অনুভূতি
মলয় চৌধুরী
সকাল থেকেই মঞ্জরীর মাথাটা গরম হয়ে আছে। আটটা বেজে গেল, এখনো মহারাণীর দেখা নেই। এমনিতে মাসে তো পাঁচ-ছটা ডুব মারা আছেই। তার উপর বিশেষ বিশেষ দিনে না আসাটা অসহ্য।
আজ মঞ্জরীর মা, ভাই আর ভাইয়ের বৌ আসবে। একটু গুছিয়ে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাল তো পই পই করে বলে দেওয়া হয়েছে! তবু মহারাণীর এখনো দেখা নেই। এত রান্না একার হাতে অসম্ভব!
সাড়ে আটটার সময় সীমারাণী এল। হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘরে ঢুকেই কাজে হাত লাগালো। সকালের জলখাবারের লুচির জন্য ময়দা মাখতে হবে। সঙ্গে আলুভাজা আর বেগুনভাজা, বৌদির ভাই পছন্দ করে। দুপুরের জন্য ফ্রায়েড রাইস, কষা মাংস, চাটনি। বৌদির মা মাছ-মাংস ছোঁন না, তার জন্য পনিরের আইটেম। দুই হাত নিয়ে রান্নার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লো সীমা।
বৌদির মুখ হাঁড়ি। সীমা চুপচাপ কাজ করে চললো। ন’টার সময় মঞ্জরীর বাড়ির লোকজন এসে গেল। পনের মিনিটের মধ্যে তাদের জলখাবারের প্লেট সাজিয়ে দিল সীমা।
ফ্রায়েড রাইস আর মাংসও রান্না হয়ে গেল। মঞ্জরী রান্নাঘরে ঢুকতেই সীমা কাতর চোখে বললো ” এক ঘন্টার জন্য আমাকে ছাড়বে বৌদি? একটু বাড়ি যাব। “
মঞ্জরী ঝাঁঝিয়ে উঠলো, ” এলিই তো দেরী করে! বাকী রান্নাটা করবি কখন? “
সীমা আঙুলে শাড়ির প্রান্ত পাকাতে পাকাতে বললো, ” ফ্রায়েড রাইস আর মাংস হয়ে গেছে । পনির আর চাটনিটা আমি ঘুরে এসে করে দেব বৌদি। “
” কিন্তু তোর এমন কি দরকার যে তুই কাজ ফেলে ঘরে যাবি? “
” আসলে আজ মেয়ের জন্মদিন তো! সকাল সকাল পায়েসটা করে এসেছি। এখন গিয়ে মেয়েটাকে দুটো লুচি ভেজে দেব। ও আবার গরম ফুলকো লুচি খুব ভালবাসে। একটু যেতে দাও না বৌদি! “
মঞ্জরী বিহ্বল হয়ে গেল। শুধু বললো, ” যা, তোকে আজ আর আসতে হবে না। পনিরটা আমি নিজেই করে নেব। আর শোন, এই টাকাটা রাখ। মেয়েকে কিছু কিনে দিস। যাবার সময় একটু মাংস নিয়ে নে, সামনে বসে মেয়েটাকে খাওয়াবি। “
সীমা বাড়ির দিকে দৌড় লাগালো।
দারুন, খুব ভালো লাগলো।