অনুবাদঃ মীনা কুমারীর শায়েরী – সুধাংশুরঞ্জন সাহা

মীনা কুমারীর শায়েরী
অনুবাদ : সুধাংশুরঞ্জন সাহা

মীনা কুমারী ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক কিংবদন্তি অভিনেত্রী। তাঁর আসল নাম মাহজবীন বানো।ফিল্ম জগতে ট্রাজেডি কুইন হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। দাম্পত্যের ব্যর্থতার কারণে তাঁর মনে ছিল গভীর ক্ষত ও যন্ত্রণা, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর কলমে। তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক সত্যিকারের কবি। তাঁর জন্ম ১৯৩৩ সালে মুম্বাইয়ের দাদারে।মৃত্যু ১৯৭২ সালে। রচনা করেছেন অজস্র উর্দু শায়েরী। এখানে রইলো মাত্র ছয়টির অনুবাদ।

মীনা কুমারী

(৫১)
প্রজাপতি উড়ে উড়ে যাচ্ছে…
আর ফুলেরা যেন হাসছে খিলখিল করে।
রঙ এবং ঘ্রাণের যাদুতে
ভরে যাচ্ছে চারপাশ।

মাতাল বাতাসে পতপত করে উড়ছে আঁচল
আকাশের এপ্রান্ত ওপ্রান্ত কি দুলে উঠছে !
দুলে উঠছে কি গরিমায় !
ফুলের নানা রঙে, নানা পরিবেশের ঢেউ,
ঢেউয়ের সে কী বিচিত্র বাহার !
যেন এক ভুলে যাওয়া অতীত,
অতীতের গল্পে মশগুল।
মনে পড়ে সেই সব দিন।

জীবন, ব্যথার জেলখানায় বন্দী ছিল না।
প্রিয় গান আর ফুলের উপবনে
মুক্তির ডানা মেলে দিয়েছিলাম আমি।

(৫২)
তুতগাছের ডালে বসে মীনা বুনে চলেছে
রেশমের সুতো।
মুহূর্তের পর মুহূর্ত খুলে চলেছে
পাতায় পাতায়।
জাল বুনে চলেছে সে।
এক একটা শ্বাসে তুলছে সুরের ঝঙ্কার,
প্রতিটি প্রশ্বাস খুলে জড়িয়ে নিয়েছে সারা অঙ্গে।
নিজের জালেই সে নিজেকে বন্দী করেছে।
একদিন রেশমের কবি
বুকে দুঃখ নিয়ে, নিজেরই সুতোতে জড়িয়ে
মৃত্যুবরণ করবে।

(৫৩)
শুনশান রাত।
শূন্য হৃদয় অঙ্গন।
আকাশ নক্ষত্রশূন্য, পৃথিবী জোনাকিশূন্য।
শুধু আমার কাঙ্ক্ষিত চোখে
টিমটিম করে জ্বলছে কয়টি দীপ।
তুমি দেখলে বলবে,
এতো দীপ নয়, অশ্রু।

সেই তৃষ্ণা হঠাৎ জেগে উঠলে মনে,
ভালোবাসার আগুনে
দাউদাউ জ্বলে ওঠে আমার জিভটা।

আবার বরফের মতো কষাঘাতেও
জ্বলেপুড়ে ছাই হয় আমার সারা শরীর।
এই আকন্ঠ তৃষ্ণায় যদি কেউ বিষ ঢেলে দেয়,
তবেই তৃপ্ত হবে আমার তৃষ্ণা।

(৫৪)
যখন আমার গল্পকথায় তার নাম থাকে না,
তখনই শুরু হয়,
কিন্তু শেষ হয় না কখনো।

(৫৫)
অসমাপ্ত তুষারপাতের রাত হোক,
কিংবা খুশির চাঁদনি রাত,
অথবা বেদনাময় উদাস অন্ধকার রাত,
সব রাতই মায়াবী।

যখন জানা সবকিছু বদলে যেতে থাকে,
তখন আর চেনা লাগে না তাকে।

(৫৬)
কেউ কোনোদিন বর্তমানকে দেখেনি।
কেউ কোনোদিন বর্তমানকে সেভাবে
পরখ করেনি।
আর ভবিষ্যৎ এতোটাই দূরে
যে, কোনো হাতই পৌঁছতে পারেনি ততোদূর।
এখন তো আমি
অতীতের মধ্যেই খুঁজে পাই নিজেকে।

One thought on “অনুবাদঃ মীনা কুমারীর শায়েরী – সুধাংশুরঞ্জন সাহা

Leave a Reply to Soma Mukherjee Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *