গল্পই হতে পারে
রাধাকৃষ্ণ গোসামী (রাধু)
হ্যাঁ গল্পই হতে পারে, কেননা শুনেছিলাম এক বন্ধুর কাছে | বিয়ে নিয়ে গল্প | এরকম শোনাও যায় | তবুও যেমন শুনেছি তেমনই বলব|
ছেলের বাড়িতে দধিমঙ্গলের রীতি মানার পর সাত সকালেই খবর এল যে নির্বাচিত পাত্রী তাদের বাড়ির দধিমঙ্গল হবার পর ই বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেছে। সঙ্গে তাদের পাড়ার এক পুরনো প্রণয়ী গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। তারা কোন এক মায়ের মন্দিরের দিকে চলে গেছে। কাজেই এ বিয়ে হচ্ছে না।
ব্যাপারটা যত সহজ করে বলা হল পাত্রের বাড়ি কিন্তু তত সহজ ভাবে নিতে পারলো না। সারা বাড়ি আত্নীয় স্বজন দূরের, এমনকি বিদেশ থেকে ছুটি নিয়ে আসা লোকজনের ভিড়ে ঠাসা। বাড়ির গৃহকর্তা ব্যাপারটা মেনে নিতে পারলেন না। তার প্রেসার এই সকালেই চড়চড় করে বাড়তে লাগলো।
গৃহকর্তার নির্দেশমত আগে যেসব পাত্রী অনেকটা পছন্দ হবার পর শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত করা হয়নি তাদেরই মধ্যে যাদের এখনও বিয়ে হয়নি সেসব পাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে|
গৃহকর্তা ডাকলেন – মিলন, শোন তুমি এক্ষুনি বেরিয়ে পড় | আর দেরী করলে হবে না | আমাদের বাড়িতে এরকম ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি | না, চায়ের জন্য বসলে সামাল দেয়া যাবেনা | রাস্তায় হবে |”
মিলনের ব্রাশ করা আগেই সারা হয়েছিল , শুধু বাইরে যাবার মত হাতের কাছে মা পাওয়া গেল পোষাক পরে সাথে এক অল্প বয়েসী যুবক নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতেই শহরের অন্যপ্রান্ত থেকে আসা মণিমাসি বললেন – আমাদের গাড়িটা নিয়ে যাও। ড্রাইভার গাড়ির মধ্যে আছে। ওকে নিয়ে যাও।”
সঙ্গী নিয়ে মিলন তাদের বরাহনগর বাড়ি থেকে প্রথমে গেল বিরাটীর এক বাড়িতে গিয়ে ঘরে আর ঢোকা হলনা, বোঝা যাচ্ছে যে ঐবাড়িতে আজকেই বিয়ে।
এবার ঐ বিরাটীর আরেক বাড়িতে গিয়ে ঘরে ঢুকে এক বিপত্তি।এক ভদ্র মহিলা ছুটে এসে প্রায় মারতেই এলেন। জানা হলনা পাত্রীর অবস্থা কী।
তৃতীয় জায়গায় গিয়ে জানা গেল পাত্রীর খুব ভালো জায়গায় এক সপ্তাহ আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। কাছেই মধ্যম গ্রাম স্টেশন। ওরা তিনজন একটা দোকানে ব্রেকফাস্ট সেরে চা খেতে খেতে মিলন তার সঙ্গীকে বলল, – দুটো বাড়িতে যেতে হবে। সেখানে কী অবস্থা দেখি আমরা। ছয় জায়গায় পাত্রী দেখা হয়েছিল, এক বাদ দিলে আর তিন দেখা হলে বাকি থাকল দুটো ।”
গাড়ি এসে থামলো চতুর্থ বাড়িতে । এই সকালেই বাড়ির গৃহকর্তা ওদের স্বাভাবিক ভাবেই আপ্যায়ন করলেন। বাড়ির ভেতরে চায়ের কথা বলেই জিজ্ঞেস করলেন – এবার বলুন, কী ব্যাপার ! “
মিলন বলল – আপনাদের মেয়ের বিয়ের কথা কতটা এগিয়েছে ?”
এবার ভদ্রলোক হাসতে হাসতে বললেন – ওহো, আমার তো আপনাকে দেখেই চেনা চেনা মনে হয়েছিল | আপনি আমাদের মেয়ে দেখতে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন সঙ্গে আপনাদের আরও দুজন কেউ ছিলেন | তাইনা ?”
– আপনারা কী ” মিলন হঠাত্ করে আসল কথাটা বলল – আপনাদের মেয়ের বিয়ে আমাদের ছেলের সঙ্গে আজই বিয়ে দিতে পারবেন ?”
কথা আর শেষ করতে হলনা | ভদ্রলোক চেঁচিয়ে বাড়ির সকলকে ডাকলেন – শোন সবাই , ইনি কী বলছেন !”
কিছু আলোচনার পর বাড়ির সবাই এমনকি স্বয়ং পাত্রীও অরাজী নয় | ওদের বাড়িতে কয়েকদিন পর একটা পৈতা হবে | তার জন্য বরণডালা থেকে দশকর্মার জিনিসপত্র সব তৈরী | আর ভদ্রলোকের এক ছেলে নেতাজী ক্লাবের সঙ্গেও যুক্ত | প্যান্ডেল ডেকোরেটার্স ক্যাটারারস সব কয়েক ঘণ্টায় রেডি হয়ে যাবে এই আশ্বাসও পাওয়া গেল |
মিলন সঙ্গে সঙ্গেই সঙ্গীকে নিয়েই কার ড্রাইভারকে বললেন – ভাই, এবার একেবারে থার্ড গিয়ারে চালান ভাই , হাতে সময় নেই |” আর নিজেদের বাড়িতে পৌঁছতেই চেঁচিয়ে বলতে লাগল – ওরে সবাই হুলুধ্বনি দাও , শাঁখ বাজাও, সানাই বাজাও বিসমিল্লা খাঁর সানাই ছাড়া চলে নাকি !”
গল্পটা এই পর্যন্ত থাক , কেমন ?