দীর্ঘ কবিতাঃ প্রথম নিজের সঙ্গে – অনিরুদ্ধ সুব্রত

প্রথম নিজের সঙ্গে…
অনিরুদ্ধ সুব্রত

সন্ধেবেলা তোমার গা গুলিয়ে উঠল কেন
হাতে মুখে জল দিয়ে বাঁচলে কি
আজ লিখবে ভেবেছিলে, তার কী হলো…

—কে হে ? এতো সব জিজ্ঞাসার
জানো এই সব দিনে আমি লিখতে পারি না
প্রায়শ এই সন্ধে গুলোতে আমার বমি হয়

জানি, তোমার মাথার যন্ত্রণার পুরোনো অভ্যাস
প্রথাগত ঘুমের সর্বনাশে যে সব উৎসব
তার বিরতি-প্রান্তরে তাকালে, তোমার গা গুলোয়

— বাহ্ ! তাজ্জব এই স্ক্যান রীপোর্ট
কোথায় বসে দেখো এসব, ঐ বইয়ের তাকে
না টেবিল আলোর ছায়ার ফাঁকে ?

এখন তর্কের সময় নয়, বিতর্ক হীন বিবৃতি এসব
তাছাড়া তোমার লুকোনো ফাইল আর
তার চার অক্ষরের পাসওয়ার্ড একমাত্র, আমিই..

— গত শতকের যাত্রাপালার বিবেক
নাকি আবেগের অন্তর্যামী, কেন বকবক করি,
তুমি যদি জানো, তবে তো জানোই—
এখন আমার একা থাকা দরকার

তুমি কি উটের কবিতাটা লিখবে না
নিজেকে ধূ ধূ বালির চরাচরে, এক উটের উপমা
দিয়ে, তো ভাবছ বেশ লিখছ, কিন্তু তাতে হয়…

— জিজ্ঞাসার উত্তর দেব না বলে চুপ করে আছি
তাছাড়া জিজ্ঞাসা থেকে বেরিয়ে গেছি
প্রশ্ন আর উত্তরের পাতি কথোপকথন ঘেন্না করি

বেশ, তাহলে চুপ করে থেকে দেখো
একটা চুপ করার জন্য আসলে কত কথা বলো
তাবলে শেষে আমার কাছেই জানতে চেও না

— হ্যাঁ, ঠিক আছে । আমি পুরো চিন্তা মুক্ত
শুধু খানিকটা বমি হয়ে গেলে ক্লান্ত হবো
অনেক দিন আমি ভীষণ ক্লান্ত হতে চেয়েছি

আচ্ছা, তুমি ঠিক কী বমি করতে চাও
কী কী উগরে দিলে আজ তুমি ভালো থাকবে
এটা প্রশ্ন নয়, কিন্তু তোমার কাছে উত্তর নেই

— আমাকে রোজ রোদ্দুরে যেতে হয়
কিছুতেই সঙ্গে ছাতা রাখার অভ্যাস করিনি
বাতাসে জলীয় বাষ্প ঢুকছে প্রতিদিন

এই সব গুমোটের উপখ্যান কম তো লেখনি
‘প্রিয় মৌসুমী বায়ু’ লিখেছ দেয়াল পত্রিকায়
ভুলেও গেছ বারবার, সবে তো চৈত্র মাস

— থামো, হাপিত্যেশ লিখি শুধু ? পড়ো না কিছু
বৃষ্টির পূর্বাহ্ন এবং অপরাহ্ন নিয়ে সব লেখা
আমার কাছে সমস্তটাই আসলে বর্ষাকাল

মনে হয়, বমির চেয়ে খানিকটা কান্না ভালো
এটা আমার সাজেশন নয়, চোখের জন্য
যা কিছু স্পষ্ট দেখার আগে, ধুয়ে নেয়া দৃষ্টি

— আমি তো দেখতে চাচ্ছি না, জানি সবই
বরং দেয়ালের দিকে তাকালেই গা গুলোয়
সাদা প্রেক্ষা পেলেই সিনেমা শুরু হয়ে যায়

না, তুমি যতদূর জানো, তার রশ্মি এসে পড়ে
না-জেনেই তো একদিন ঘুমিয়ে পড়তে পারো
তুমি যে ক্লাসে পড়ো, তার সিলেবাসে যা ছিল

— বিশ্বাসের সীমান্ত হয় ? অবিশ্বাসেরও নয়
ছোটো করে বৃত্ত আঁকতে আমি পারব না
ওসব ছাত্র বয়সের সম্পাদ্য, সম্পাদিত ভাবে

অসুস্থ হতে এতো ভালো লাগে কেন তোমার
প্রত্যেকটা সুতোর শুরু ও শেষ টেনে দেখা কেন
যাও তার চেয়ে বমি করে এসো, শূন্য করো

—হজমের সমস্যায় হাজার বার হতাশ করেছি
হাতের আঙুল ঢুকিয়ে দিয়েছি গলার ভিতর
হড়হড় করে বেরিয়ে এসেছে অপাচ্যের তরল

তারপর নিপাট শান্তি ? দ্বন্দ্ব ঢেলে ফেলে
দ্বিধান্বিত খাদ্য খাবার, যা সব গোগ্রাসে খেলে
পেলে, নাকি কেড়ে খেলে, বিতর্ক ইত্যাদি

— তোমার উদ্দেশ্য, আমাকে উত্যক্ত করা ?
মানে আসপাশ থেকে প্রত্যক্ষের পাখায় চড়ে
জানিয়ে দিতে চাও, ইচ্ছে হলেই বমি হয় না…

না, আমার আলাদা উদ্দেশ্য কবে শুনেছ
কবে আমার সঙ্গে দুদণ্ড বসে আমি কেন মুখর
জেনেছ, তোমার গ্রহণ বর্জন সে তো তোমার একান্ত

— একান্ত, একের মধ্যে দুই,
তুমি হয়ে প্রশ্ন করে ঘাবড়ে দিতে পারবে না
আমি ঠিকই উটের কবিতাটা লিখব
তুমিই তাকে থর-পথে হাঁটিয়ে নিয়ে যাবে জানি । ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌

4 thoughts on “দীর্ঘ কবিতাঃ প্রথম নিজের সঙ্গে – অনিরুদ্ধ সুব্রত

  1. অপরাজেয় কথোপকথন যা যুক্তির থেকে অনেক বেশি আবেগতাড়িত কিন্তু বড় মনোরম, মসৃণ তার ধারা । মুগ্ধ হলাম পড়ে । ❤️

  2. বাঃ। নিজের সঙ্গে কথোপকথন চমৎকার লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *