অণুগল্পঃ চেনা ছবি – ঝুমা মল্লিক

চেনা ছবি
ঝুমা মল্লিক

পনেরো বছর পরে আবার ,শিলং পাহাড়ের কাছে।
পাহাড়ের খুব কাছে ছোট্ট একটি কটেজে ওরা দুজন উঠেছে,
বন্যা ,অমলেশ।কটেজের চারপাশে পাহাড়ি ফুল দিয়ে ঘেরা ।বন্যা পাহাড় খুব ভালোবাসে,ওদের ঘর থেকে পাহাড় ,ঝর্ণা দেখা যায়,ইদানীং বন্যার শরীর খুব একটা ভালো নেই,শরীরে ক্লান্তি অনুভব করে,নইলে পাহাড়ের এতো কাছে এসে , সে কি ঘরে বসে থাকে,পাহাড় যে তাকে টানে।বন্যা জানালার ধারে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে আছে,অমলেশের সাথে একটি কথাও বলেনি ।বৃষ্টি হচ্ছে,চোখের সামনে থেকে পাহাড় দূরে সরে যাচ্ছে, ঘুমিয়ে পড়েছে সে ।যখন ঘুম ভাঙে ,নতুন আলোয় সেজে উঠেছে পাহাড়,বন্যা শুধু বলে ,কাল ভোরে সে একটু হাঁটতে বেড়োবে ।
খুব ভোরে, বন্যা তার সেই সাদা জামদানী শাড়ি আর প্রিয় ওভার কোট পড়ে পাহাড়ের গা বেয়ে যে রাস্তা ,সেই পথ ধরে
হাঁটতে লাগলো,এ পথে হেঁটে যাওয়া একসময় তার অভ্যেস ছিল ।পাইন গাছগুলো সেই আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে,মেঘগুলো খুব কাছে কি যেন বলে গেল, কাছেই সেই লেকটা, বন্যা ওখানে বসবে ।
”অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,শুনতে পায়
ঝরা বকুলের কান্না ব্যাথিবে আকাশ,
সেইক্ষণে খুজে দেখো, কিছু মোর পিছে রহিল সে “
খুব চেনা ,এ তো অমিত।
বন্যা এগিয়ে দেখে ,চিনতে পারে চেনা মানুষকে ,কিছু সময় চুপ করে থাকে ।অমিত চেয়ে দেখে ,গোলাকার লাল টিপ, বন্যা সেই আগের মতোই সুন্দর ।
অমিত জিজ্ঞেস করে কেমন আছো ?বন্যা কোন উত্তর দিলো না , এ জীবনে তার কিছু বলার নেই,শেষবারের মতো শিলং পাহাড় আর অমিত এই তার গোপন ইচ্ছে ছিল।পিছনে ফিরে দেখে অমলেশ ।
অমলেশ নিজেই নিজের পরিচয় দেয়,অমিত কে নেমন্তন্ন করে সন্ধ্যের চায়ের জন্য ।অমিত আসবে কথা দেয় ,বন্যা চুপ করে থাকে ,চোখ ভিজে যায় ।অমলেশের সাথে কটেজে ফিরে আসে,সন্ধ্যায় অমিত আসে,বন্যা আজ সাজেনি,অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে আছে।
অমিত আসে।ওরা চায়ের সাথে উত্তরের বারান্দায় ।অমলেশ জানায় ,বন্যার সময় শেষ হয়ে এসেছে ,ব্ল্যাড ক্যানসার।সেই রাতে বন্যার আর ঘুম ভাঙেনি । শিলং থেকে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *