গ্রামনাম সিরিজ
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
১.
মধুনাম
নামফলকে মধুতটী দেখে
সেখানে একটি নদীর প্রত্যাশা
অমূলক নয়।
মধুর প্রকারভেদের কথা আপনার
মনে পড়াও সম্ভব।
হয়তো সেখানে অভাবগুলো মধুতে ঢাকা
আর তার বুড়োবটের অজস্র ডালে
বুনো মৌচাক
সাজানো মধুর ভাণ্ডার।
সাবধান বাণীটি ভোলা যাবে না,
বুনো মৌমাছির হুল ও তার বিষ মারাত্মক।
তবু জানি শীধুটানে ঘোর মাদকতা।
২.
বাউল
নদিয়াপুর লেখা দেখে আমার মনে পড়ে
নদিয়ার মাটি আমাকে ক্রমাগত টানে,
সে টান অবশ্যই চৈতন্যপ্রণোদিত মানবিক
ও পারিবেশিক।
জন্মভূমির মতো দরাজ আবেগের বন্যাজল
অবিরল ধেয়ে আসে।
সেই কবোষ্ণকোণ,তিক্তাঙ্গন বা
নির্বাসনে যত সুখ তার জন্য বাউল হতে পারি।
কপালে ধুলোতিলক আবেগবিহ্বল গৌরানন্দ সুখে
ভেসে যাবো স্বার্থবোধ ভুলে……
৩.
নদীর মা
ভৈরবপুরের বাঁকে অবিরাম ডাকে
যে শান্ত জলাধার সে এক নদীর গর্ভধারিণী
দিঘলবুকের টানে মা গাংদোয়া কন্যা শালী বা
শালিনীকে পুষ্ট করে চলেছে কত যুগ…..
বড়ো নিরিবিলি কালোজলে বাঁধা
সবুজের মুখ দেখাদেখি
দু-একটি ডাহুকের আলতো পায়ের আদর
নম্র সন্ধ্যার প্যাঁচাডাক।
পরিপাটি জলে বেহুলার ভেলা তো ভাসে না,
মায়ারাতে ভেসে থাকে চাঁদের চিকন।
৪.
গোবিন্দপ্রসাদ
গোবিন্দধাম।
দেখি হেঁটে যান বাঁকুড়ার গান্ধি
কোঁড়ো পাহাড় ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাঁর উন্নত বরাঙ্গ
ঋজু মেরুদণ্ডে হেঁটে যাচ্ছেন পাথুরিয়া পথ ভেঙে
প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় মুখ কড়ারোদ তুচ্ছ করে
চলেছেন দূর পরিক্রমায়
গড়ে তুলতে হবে দেশ ও সমাজ রাঢ়ভূম
মানুষের পাশে থেকে তাদের কল্যাণ
আর শিকলছেঁড়ার ব্রতে
পার হবেন অনেক বন্ধুর পথ
এখনো অনেক কাজ যে বাকি।