শারদ সংখ্যা ১৪২৯, সম্পাদকীয়ঃ মন্দিরা গাঙ্গুলী

বাংলায় কথা বলা, বাংলায় লেখা এসবই আজ অনেকের কাছে নিম্ন রুচির। সেদিন চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়া সুসজ্জিতা একজন মহিলা বলছেন তাঁর একজন ছোটবেলার বান্ধবীকে, ” হোয়াটসঅ্যাপে ফেসবুকে বাংলায় মেসেজ লিখিস কেন, গাঁইয়াদের মতো! ইংলিশ ফন্টে লিখবি। সবাই এখন কেমন লেখে দেখিস না? ট্রেন্ডি হ একটু। ” আমি একটু অবাকই হয়েছি শুনে। বক্তা আমার অল্প পরিচিত, জানি ওঁ যেখানে থাকে সেটা শহর নয়। গাঁইয়া বলতে কী বোঝায় জানি না। হয়ত বাংলা বলা মানুষকেই বোঝায়! তারপর থেকে সেই মহিলার সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখিনি। বাংলা ভাষা দিন দিন অবহেলিত হয়ে চলেছে, আমরা অনেকেই শুদ্ধ বাংলায় লেখা তো দূর কথাও বলতে পারি না। আর বাংলা বানান নির্ভুল লিখতে পারি, এমন কথা সাহস করে বলতে পারি কজন আর! আমাদের মাতৃভাষার সংকট ময় দিন চলছে। কলকাতায় বেশ কিছু জায়গায় ঘুরে দেখেছি দোকান, বাজার, স্কুল, হাসপাতাল কোথায় এক বর্ণ বাংলা অক্ষর নেই। এমনকি মানুষের মুখের ভাষাতেও নেই। অথচ সেখানে অনেক বাঙালী বাস করে, যাতায়াত করে আর তাঁরাও বাংলা বলে না। অন্য ভাষার আগ্রাসনকে নীরবে এভাবে মেনে নেয়। আর এমন করেই চোরাপথে বাংলা ভাষা খোয়া যায়।
ইন্দ্রাণীদি বাংলাদেশ সফর থেকে ফিরে একটা সাবান উপহার দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সেই সাবান আমরাও ব্যবহার করি। কিন্তু আমাদের এখানে নাম লেখা থাকে ইংরাজীতে আর ওই সাবানে লেখা বাংলায়। প্রিয় সাবানের গায়ে প্রিয় ভাষায় লেখা নাম দেখে খুব আনন্দ হল।
বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে শুরু হয়েছিল অবেক্ষণের যাত্রা। অবেক্ষণ পত্রিকার উদ্দেশ্য হল বাংলা ভাষায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা এবং সেই চর্চার মধ্যে দিয়ে নিজেদের জীবনে সাহিত্য এবং ভাষাকে আরো বড় করে পেতে চাওয়া। বাহান্ন বছর পরেও একই উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন ভাবে ওয়েব ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়ে চলেছে নিয়মিত। আমাদের ওয়েব ম্যাগাজিন অন্য সব ওয়েব ম্যাগাজিন থেকে স্বতন্ত্রতার দাবি রাখে। যাঁরা এই পত্রিকায় লেখেন, যাঁরা পড়েন একথা তাঁদের জানা।
অবেক্ষণ গোষ্ঠীর প্রত্যেকের অকৃত্রিম ভালোবাসা, নিষ্ঠায় প্রকাশিত হল ‘শারদ সংখ্যা ১৪২৯’। সমস্ত লেখক, কবি তাঁদের সেরা লেখা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন পত্রিকার পাতা। ভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন কথার লেখাগুলি নানা রঙে রঙিন হলেও, সমস্ত লেখায় আছে শুভ চিন্তা, উত্তরণ আর ভালোবাসার কথা। একটা পরিপূর্ণ শারদ সাহিত্য পত্রিকার আনন্দ পাওয়া যাবে, আমি নিশ্চিত। বিশাল সংখ্যক লেখকের লেখায় সমৃদ্ধ পত্রিকা সম্পাদনার কাজে পরিশ্রম আছে ঠিকই তার থেকে বেশি আছে আনন্দ, এতো এতো লেখা পড়ার আনন্দ। এবার সেই আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছি সকলের সঙ্গে। সারা পৃথিবীতে সমস্ত বাংলা ভাষার মানুষকে উৎসর্গ করলাম আমাদের শারদ সংখ্যা ১৪২৯।
আসন্ন শারদ উৎসব সকলের ভালো কাটুক। ভালোবেসে লিখুন ভালোবেসে পড়ুন। নমস্কার।

One thought on “শারদ সংখ্যা ১৪২৯, সম্পাদকীয়ঃ মন্দিরা গাঙ্গুলী

  1. একেবারে ঠিক। মন্দিরাকে অনেক ধন্যবাদ। আমাদের পূর্বজরা বহু প্রাণের বিনিময়ে ইংরেজকে তাড়াতে সক্ষম হলেও, পরবর্তী প্রজন্মের ইংরেজ প্রীতি অবাক করার মতো। কাজের জন্য ইংরেজি জানতে হবে তাই বলে নিজের শিকড়ের অনাদর ! যে ভাষা জয়দেব থেকে রবীন্দ্রনাথ হয়ে আমাদের কাছ পর্যন্ত এসেছে তাকে কি মূল্যহীন বলা যায় ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *