলব্ধি করা যায়। কবিতাটা পড়লে তখনকার দিনের মাষ্টারমশাইদের সম্বন্ধে একটা সম্যক ধারণা গড়ে ওঠে। বটুকবাবুকে দেখলে কেন জানি আমাদের সময়ের সেসব স্যারদের কথা মনে পড়ে যায়। আসলে উনিও তো ধূতি পরেন। কখনও সাদা হাফ শার্ট, কখনও ফতুয়া আর অবরে সবরে ফুল হাতা শার্ট কিন্তু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো কনুইয়ের ওপর পর্যন্ত ভাঁজ করা। আর শেখানোর আন্তরিকতার তো কোন তুলনা হয় না।
যাই হোক, যা বলছিলাম। আমাকে দেখেই মুষ্টিবদ্ধ হাত আমার নাসিকার খুব কাছে এনে বললেন, “বুঝলেন পার্থবাবু, এখনকার প্রজন্ম গান্ধীজীকেও হত্যাকারী বানিয়ে ছেড়েছে”। শুনেই মনে হল ৪৪০ ইনটু ২ মানে ৮৮০ ভোল্টের কারেন্ট আমার মাথার চুল থেকে পা অবধি বয়ে গেল। মনে মনে বললাম, “সাত সকালে বলে কী? আহারে! ছোট ছোট ফুলের মতো শিশুদের বিরুদ্ধে এ কেমন কথা? কী সাংঘাতিক অভিযোগ! শরীরে মায়া দয়া বলে কিছু নেই? গান্ধীজী শিশুদের কত ভালবাসতেন”। আশপাশে তাকিয়ে দেখে নিলাম কেউ ওনার কথা শোনে নি তো? মিছিলে যে ভাবে স্লোগান দিতে দিতে হাত ছোঁড়ে ঠিক সে ভাবে মুঠো করা হাত আমার নাকের কাছে এনেছিলেন। মাথাটা দুই ইঞ্চি নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিলাম। যতই সম্মানীয় শিক্ষক হোক, আমার নাকেরও একটা মূল্য আছে। আমার কাছে আমার নাক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। নাকের তো কোন স্পেয়ার পার্টস থাকে না। নাক তো আর গাড়ির চাকা নয়। যে একটা পাংচার হয়েছে তো স্টেপনি দিয়ে খুলে আর একটা লাগিয়ে দিলাম। তাছাড়া আমার শ্বাস প্রশ্বাস সবই তো এই একটা মাত্র নাসিকা দিয়েই হয়। সবারই তাই। হ্যা, এটা ঠিক অনেক সময় আজে বাজে গন্ধ সুট করে বিনা অনুমতিতে নাসারন্ধ্র দিয়ে ঢুকে পড়ে। আবার এটাও তো সত্যি। পাড়ার সত্যনারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের জিলিপি ভাজা, কড়াই থেকে ওঠা ঘি চাঁছা গন্ধ, তারপরে শীতের নলেন গুড়ের রসগোল্লার গন্ধ মস্তিস্কে পাঠানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটা তো শরীরের এই বিশেষ অঙ্গটাই করে। অথবা রবিবারের গরমাগরম মাটন, হাফিজের বিরিয়ানি, কেষ্টর দোকানের ফিশফ্রাই, বাড়ির পায়েস জ্বাল, হিমসাগর আম, গলদা চিংড়ি ভাজা, ইলিশ পাতুরির “খাই, খাই”, “এখনই খা, এখনই খা” গন্ধও তো এই একটা মাত্র দরজা দিয়ে ঢুকে মনে আনন্দ, জিবে রস আনে। তাই না? যেটা সত্যি সেটা বাপু চেপে না রেখে বলে ফেলাই ভাল। ধাতস্ত হয়ে বললাম, “কী হল মাস্টারমশাই? কিছু বোধগম্য হলো না যে”।
“বোধগম্য তো আমারও হয় না। এতো এতো নাম্বার পায় কী করে এরা? ভাবতে পারেন ইতিহাস, ভূগোল, ইংরেজি, বাংলায় নব্বইয়ের ওপরে নাম্বার পাচ্ছে। স্টার। ওই যে কী বলে এখন সুপারস্টার, মেগাস্টার। যত্তোসব!”।
ধোঁয়াশা রয়েই গেল। কেমন জানি সব ঘেঁটে ঘণ্ট হয়ে আছে। একেই রবিবার ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়। তারপরে যদি বাজার নিয়ে বেলা বারোটার সময় বাড়ি ফিরি, গিন্নী আস্ত রাখবে? আধ সেদ্ধ মাটন চিবুতে হবে। কিন্তু বটুকবাবু একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। কোন এলি তেলি গঙ্গা তেলি নয় যে ঝেরে ফেলে কেটে পড়ব। আমার ছেলে মেয়ে দুটোও ওঁর কাছে ইংরেজি শিখেছে। খুব যত্ন করে পড়িয়েছেন। এখনও ওরা স্যারের কথা উঠলেই দেবতা জ্ঞানে কপালে হাত ঠ্যাকায়। সন্দেহ নেই বড্ড ভাল, আদ্যোপান্ত সৎ একজন শিক্ষক। স্যারকে ঠাণ্ডা করতে হবে। উনি তো আর বাচ্চা নন যে মাথা ঠাণ্ডা করতে বালতি বালতি জল মাথায় ঢেলে দেব। অথবা বাড়ির গিন্নী নয় যে ব্রহ্মতালুতে আইস ব্যাগ ঠেসে ধরব। গুরুজন, সম্মানীয় মানুষকে ঠাণ্ডা করার জন্য যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হয়। খুব মেপে, বুদ্ধি করে প্রতিটি স্টেপ ফেলতে হয়। তবে অমন মাথা ঠাণ্ডা হবে। মনে নেই? সেই যে মহাদেবের মাথা ঠাণ্ডা করতে বিষ্ণুকে কতো ক্লিকবাজি করতে হয়েছিল। এক, দুই, তিন পিস না, সতীর দেহকে একান্ন পিস করতে হয়েছিল। ভাবলেই হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। তাই খুব রয়ে সয়ে এগুতে হবে। অনেক ভেবে চিন্তে মনে হল হয়তো সকালের প্রথম চা টা পান করা হয়নি। যদি তাই হয়, তাহলে কিন্তু রাগ করার যথেষ্ট কারণ আছে। একজন চাখোর অন্য আর একজনের চা না পাবার কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। সবাই পারে না। খুব নরম করে বললাম, “আসুন না স্যার, একটু চা খেতে খেতে আপনার কথা শুনি। বুঝতে পারছি আপনি খুব রেগে আছেন। আপনার মতো শান্ত মানুষ যখন রেগে যায়, তখন কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে নিশ্চয়ই। এবার বলুন। গান্ধীজীর কথা কী বলছিলেন। ইয়ে মানে গান্ধীজী আর হত্যা এক্কেবারেই একসাথে যায় না। শুনতেও ভাল লাগেনা”।
বাজারে ঢোকার মুখে নিমাইয়ের চায়ের দোকানে বসে দুটো চা আর লেরে বিস্কুট অর্ডার করে বললাম, “স্যার, বসুন। চা খান”। স্যার কী বলেন তার জন্য একটু অপেক্ষা করি। একটু শান্ত হলেন মনে হল যেন। বুকে বল এল।
সুরুত করে একটু চা পান করে বটুকবাবু বললেন, “একটা জিনিষ খুব পরিষ্কার। আমি অন্তত মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। শেখার জন্য পড়তে হবে। পরীক্ষার জন্য নয় মোটেই। শেখার জন্য পড়লে শেখাও হবে, পরীক্ষায় ভাল নাম্বারও পাওয়া যাবে বৈকি। কী বলেন?”
বাধ্য ছাত্রের মতো এপাশ ওপাশ মাথা দুলিয়ে বললাম, “বটেই তো, বটেই তো”। মনটা হাঁকপাঁক করছে। মাংসের দোকানে লাইন দিতে হবে। গান্ধীজীর ব্যাপারটাও না শুনে যেতে মন চাইছে না। একেই বলে উভয় সঙ্কট। ডিলেমা। যাই হোক বটুকবাবু উৎসাহিত হলেন, “এখনকার ছেলে মেয়েদের মাথা মানে ব্রেইন খারাপ বলছি না। কিন্তু বড্ড উড়ুউড়ু মন। হবে না? মায়ের নাড়ি ছিঁড়ে বেরিয়েই মুঠোয় সেলফোন তুলে নিচ্ছে। বুঝলেন পার্থবাবু, আমি সাফ বলে দিয়েছি আমার কাছে পড়তে এলে ব্যাগে যদি মোবাইল ফোন দেখেছি তাহলে পত্রপাঠ বিদায় করে দেবো। ওদের অবিশ্যি দোষ নেই। হা করার আগেই সব পেয়ে যাচ্ছে। যেমন এখনকার এডুকেশন সিস্টেম, তেমনি হয়েছে বাবা মায়েরা। অ্যাত্তো অ্যাত্তো জিনিষ হোমিওপ্যাথিকের পুড়িয়ার মতো খাইয়ে দেবার প্রচেষ্টা। টিচারদের কাছে মা-বাবাদের চাহিদাও তেমনি। টার্মিনাল পরীক্ষায় এই এই চ্যাপ্টার আছে। আবদার পড়িয়ে দিতেই হবে। টার্মিনাল একজামগুলোর নাম্বার আবার যোগ হবে। কী সিস্টেম! অনাবশ্যক প্রতিযোগিতা। যত্তোসব!”।
চা আর দুটো লেরে বিস্কুট যে কথার বেগ মানে আবেগ এতোটা বাড়িয়ে দেবে আমি কি ছাই আগে জানতাম? ধৈর্য হারালে চলবে? গান্ধীজীর ব্যাপারটা বলেননি এখনও। এবার হয়তো বলবেন। গুরুজন মানুষ। তায় আবার ইংরেজির মাস্টারমশাই। বড্ড খটোমটো সাবজেক্ট। ইংরেজিতে do ডু কিন্তু go গু নয় কেন? বিজ্ঞান কত কিছুই তো আবিষ্কার করেছে, আজ পর্যন্ত পেরেছে এই রহস্যের সমাধান করতে? তবে? ভাবুন একবার।
আমার অবস্থাটা একবার ভাবুন। মাসের প্রথম রবিবার। রহমত জানে আমার কচি পাঁঠার মাংস পছন্দ। কচি পাঁঠা এখন দুষ্প্রাপ্য বস্তু। কথা দিয়েছে পৃথিবী এফোঁড় ওফোঁড় করে আমার জন্য নিয়ে আসবে। কিন্তু তাই বলে তো আর সবাইকে টপকে আমাকে দিতে পারেনা। তারপর কেউ যদি কচি পাঁঠাটাকে দেখে ফ্যালে? চেয়ে ফ্যালে? রহমত কি পারবে ঠেকাতে?
চা শেষ করেছেন। দেখি বটুক স্যার কী বলেন, “এই এডুকেশন সিস্টেমে প্রকৃত শিক্ষালাভ হয় না, পার্থবাবু। রোল খাবার মতো। খাওয়া হয়ে গেলে কাগজটা মুড়ে ফেলে দাও। কোন রেশ থাকল না। এখনকার পড়াশুনাটাও তেমনি। ২০ নাম্বারের পরীক্ষা। সকালে পড়ছে গরমাগরম। দুপুরে পরীক্ষা। বাড়ি ফেরার সময় থেকে ফিকে হতে হতে পরের দিন সকালে মস্তিষ্ক খালি। সব ফর্সা। আবার নুতন বিষয় মাথায় ঢুকছে। বুঝলেন না? সেভাবেই তো পড়েছে, এগরোল খাবার মতো। পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দিয়ে ওম শান্তি। কিছু করার নেই। শিশুদের, ওদের টিচারদের, অভিভাবকদের। কারুর কিছু করার নেই। যে শাসক যেমন চাইবে, তেমন চলতে বাধ্য সবাই”।
অকাট্য যুক্তি। মনযোগী শ্রোতার মতো মাথা নাড়লাম। কোন পাল্টা যুক্তির অবকাশ কোথায়? কিন্তু একটা দুশ্চিন্তা আমার বুকের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে যে। বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে। প্রবল বাহ্যি পেলে যেমন হয়। ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ওঠার আগে যেভাবে পাক খেতে থাকে। অনেকটা অমৃতির প্যাঁচের মতো। প্যাঁচের পর প্যাঁচ। তেমন করে বাহ্যি যদি পেটের মধ্যে পাক খেতে থাকে তখন কী উপায়? সিম্পল। সার্জিকাল স্ট্রাইক মানে ‘খাল্লাস’ করে দাও। মুক্তি দাও। ভাড়াটে উচ্ছেদ করে পেটের ঘর খালি করে দাও। তবে তো শান্তি। পৃথিবীর বৃহত্তম ত্যাগ সম্পন্ন হল। আমার মনেরও সেই অবস্থা। রহমতের দোকানের সামনে দাঁড়ানো খদ্দেরদের মধ্যে কারুর যদি কচি পাঁঠার ঝোল খাবার সাধ জাগে? তখন? আমার জন্যে আনা কচি পাঁঠা যদি ছিনতাই হয়ে যায়? নাহ! নিকুচি করেছে বটুক স্যারের জ্ঞানগর্ভ কথা। রেওয়াজির যুগে কচি পাঁঠা অতি দুষ্প্রাপ্য অথচ উপাদেয় একটি খাদ্য বস্তু। ইচ্ছে হচ্ছে বটুক স্যারকে ফেলে কার্ল লুইসের মতো উড়ে যাই। পড়া না পারা ছাত্রর মতো। কিন্তু এদিকেও যে গুরুতর ব্যাপার। গান্ধীজীর হত্যা রহস্য। আর পারলাম না। বুঝলেন হার মানলাম। আপনাদেরই বা আর কতো ঝুলিয়ে রাখি? অধৈর্য হয়ে উঠছেন। বলেই ফেলি তাহলে? একটু দম লাগা কে, হেঁইয়ো করে বলেই ফেলি?
“মাস্টারমশাই, আমাকে মাংসের দোকানে লাইন দিতে হবে। বাজার নিয়ে দেরি করে ফিরলে রক্ষে থাকবে না। কিন্তু গান্ধীজীর ব্যাপারটা না শুনে যেতে পারছি না যে। গান্ধীজীর সম্মন্ধে এমন কথা আগে কেউ বলেনি তো। বদহজম হচ্ছে। গান্ধীজী কী করে হত্যা করলেন? সেটা এবার বলে ফেলুন”। একটানা কথাগুলো বলতে পেরে মনে হল তিনদিনের জমা বাহ্যি খালাস হল।
স্যার অনুধাবন করলেন আমার উচাটন, পাগলপারা অবস্থা। চা, লেরে বিস্কুটের পরে নস্যি। বেশ আমেজ করে নস্যি নাকে গুঁজে শুরু করলেন, “একটা ব্যাচকে পড়াতে পড়াতে উঠে এসেছি। ক্ষোভে দুঃখে। কদিন ধরে যত্ন করে ভয়েস চেঞ্জ করা শিখিয়ে আজকে একটু পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। একটা সেন্টেন্স ছিল Gandhiji was killed. এটা প্যাসিভ ভয়েস। ভয়েস চেঞ্জ করতে হলে by someone ধরে নিয়ে অ্যাকটিভ ভয়েসে সঠিক উত্তর হল Someone killed Gandhiji. এক হতচ্ছাড়া, ওরাং ওটাং লিখেছে Gandhiji killed someone. লেখার আগে একবার হাত কাঁপল না মূর্খটার? একবার মাথায় এলো না কী লিখছিস?”। চা, লেরে বিস্কুট আর নস্যির প্রভাবে যাও বা অনেকটা শান্ত হয়েছিলেন, আবার উত্তেজিত হয়ে উঠলেন।
জোয়ারের সময় পুরীর সমুদ্রে ঢেউ যেমন বিচে আছড়ে পরার আগে ফেনিয়ে ওঠে, সসপেনে ফুটন্ত দুধ যেভাবে উথলে ওঠে সেভাবে আমার ভেতরে একটা দমকা হাসি প্রবল বেগে বেরিয়ে এলো। স্থান কাল পাত্র ভুলে হা, হা করে হাসতে লাগলাম।
বটুক স্যার আমাকে বাধা দিয়ে বললেন, “দাঁড়ান মশাই, এখনও শেষ হয়নি। পাশে বসা আর এক শাখামৃগ বেমালুম সেটাকে কপি করেছে। ভাবতে পারছেন?”।
বুঝতে পারলাম অনেক বছর হল ইংরেজরা আমাদের দেশ ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু ইংরেজি ভাষার বিড়ম্বনা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি। কোথায় ওয়াজ বসাতে হবে, কোথায় হবে না এই নিয়ে কনফিউশন শুধু কচি মাথা কেন অফিস কাছারিতে অনেক বাবুদেরও প্রাণান্তকর অবস্থা দেখেছি।
যাই হোক স্যারকে অনেক বুঝিয়ে, শান্ত করে আবার পড়াতে পাঠালাম। আর আমি? পিঠে দুটো ঈগলের ডানা লাগিয়ে উড়ে যেতে থাকলাম। লক্ষ্য “রহমত’স মিট শপ”। দুচোখে স্বপ্ন কচি পাঁঠার ঝোল।
ধন্যবাদ ও অভিনন্দন অবেক্ষণ সম্পাদিকা এবং ওনার টিমকে। খুব সুন্দর হয়েছে প্রচ্ছদ ও সমগ্র পরিবেশনা।