গুচ্ছ কবিতাঃ দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
প্রথম কবিতা : সুখকেলি থাকে শুধু নিভৃত বাসরে
বৈদেহিক কান্না শরীর মেললেই
মেঘ মাটিতে নেমে আসে
সান্ত্বনার বৃষ্টি ঢালে গায়
শান্তির ধারায় নোনাকান্না ভেসে যায় বুলায়
কান্না শরীর মেললেই
ঝর্ণা আছড়ে পড়ে মাটির বুকে
পরম মমতার তমোঘ্ন অবয়ব তার
আগুনভেজা বুক সিঞ্চিত হয় সৌমনস্যতায়
কান্না শরীর মেললেই
দুঃখরা খেলা করে নিষুপ্ত জোৎস্নার রিঙ্গনে
বীতাগ্নি হৃদয়ে প্রাণের দিয়াড়ি জ্বলে বিধুত
বিনির্জিত দু্ঃস্বপ্ন বল্কল ত্যাগে বুদবুদ উড়ে যায়
তখন জাগনপাগল সুখ এলেই
কান্নারা থরোথরো শীতে কাঁপে
আনন্দভৈরবী উদাস করে দয়িত আকাশ
আলিপ্ত প্রেম পাগলপণ কবিতার অক্ষর খুঁজে মরে
দ্বিতীয় কবিতা : শূন্যে ভাসে কথাগুলো
শেষে সব কথা আর বলা হয়ে ওঠেনা
একবুক শূ্ন্যতা নিয়ে ফিরে আসা
না বলা কথাগুলো বুকের মধ্যে বাজতে থাকে
সিন্থেসাইজারের সুর হয়ে
বারান্দায় পাশাপাশি দুটো চেয়ার
ধূমায়িত চায়ের কাপের উষ্ণতা
বৃষ্টির ফোঁটাদের খেলা টবের সবুজের সাথে
ফোটা জবাকে যেন বড়ো আদুরে লাগে
চুড়ির রিনরিন সুর বেজে যায় আবেশী প্রেমে
বলা হয়ে ওঠেনা সব
পুরনোকে বুকের সিন্দুকেই রেখে দিই
একরাশ স্তব্ধতা তখন সারা ঘর জুড়ে আমার…..
তৃতীয় কবিতা : চলতে চলতে
একটা ছেঁড়া উঠোন জুড়ে পড়ে আছে আমার ছেলেবেলা। মায়ের ছেঁড়া আঁচলে সে শুধু আশ্রয় চায়। অগুনতি ঘুণপোকা বাসা বাঁধতে থাকলে মা আমায় বাবার গল্প বলে। সারা বাড়ি জুড়ে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে। ছোট্ট আমার বুকে মা বাবাকে আঁকতে থাকেন ঘোরলাগা চোখে। মায়ের গল্প শেষ হলে বাবা সামনে এসে দাঁড়ায়। বাবার হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাই বটগাছের ছায়ায়।মা বলেন,
বনস্পতির ছায়া অশেষ।পথটা আমায় কোলে তুলে নেয়। জানিয়ে দেয়, চলতে চলতেই চলার পথ এগিয়ে চলে।
চতুর্থ কবিতা : স্মৃতির ফসফরাস জ্বলে
চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে তুমি দাঁড়িয়ে থাকো অবিচল
দুঃখগুলো ছুঁতে এলেই অশরীরী তুমি জড়িয়ে ধরো আমায়
সুখের আবীর মাখিয়ে চলে যাও
ভালো রাখার চেষ্টা এটা বুঝতে পারি
মনে পড়ে যায়
লালপাড় শাড়িতে তোমার দুষ্টু আমন্ত্রণ
দুহাত বাড়িয়ে চাইতে শুধু সুখের অনুভব
একরাশ ভালোবাসার ক্লোরোফিল খেলে বেড়াতো আমাদের সারা শরীরে
আজ সেইসব স্মৃতি বুকে বসে থাকি
তোমারই সবুজ বারান্দায়
গাছেরা সান্ত্বনা দিতে এলে
মনে পড়ে তোমার চিতার ওপর রেখেছিলাম তোমার প্রিয় জুঁই সেদিন
পঞ্চম কবিতা : দূরত্ব ভালোবাসা চেনায়
হাতটা বাড়াতে চাইলেই
দূরত্ব বেড়ে যায়
ধরা হয় না তাই আর
দূরত্বটা বাড়তে বাড়তে একটা সবুজ অরণ্য হয়ে যায়
তোমাকে খুঁজি সবুজে পাগলপণ
হাতটা যেন লুকোচুরি খেলে আমার সাথে
বুঝে গেছে তাকে আজ আমার বড়ো প্রয়োজন
হাতটা ধরতে গেলেই মাঝে নীল আকাশ চলে আসে
দূরত্ব তখন মেঘ মাপে আমার চোখের জলে
দূরত্বটাকে টপকে এগোতে পারি না হাতটার কাছে
বাড়তে থাকা দূরত্ব জীবন চেনায়
একা একা এগিয়ে চলি শ্যামলিমায়
হাতটা ধরতে গেলেই দূরত্ব বাড়তে থাকে
বুঝি এ জনমে আর ছোঁয়া হবে না তা