নারী এবং পুরুষ উভয় নিয়েই জগৎ সংসার। প্রকৃতিগত ভাবে পুরুষের শারীরিক শক্তি বেশি। নারী কোমল নরম। কিন্তু একজন নারীই জন্ম দেয় নারী এবং পুরুষকে ,বলা উচিৎ ছিল মানুষকে। ভুলে গেলে হবে না পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী,সবথেকে বুদ্ধিমান মানুষকেও প্রসব করেছিল এক কোমল মন ও শরীরের নারী, মা। মা তাঁর সারাজীবনের সমস্ত কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতাকে একজোট করে সন্তানের জন্ম দেয়। ছেলে মেয়েতে প্রসব বেদনার ফারাক বোঝে না। শিশুকে বড় করার সময় মেধার গুণগত মান কখনো আলাদা মনে হয় না মায়ের কাছে, শিক্ষকের কাছে। তবু মেয়েকে রোজ বিশেষ করে শেখাতে হয় সাবধানে থাকার পাঠ। যে মেয়ে পাইলট হবার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাকেও আকাশে একা ওড়ার আনন্দ-গল্প থামিয়ে “পাশের সরু গলিতে সন্ধের পর একা যাস না” বলতে হয়। পুরুষ তো কোন আজব জীব নয়, তাকে কেন ভয় পেতে হবে? পুরুষ তো বাবা, ছোটবেলায় যাঁর চওড়া কাঁধে চড়ে ঘুরে বেড়াত মেয়েটি, যাঁর আঙ্গুল ধরে পথ হাঁটলে নিরাপদ মনে হতো সবথেকে বেশি। পুরুষ তাঁর দাদা, ভাই, কাকা, মামা; কতো আদরের কতো আপন তাঁরা। পুরুষ সেই বন্ধু যার সঙ্গে মনের সব কথা বলা যায় আর পুরুষ সেই একমাত্র বিশেষ জনও যাকে শরীর মন সমস্ত দিয়ে ভালবাসা যায়। তবে কেন ভয় পাব, কেন ভয় পেতে হবে পুরুষকে, কোন্ পুরুষ তারা? মায়া মমতার অনুভূতি হীন কারা এরা! পৌরুষ বলতে বোঝে শুধু নারীর অপমান! মাথার মধ্যে ব্রেইন নেই! বুকের খাঁচায় হৃৎপিণ্ড আছে হৃদয় নেই! নারীর জরায়ু ছিল প্রথম বাসগৃহ, মনে নেই! নারীর প্রসব পথ ছিল তোর আলো দেখার রাস্তা, মনে পড়ে না! প্রথম খাবার ছিল মায়ের স্তন নিঃসৃত দুধ! শুধু লিঙ্গ আর অন্ডকোষ আছে! তাই নিজেকে পুরুষ মনে করছে! কোনভাবেই ধর্ষক একজন পুরুষ হতে পারে না। নিকৃষ্ট জীব, নপুংসক। শরীরের সঙ্গে মনকেও ছিঁড়ে ফেলে যে পৈশাচিক সুখ হয় ওই রাক্ষসদের তার কোন নাম হতে পারে না! আইন কানুন যাই থাকুক পৃথিবীর জল হাওয়া ওদের জন্য হতে পারে না।
ভারতবর্ষে ধর্ষণের শাস্তি জেল ( ১০ বছর বা বেশি) এবং জরিমানাও হতে পারে। মৃত্যুদণ্ড নেই! যদি ধর্ষণ করে খুন করা হয় তবে একমাত্র মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তাও অনেক প্রমাণ সাপেক্ষ। অনেক ক্ষেত্রেই উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে মুক্তি পেয়ে যায় ধর্ষক। তাই, তাড়াতাড়ি সমস্ত প্রমাণ সহ নিয়ম মেনে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে হবে।
আমরা আরো কঠোর শাস্তির আবেদন করতে পারি।এমন কিছু দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি যাতে ধর্ষণের চিন্তাও মনে আসবে না পিশাচদের। শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সমস্ত মানুষের কাছে আবেদন ধর্ষিতার পাশে দাঁড়ান কখনোই ধর্ষণকারীর পক্ষ নিয়ে কোন রকম কথা বলবেন না।
কিন্তু, আমরা সভ্যতার শিখরের দিকে এগিয়ে চলছি, এমন বর্বরতা কেন ঘটবে? আট মাসের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা কেন নিরাপদ থাকবে না এই দেশে? সমস্ত নারীর হয়ে আজ একটিই দাবী রাষ্ট্রের কাছে আর পৃথিবীর কাছেও, আর একটিও ধর্ষণ নয়। কখনো নয়।
সম্পাদকীয় লিখতে বসে আজ এমন কথাই লিখতে হল যা নিয়ে আতঙ্কে কাটে বেশিরভাগ মেয়েদের দিনরাত। সময় অনন্ত, আবহমান। শুরু-শেষ নেই তবু পৃথিবীর পরিক্রমায় বছর ঘোরে। বাংলায় নববর্ষের সূচনা হয় বৈশাখ মাস থেকে। এখন বৈশাখ। বৈশাখ মানে বাঙালির মনপ্রাণ জুড়ে একটা তারিখ দখল করে থাকে, ২৫শে বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। তাই অবেক্ষণ পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যা উৎসর্গ করা হল কবিগুরুকে। পড়ুন এবং পড়ান রবীন্দ্র সংখ্যা, বৈশাখ ১৪২৯। সমস্ত লেখক এবং পাঠককে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। সকলে ভালো থাকুন, নতুন বছর শুভ হোক। ভালোবেসে লিখুন ভালোবেসে পড়ুন। নমস্কার। ১৭ই এপ্রিল, ২০২২
সম্পাদকীয়ঃ বৈশাখ ১৪২৯ – মন্দিরা গাঙ্গুলী

বলিষ্ঠ সম্পাদকীয়। লেখাটির সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করি।অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন…
ধন্যবাদ জানাই
সহমত। খুব সুন্দর লিখেছেন।
খুব সংযত লেখা তবে বলিষ্ঠ উচ্চারণ। হ্যাঁ একটা প্রতিবাদ তো হওয়া উচিত।
অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
একেবারে সহমত। সব পুরুষ ধর্ষক নয়। পুরুষ নারী পরিপূরক। মানবিক চেতনাবোধের বিকাশ হোক। শান্তি ফিরে আসুক । বলিষ্ঠ লেখনী আপনার। সমৃদ্ধ হলাম।