অনুবাদঃ বাবুষা কোহলী – স্বপন নাগ

ব্রহ্মান্ড থেকে আসা তার আগমনবার্তা
বাবুষা কোহলী

অনুবাদঃ স্বপন নাগ

বাইরে জুতো-চপ্পল খুলে রেখে
যেভাবে মানুষ মন্দিরের ভিতরে ঢোকে,
যেন সেভাবেই সমস্ত আচার-বিচার সরিয়ে
অপেক্ষা পা রাখে মাটিতে।

অপেক্ষায় পাগল হয় না কেউ,
বরং পাগলের মধ্যেই বাস করে অপেক্ষা –
যেমন রাত পাগল আর চাঁদ অপেক্ষা,
যেমন বাগান পাগল তো ফুল অপেক্ষা ;
কখনো রাস্তাকে দেখো
অপেক্ষার আলোয় উজ্জ্বল রাস্তা
পেরোতে পেরোতে দেখো
অপেক্ষারই সুগন্ধে আকুল সে !
পাথরে হোঁচট খেয়ে খুলে যায় দৃষ্টি
কখনো বুজেও আসে দু’চোখ :
হোক বা না-হোক, তার নামই দুনিয়াদারি।
আর চোখ বুজে আসে যে-হোঁচটে
জেনো, সেই পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছে
ঈশ্বরের ঘরের ঠিকানা ;
যে-পথ চলে যায় তার ঘর অব্দি
রক্তে নেই তার স্তুতি, আছে অশ্রুতে সিক্ত।

দেবালয়ে থাকেন না ঈশ্বর,
ঈশ্বরের মধ্যেই থাকে দেবালয়।
যেমন, আমার মধ্যে নেই কোনো প্রেম,
আমিই বরং ডুবে থাকি প্রেমে।
অপেক্ষার আলোতে স্পষ্ট হয় ক্রমে –
এই পৃথিবীর মাটিতেই খেলা করে
আমার এ সামান্য উচ্চতার ছায়া।

এরপর, যখনই দেখবে
এই চাঁদ ফুল কিংবা ঐ রাস্তার পাথর
দেখো একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে,
রাতের বাগান জুড়ে ফোটা ফুলের মত দেখো
দেখতে পাবে, হাজার চাঁদের রঙিন হাসি।
তারপর, অর্ধেক চাঁদের রস নিঙড়ে
দুটি হাতে মেখে নিও আতর,
ফুলকে দিও অর্ঘ্য
আর রাস্তার পাথরে ঢেলো জল।

শব্দদের অর্থে মিশে-যাওয়া কোন উদারতা নয়,
যথার্থের অনুভূতি মাত্র ;
শব্দকোষ থেকে কিছু দূর হেঁটে
সমস্ত শব্দেরা আসলে বদলে যায় অপেক্ষায় –
যেমন সঙ্গীত শোনার অপেক্ষা,
দৃশ্য দেখার অপেক্ষা,
গমের পেকে-ওঠার অপেক্ষা …

পাখিদের কাকলি ছাড়া
কোনো বৃক্ষই পায় না তার পূর্ণতা।
পাতাদের সম্পূর্ণ সবুজপ্রাপ্তির জন্য তাই
অপেক্ষা করে সে পাখিদেরই।

এই অপেক্ষার রীতিনীতি শিখতে শিখতে
আমাদের বয়স পেরিয়ে যায়,
অবিরাম জলের ঝাপটায় শান্ত রাখতে হয় চোখকে,
আর, তখনই পরিষ্কার হয় ফারাকটুকু –
পাগল বসে আছে পারে, নদী তার অপেক্ষায়।

ভারতীয় জ্ঞানপীঠ-এর দশম ‘নবলেখন পুরস্কার’-এ সম্মানিত করা হয়েছে কবি বাবুষা কোহলী-কে। এমন একজন কবি যাঁর কবিতায় ঝকঝকে উচ্চারণ হিন্দি কবিতার জগতে এ এক ব্যতিক্রমী কন্ঠস্বর যেন ! আধুনিক হিন্দি কবিতায় তাঁকে নিয়ে তাই চর্চাও শুরু তার পর থেকেই। জটিলতাহীন সরাসরি প্রাঞ্জল ভাষায় কথাকে কবিতায় প্রতিষ্ঠা দেবার আশ্চর্য দক্ষতা তাঁর।
মধ্য প্রদেশের কটনি শহরে জন্ম কবি বাবুষা কোহলী-র, ১৯৭৯ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেম গিলহরী দিল আখরোট’-এই এমন সম্মানপ্রাপ্তি সন্ধিৎসু করে তুলেছে হিন্দি কবিতার আগ্রহী পাঠককে। পেশায় কবি জবলপুরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়-এর শিক্ষিকা।
অনূদিত কবিতাটির মূল শিরোনাম ‘উসকে আনে কী খবর কৌন-ও-মকাঁ
সে আঈ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *