মাইকেল মধুসূদন দত্ত – ধর্মনিরপেক্ষ মহাকবি (বাংলা ভাষা)
রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

কবি হন আন্তরিক এবং তাঁর পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়াই স্বাভাবিক | এমনই একজন আন্তরিক কবি ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত | কোন সময়ই ধর্মের ধ্বজা তিনি উড়িয়ে চলেননি | নিতান্ত ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তিনি খ্রীষ্টীয় ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন | সব রচনায় তিনি কোন ধর্ম সমর্থন বা বিরোধিতা করেন নি | আন্তরিক আবেগের প্রেরণায় তিনি কলম চালিয়েছেন | আগেই তাঁকে প্রণাম জানাই |
গুগুল বলছে তাঁর জন্ম জানুয়ারি মাসের 25 তারিখ 1824 সালে কপোতাক্ষ নদীর তীরে,সাগরদাঁড়িতে, যশোর জেলায় ( ব্রিটিশ ভারতে, বর্তমান বাংলাদেশ) আর মৃত্যু জুন মাসের 29 তারিখ 1873 (কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে) মানে পঞ্চাশ বছরও তিনি জীবিত থাকতে পারেন নি | অথচ এই অল্পদিন জীবিত থেকেই অমর হয়ে রয়েছেন বাংলাভাষী পাঠক পাঠিকার কাছে এবং সারা বিশ্বের অজস্র মানুষের কাছে | এমনকি একাধিক ভারতীয় ভাষায় তাঁর বিভিন্ন কবিতা গ্রন্থ ও নাটক অনূদিত হয়েছে |
তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী কবি ও নাট্যকার | তিনিই, বলা যায় প্রথম নব্য রীতি প্রবর্তনের ধারা বাংলা সাহিত্যে আনয়ন করেন | তাঁর সনেট ও চতুর্দশ পদাবলী আজও বিস্মিত করে |
তাঁর জন্মের দুইশত বছরের প্রাক্কালে তাঁকে অন্তরের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ছোট্ট করে কয়েকটি কথা বলতে চাই :-
মাইকেল মধুসূদন দত্তর অন্যতম কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘনাদবধ’ যা কবিকে মূলত, চিরঞ্জীবী করেছে | এই চরিত্র ভারতের বিশিষ্ট পুরাণ রামায়ণ যা রচনা করেছিলেন বাল্মীকি আগে যিনি রত্নাকর নামের এক দস্যু ছিলেন | রত্নাকর দস্যু নারদের কাছ থেকে দীক্ষা ‘রাম’ মন্ত্র পেয়ে তা দীর্ঘদিন ধ্যান করতে করতে বল্মীকদ্বারা আচ্ছাদিত হয়েছিলেন তাই তাঁর নাম হয়েছে বাল্মীকি | তিনি একদিন সকালবেলা নিকটের ‘তমসা’ নদীতে স্নান করতে যাবার সময় নদীর ধারের একটি গাছের ডালে সম্ভোগে রত ক্রৌঞ্চযুগলের কোন ব্যাধের নিক্ষিপ্ত তীরে ক্রৌঞ্চ নিহত হলে তিনি শোকে বিহ্বল হয়ে তাঁর মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে এল উচ্চারণ :-
“মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীসমা |
যত্ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকম বধীঃ কামমোহিতম্ ||”
সেই থেকে যথানির্দেশে তাঁর অমর রচনা করা শুরু হল ‘রামায়ণ’| বিশ্বাস এই ত্রেতা যুগের মর্যাদা পুরুষ শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন স্বয়ং শ্রীবিষ্ণুর অবতার | তাঁকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রাচীনতম মহাকাব্য ‘রামায়ণ’| এঁকে আমরা বলি ‘রামায়ণ মহাপুরাণ’| শ্রীরামচন্দ্রকে কেন্দ্র করে পরম বৈষ্ণব তুলসীদাস অবধি কথ্য ভাষায় লিখেছিলেন ‘শ্রীরামচরিত মানস’ আর বাংলায় মাত্র সেদিন (1861) শ্রীরামচন্দ্রের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধায় শ্রীরামচন্দ্রনির্ভর রামায়ণের একটি প্রধান চরিত্র মেঘনাদকে নিয়ে মাইকেল মধুসূদন লিখলেন ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ যা বাংলার কাব্য পাঠককে আজও মুগ্ধ করে |
তবুও “….মেঘনাদবধ কাব্যের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছিল কবির ভাবনার বিজাতীয়ত্বে |……” এ নিয়ে শতাধিক বছরের বাদানুবাদ পেরিয়ে আবিষ্কার করা হল, মধুসূদনের বিভিন্ন সময়ের উক্তি ও চিঠিপত্রের উদ্ধৃতি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তাঁর রচনা ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যকে আশ্রয় করলে দেখা যাবে কবি মধুসূদন শ্রীরামের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলেন |
মধুসূদন, অবশ্যই মাইকেল মধুসূদন, রচিত কাব্য গ্রন্থটি ‘মেঘনাদবধ’ অর্থাত্ রাবণের পুত্র হল এই কাব্য গ্রন্থের নাম ভূমিকা, কোনভাবেই রাবণ নন | একথা ঠিক কাব্যটিতে বিভিন্ন সময়ে ও প্রয়োজনে কাব্যের পটভূমি লঙ্কাপুরী, নিকুম্ভিলা যজ্ঞগৃহ, লঙ্কাধিপতি রাবণ ও রাজসভা, যুদ্ধস্থল স্থান পেয়েছে | মনে রাখতে হবে কাব্যের বিষয়বস্তু কিন্তু শ্রীরাম নন, আর পটভূমি অযোধ্যার রাজসভাও নয় | এই কাব্যের বিষয়বস্তু রাবণ পুত্র মেঘনাদ তথা ইন্দ্রজিত্ বধ আর পটভূমি স্বর্ণলঙ্কা | এই কাব্যের নির্ধারিত সময়ব্যাপী রামচন্দ্রের বাস বনে, তিনি রাজ্যসুখ স্বেচ্ছায় পেছনে রেখে চলে এসেছিলেন বনে, সঙ্গে ভাই লক্ষ্মণ ও তাঁর স্ত্রী সীতা এসেছিলেন |
এই কাব্যে সীতা অপহরণ-উত্তরকালীন সময় ধৃত | এই কাব্যের স্থান লঙ্কাপুরীর বিভিন্ন যুদ্ধের স্থান | একদিকে রাবণ, মেঘনাদ, প্রমীলা, মন্দোদরী, চিত্রাঙ্গদা, সরমা প্রমুখজনেরা; অন্যদিকে লক্ষ্মণ, সুগ্রীব, হনুমান, বিভীষণ, স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র প্রধান চরিত্র ও অশোক কাননে চেরী পরিবৃতা বন্দিনী সীতা | উপলক্ষ্য অপহৃতা সীতা উদ্ধার | একদল আক্রান্ত , অন্যদল সীতা উদ্ধারকারী অবরোধকারী | একদল দেশী, অন্যদল পরদেশী | একদিকে স্বদেশ প্রেমের ইন্ধন , অন্যদিকে সীতা উদ্ধারের একমাত্র প্রয়াস | এই কাব্যের সীতা কিন্তু সীতার জায়গায়ই রয়ে গেছেন |
মনে রাখতে হবে, সর্বজনবিদিত ভারতের আদিকবি বাল্মীকির অমর সৃষ্টি রামায়ণের কাহিনীর একটি অংশমাত্র কবির মূল উপজীব্য |
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘মেঘনাদবধ ‘ কাব্য রচনায় বিভিন্ন বিদেশী গ্রন্থের এবং আদি কবি বাল্মীকির ‘ রামায়ণ ‘ ও পরবর্তীকালের রচনা মহাভারত, মহাকবি কালিদাসের অনুসরণে কুমার সম্ভব, অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ ও অন্যান্য রচনা, এমনকি ভবভূতি, গ্রীক সাহিত্যের হোমার, ভার্জিল, মিলটন, ইতালীয় কবি তাসো, কীটস, দান্তে এছাড়া বাংলার কাশীদাসী মহাভারতের রচনাও অনেকক্ষেত্রে অনুভব করেছেন ও প্রয়োজনবোধে ব্যবহার করেছেন |
মধুসূদনের রাবণ অদৃষ্টতারিত কেননা শ্রীরামকে দেবদেবীরা সহায়তা করেছেন | আর লঙ্কাপতি রাবণ শুধু দেবাদিদেব শিবমহাদেবকে তুষ্ট করে রেখেছেন, তবু শিবঘরণী দেবী জগদম্বার ইচ্ছাকে তাঁর পতি গুরুত্ব না দিয়ে পারেন না, তাই যথাসময়ে তিনি তাঁকে সাহায্য করেছেন | শচীপতি স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র লক্ষ্মণ যাতে মেঘনাদকে বধ করতে পারেন , সেইজন্য নানান ফন্দিফিকির ও অস্ত্র পর্যন্ত দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন | মেঘনাদতো একসময় দেবরাজ ইন্দ্রকে যুদ্ধে পরাস্ত করেছিলেন বলেই তাঁর আরেক নাম হয়েছিল ইন্দ্রজিত্ |
মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভারতীয় পুরাণের প্রতি সশ্রদ্ধ মমত্ববোধই তাঁকে নতুন করে কিছু লিখতে অনুপ্রাণিত করেছে এবং এজন্যই তিনি তাঁর বান্ধবসদৃশ বিদ্যাসাগরকে রামায়ণ-মহাভারত পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন | এইসব পুরাণের প্রতি তাঁর যথেষ্ট বিশ্বাস ছিল বলে হয়তো মনেও করা যায় |
আবার ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যের প্রসঙ্গে আসা যাক |একসময় দেববলে বলীয়ান হয়েও লঙ্কাধীশ রাবণ নিজের দোষে সীতাপতি শ্রীরামের শত্রু হয়েছেন | শ্রীরাম এ সময় ঐশ্বর্যহীন বনবাসী এবং একাকী, যদিও ভাই লক্ষ্মণ ও মৈথিলী সীতা সঙ্গে আছেন | তাঁর সঙ্গে আছেন দাক্ষিণাত্যের সুগ্রীব ও তাঁর সৈন্যবাহিনী থেকে শুরু করে হনুমান, জাম্ববান সকলে | আর রাবণ নিজের দোষে অদৃষ্টের কোপানলে পড়েছেন | তাঁকে আদি কবি বাঁচাননি, মাইকেলইবা বাঁচাবেন কেন ?
‘মেঘনাদবধ’ কাব্যের কোথাও তিনি মর্যাদাপুরুষ শ্রীরামকে কাপুরুষ সাজাননি | মনে রাখতে হবে ধর্মে তিনি খ্রীষ্টান হলেও ঐতিহ্যে তাঁর কোন ধর্মভেদ বা ভেদবুদ্ধি কাজ করেনি | তিনিই লিখেছিলেন :-
“…..ভারতি ! যেমতি, মাত, বসিলা আসিয়া
বাল্মীকির রসনায় (পদ্মাসনে যেন)
তেমতি দাসেরে, আসি, দয়া কর সতি
চৌর্যে রত হইল সে তোমার প্রসাদে,
মৃত্যুঞ্জয় যথা মৃত্যুঞ্জয় উমাপতি
হে বরদে, তব বরে চোর রত্নাকর
কাব্য রত্নাকর কবি |”
কবি শ্রদ্ধার সঙ্গে দেবী সতী শ্বেতাম্বরা সরস্বতীর স্তুতি করে বলেন চৌর্য বৃত্তিতে লিপ্ত রত্নাকর যদি তোমার বরে মৃত্যুঞ্জয়ী কবি হতে পারেন তবে মধুসূদনই বা মৃত্যুঞ্জয়ী কেন হবেন না ?
তাঁর কলমে পরস্ত্রীলোলুপ রাবণ তাঁর ভাই কুম্ভকর্ণের মৃত্যুকে নিজের দোষের ফল বলে স্বীকারোক্তি করিয়েছেন –
“….শূলী শম্ভুসম ভাই কুম্ভকর্ণ মম,
অকালে আমার দোষে ?…..”
আবার, যখন ভগ্নদূত বীরবাহুর বীরগতির দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে এসে বলছে –
“…..কতক্ষণ পরে প্রবেশিলা যুদ্ধে
আসি নরেন্দ্র রাঘব…….”
এখানে শ্রীরামচন্দ্র রাজ্যহীন হলেও তাঁকে নরের ইন্দ্রই আখ্যা দিয়েছেন |
রাক্ষসেশ্বর রাবণ উঁচু প্রাচীর থেকে রণক্ষেত্রের অবস্থা দেখছেন,- চারদিকে শত্রুদল লঙ্কাপুরী অবরোধ করে রেখেছেন ! কবি রাবণকে দিয়ে ভাবিত করালেন –
“……দাশরথি পশ্চিম দুয়ারে
হায় রে বিষন্ন এবে জানকী বিহনে,
কৌমুদি-বিহনে কুমুদি রঞ্জন
শশাঙ্ক |…”
রাবণ তার শত্রু রামের জন্য যেন সমব্যথী !
আবার, অপূর্ব শ্রীরামের সেতুবন্ধন দেখে লঙ্কার রাজা রাবণ শ্রীরামকে না দুষে সমুদ্রকেই দুষছেন :-
“….এই কি সাজে তোমারে, অলঙ্ঘ্য, অজেয়
তুমি ? হায় এই কি হে তোমার ভূষণ,
রত্নাকর ? কোন্ গুণে কহ, দেব, শুনি,
কোন্ গুণে দাশরথি কিনেছে তোমারে ?”
তৃতীয় সর্গের শুরুতেই দেখি মেঘনাদ প্রেয়সী প্রমীলার বিরহ বর্ণনা যেন ব্রজলীলার শ্রীমতী রাধারাণী কদম্বের মূলে পীতাম্বর শ্রীকৃষ্ণকে না দেখে যেমন বিরহকাতরা তেমনই বিরহে কাতর প্রমীলা | প্রিয়তম মেঘনাদ তাঁর স্বামী অবরুদ্ধ হয়ে আছেন , অথচ তাঁর কাছে পৌঁছতেই হবে, কোন বাধাই তাঁকে আটকাতে পারবে না | অবরুদ্ধ লঙ্কাপুরে তিনি যাবেনই |
” কহিল বাসন্তী সখী , কেমনে পশিবে লঙ্কাপুরে
আজি তুমি ? অলঙ্ঘ্য সাগর –
সম রাঘবীয় চমূ বেড়িছে তাহারে |”
“তাতে কী ?” প্রমীলা উত্তরে বলেন-
“… পর্বত গৃহ ছাড়ি
বাহিরায় যবে নদী সিন্ধুর উদ্দেশে,
করেছেন সাধ্য যে সে রোধে তার গতি ?”
প্রমীলার সদর্প ঘোষণা –
” রাবণ শ্বশুর মম মেঘনাদ স্বামী –
আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে ?….”
সাজ সাজ রব পড়ে যায় | অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রবল পরাক্রমে প্রমীলা বাহিনী শত্রুসৈন্য ব্যুহ ভেদ করতে ছুটে চলেছেন | হনুমান সুন্দরী যুবতী রক্ষ-কুল-বালাদের বীরদর্পে এগিয়ে আসা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তাই সে তাঁদের নৃমুন্ডমালিনী দূতীকে নিয়ে শ্রীরামের কাছেই গেলেন এবং এঁদের নিয়ে কি করা উচিত জিজ্ঞেস করার সঙ্গে সঙ্গে সেই নৃমুন্ডমালিনী বলে উঠলেন –
“বীর শ্রেষ্ঠ তুমি,
রঘুনাথ, আসি যুদ্ধ করো তার সাথে,
নতুবা ছাড়হ পথ, পশিবে রূপসী
স্বর্ণ লঙ্কাপুরে আজি পূজিতে পতিরে |…”
শ্রীরামচন্দ্র কুলবালা বধূদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন কেন ? তাই তিনি হনুকে নির্দেশ দিলেন –
“দেহ ছাড়ি পথ, বলি | অতি সাবধানে,
শিষ্টর আচরণে তুষ্ট কর বামাদলে |”
একথাতে কবি শ্রীরামকে মহিলাদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল মহত্তর মর্যাদা পুরুষের চরিত্রে যথাযথ অঙ্কিত করেছেন |
প্রমীলাসহ মেঘনাদ রাত্রের শেষে মা মন্দোদরীর আশীর্বাদ নিতে গেলে তিনি রাম-লক্ষ্মণের পরাক্রম স্মরণ করে নিজের বীর পুত্রের জন্য আশঙ্কিত হন | আবার তিনি রাবণের জন্য বিরক্তও প্রকাশ করেন –
” কুক্ষণে , বাছা নিকষা শাশুরী
ধরেছিলেন গর্ভে দুষ্টে, কহিনুরে তোরে |”
ততোধিক বিরক্ত মন্দোদরী শূর্পনখার প্রতি | কেননা লঙ্কার এই সঙ্কটের জন্য প্রথম দায়ী তো সেইই –
“হায় বিধি, কেন না মরিল
কুলক্ষণা শূর্পনখা মায়ের উদরে |…”
এরকম অজস্র পরিপ্রেক্ষিতে দেখা শ্রীরামের প্রতি প্রায় সকলেই শ্রদ্ধাশীল, তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ | আর ছত্রগুলো রচনা মাইকেল মধুসূদনেরই | পাঠের আনন্দে ভরপুর এই কাব্যকে নিন্দা করে কবিকে বিজাতীয়ত্বে ভূষিত না করাই হয়তো ভাল ছিল |
মেঘনাদবধ কাব্যের ষষ্ঠ সর্গে দেখি :-
“কুশাসনে ইন্দ্রজিত্ পূজে ইষ্টদেব নিভৃতে,
কৌষিক বস্ত্র, কৌষিক উত্তরীয়, চন্দনের ফোঁটা
ভালে, ফুলমালা গলে |”
এখানে সুমিত্রানন্দন লক্ষ্মণ সশস্ত্র হয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞগৃহে ঢুকে নিরস্ত্র ইন্দ্রজিতকে বধ করতে উদ্যত হলেন | সঙ্গে ছিলেন বিভীষণ,
“ভীমতম শূল হস্তে, ধূমকেতু সম
খুল্লতাত বিভীষণ রণে !”
সপ্তম সর্গে পুত্রের মৃত্যুতে মন্দোদরীকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা নেই কিন্তু বিলাপ করে সময় ব্যয় না করে রাবণ উক্তি করলেন –
“…..স্মরি তারে চল রণস্থলে –
মেঘনাদ হত রণে, এ বারতা শুনি,
কে চাহে বাঁচিতে আজি এ কর্ব্বুরকুলে…”
মৃত পুত্রের সত্কারের জন্য রাবণ সাতদিনের যুদ্ধবিরতি চেয়ে রক্ষঃকুল মন্ত্রী সারণকে রামের কাছে পাঠালেন | সারণ রামের কাছে বললেন –
“— তিষ্ঠ তুমি সসৈন্যে এ দেশে
সপ্তদিন, বৈরিভাব পরিহরি, রথি !…..”
শ্রীরাম বললেন – “……হে সারণ, প্রভু তব; তবু তাঁর দুঃখে
পরম দুঃখিত আমি, কহিনু তোমারে !….”
শ্রীরামচন্দ্রের দুঃখ প্রকাশ তাঁর মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেয় | এ রকম রচনা ধর্ম নিরপেক্ষ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তেরই লেখা |
তথ্য সূত্র:-
মেঘনাদবধ কাব্য,
সাহিত্য সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত মধুসূদন রচনাবলী,
ঐ ভূমিকা – ক্ষেত্র গুপ্ত,
মধুসূদন কবিমানস – শিশির কুমার দাস
এবং কবি শ্রীমধুসূদন – মোহিতলাল মজুমদার |
মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদ বধ কাব্য নিয়ে রাধাকৃষ্ণ গোস্বামীর লেখাটি ভাল লাগশ।
লেখাটি খুব তথ্য সমৃদ্ধ। ভালো লাগলো।