কবিতাঃ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা

সহ-দুঃখের রাত্রির চেয়েও ভারি?

তুমি বলেছিলে আলোআধাঁরির বিকেল মানেই পাপ নেই পৃথিবীতে —
দূরে নিয়ে চলো আমাকে কোথাও
উপত্যকায়, মৌপোকাদের গ্রামে!
অলকার ব্যথা চোখ মেলে চায়
কমলের বনে গ্রীষ্মে কিংবা শীতে —
সহ-দুঃখের মেঘ কেটে যায়,
উপত্যকায় জলপ্রপাত নামে!

যখন সে গ্রামে দুজনে গেলাম
আকীর্ণ মহামারি —
দায়ভাগী সব তারারা আকাশে
লুকিয়ে পড়েছে ভয়ে!
বলতো পর্ণা, অমরা না দেখে
আমরা লুকোতে পারি?
ওইতো প্রপাতে অনঙ্গ আলো
অলকার পরিচয়!

তেরাত্রি ভেঙে উপত্যকায়
আমরাও দেব পাড়ি —
মৃত্যু-ব্যথা কী সহ-দুঃখের
রাত্রির চেয়ে ভারি?

মরা ইলেকট্রিক তারের ভালবাসা

আমি ভাবতাম আমি প্রবহমান বিদ্যুৎ —
কিন্তু ক্রমে বুঝলাম আমি আদৌ তা নই।
আসলে আমি দীর্ণ এক প্রাচীন বাড়ির
ধ্বস্ত ওয়্যারিং-এর ভেতর ঘুণ আর মাকড়সার
জর্জরে ঘুমন্ত এক মরা তার!
অজস্র ছিন্নদেহ মৃত কেউটের ছায়া দেওয়ালে জাগিয়ে
বিষন্ন অন্ধকারে শুয়ে আছি।
আমার গন্তব্য ছিল যে আলো — তার ফিলামেন্ট
কেটে গেছে বহুদিন। আমি বুঝতে পারিনি!

আর আধুনিক আলোও তার বয়ান ও স্ক্রিপ্ট
বদলে ফেলেছে আমূল।
মিথুন মেঘের জোড় থেকে বিদ্যুতের আগেকার
জন্ম বহুকাল ছেড়ে এসেছে আলো —
শপিংমল থেকে মানুষের দু-মুঠিতে অলীক ভেনাসের মতো
নিরন্তর জাগরিত এই আলো
এখন এক অনন্ত ফ্যান্টাসমগারিয়া !
তার কোনও মাতৃজঠর নেই, সঠিক শিশুকাল নেই,
তার কোনও সি ই এস সি নেই …।
সেবন্নের সমর্পণ আর অঘ্রাণের এত ফসলের
ক্লান্ত খড় মাড়িয়ে মাড়িয়ে — কোন্ অন্ত্যজ
অন্ধকারকে নির্মূল করতে করতে তার এই
স্পেকট্রাল উন্মেষ তা — কাকপক্ষীও জানতে পারল না!
এই আলো তবে কাদের হত্যার পদছাপ
নাকচ করে সহোদরা বিস্ময়ে আপনার
করতলে শুয়ে পড়ল আপনি জানতেও
পারলেন না!
কররেখায় জেগে উঠল তথ্য আর অনাবিল আনন্দের বিশুদ্ধ পোখরাজ!
অন্তরালে তবে কোথাও হিচককের ছবি নেই!

তবু ওই ঘুণ আর মাকড়সার বিষাক্ত ওয়্যারিংএ
মৃতবৎ পড়ে না থেকে পরিশেষে মৃত্যু এসেছিল!
নয়তো অনন্ত মহাশূন্যের ভাঁটি বেয়ে
পৃথিবীর দিকে অনর্গল নামতে নামতে আমি
বুঝতাম না জ্যোৎস্নার বেদনায়
আমার পুনর্জন্ম হয়েছে!
এখন সরোবরে চাঁদ আর শেফালি পোকাদের
আগুন ছুঁয়ে মনে হল জ্যোৎস্নার আত্মা ছুঁয়ে আছি,
এবার ভালবাসার পুনর্জন্ম হবে!

2 thoughts on “কবিতাঃ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়

  1. দুটি কবিতাই খুব ভাল লাগল তবে আরও কয়েকবার পড়তে হবে।

  2. দুটি কবিতার ভাবনাই খুব ভাল লাগলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *