কবিতাঃ মৌসম সামন্ত (অসুর)

মৌসম সামন্ত (অসুর)

১)আমার জন্ম

আমার জন্ম হবার কথা তো ছিল না,
আমি দেবতা আর অসুরের অনিচ্ছাকৃত যৌন সঙ্গমের ফল…
আমি কীভাবে ইতিবাচক হতে পারি?

ইতিবাচক তো তারা, যারা বিচ্ছেদের সাথে সাথেই নতুন প্রেম করে;
ইতিবাচক তো তারা, যারা আজকের বন্ধুকে কাল গিয়ে দশটা কথা বলে,
ইতিবাচক তো সুন্দরী নার্স, নতুন ডাক্তার এরা;
আমার এদের নিয়ে ভাবার সময় নেই।

আমার জুতো বোধহয় আবার ছিঁড়ে যাচ্ছে,
টিনের ফুটো দিয়ে এই বৃষ্টি পড়ল বোধহয়,
এই বাইরে আমার মরা বাপটার কান্না শুনছি নাকি?
আমার মাথাটা এবার গেছে পাক্কা…

হঠাৎই একা থাকতে থাকতে বোধ হল,
কিছু হচ্ছেনা কেনো!
মেঘ জমছে, বৃষ্টি হচ্ছেনা;
আবেগ জমছে, ভালোবাসা হচ্ছেনা;
বিরহ জমছে, কবিতা হচ্ছেনা।
শুধু কেউ একজন রোজ আমার ঘরের জানালা খুলে যায় আর বন্ধ করে…

নতুন জামাকাপড়, নতুন প্রেম, খুশি, এসব তো সাময়িক!
এগুলো নিয়ে লিখে কী হবে?
ধুলোতে লুটোপুটি খাওয়া মানুষ, চায়ের দোকানের শেফ,
একটুকরো কবিতা বলা পাগল, মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা দেবদাস,
আমি তাদের নিয়ে লিখি যাতে তাদের কাহিনী ভূতের বাড়ির মতো না লাগে।

সমস্ত সম্পর্ক যখন ভেঙেচুরে গেছে,
পথের বাতাস যখন আর ঘরে ঢোকেনা,
বাপের মৃত্যু আর মা-র আমার প্রতি ঘৃণা,
যৌন হয়রানির অভিযোগ,
এসবের পরে নিজের শ্রাদ্ধ নিজেই করে নিয়েছি।

মরার পর কেই বা বাস্তববাদী লেখে,
মরার পর আমরা মরার কথাই লিখি…
যাই হোক,

আমার তো জন্ম হবার কথা ছিল না।

২) লিখে রেখে যাবো

কইলার মৃত্যুতে শকুন কবে কেঁদেছে!
খজ্যোতি-রা চিরকাল অন্ধকারের কাছে অভিশাপ;
গণৎকারের কথা চিরকাল কর্পূরে থেকেছে,
ঘুমের মধ্যে ডে-জাভু একমাত্র পাপ।

ঙ’র শব্দের সাথে সংসার দিবাস্বপ্ন,
চকসার পর যেমন প্রিয় ফটোগ্রাফি;
ছঙ্গদিলও কারো কাছে হয়ত রত্ন,
জওজরাই প্রেমিকের কাছে আসল শিল্পী।

ঝিয়ারি কালো হোক কিংবা ফরসা,
ঞ যেমন শব্দের শুরুতে গুরুত্বহীন;
টকটকে লাল শাড়ির রক্ত ভরসা,
ঠিকানা ফাঁসি জেনেও কুকাজে দীন।

ডাঁটনের স্বীকার আজ সহস্র প্রেমিক,
ঢৌকন করছে উদ্ভিদ, ব্যর্থ মানুষ;
ণাম্বার মাধ্যমে জাড্য আজ বাস্তবিক,
তথাপি সব উড়িয়ে যায় ফানুস।

থিওরি যেমন প্রাকটিক্যাল ছাড়া বৃথা,
দোসর বলতে থাকে শুধু ছায়া;
ধন্যবাদ জানালে বন্ধু বলা অযথা,
নাট্যমঞ্চ ছাড়লে ভুলতে হবে মায়া।

পঞ্চাগ্নির প্রমাণ একবার সীতা জানে,
ফরায়েজ যাবে যে কার ভাগ্যে!
বকৌলির খবর পিঁপড়ের দু্ঃখ আনে,
ভানুমতীর জীবন কেটে যায় প্রমাণযজ্ঞে।

মোক্ষ লাভের আশায় তপস্যায় কামদেব,
যাযাবরও খুঁজতে থাকে একটা আশ্রয়;
রাতারাতি সব ব্যর্থতার মৃত্যুর জেদ!
লজ্জার আবার নগ্ন হবার ভয়?

শব্দ খুঁজে চলে আজও কবিতা,
ষান্মাসিক প্রেমের বিচ্ছেদেও চলে নেশা;
সোমবারের কাছে মরীচিকা রবিবারের সুখটা,
হত্যাকারী মানুষের কবিতা লেখা পেশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *