অমৃতং গময়
সৌমী আচার্য্য
জড়িয়ে বসি চাঁদআলো।মুখের কোল জুড়ে বাসি ঘুম,চোখের উঠোনে স্বপ্ন তখনো খেলা করে।সব সম্পর্ক খোলসের মতো ছেড়ে রেখে এখানে এসে বসতে হয়।সময়ই সব।জাগতিক যা কিছু সমস্তটাই বয়ে যায়।এই কিনারের ঠিকানা দিয়েছিল আমলকি ফেরি করা জীবন।জীবনের বিক্রি করার ঔদাসীন্য আমাকে আকর্ষণ করতো।মনে হত ও নেই কোথাও নেই।দেখতে পাচ্ছি বটে কিন্তু আসলে ও নেই।হাওয়ায় উড়তে থাকা দুপশলা কেশদামকে তাচ্ছিল্য করে যৌবনে বৈরাগ্যের কন্ঠী নিয়েছে জীবন।স্মিত হেসে বলে,যেদিন ঘুম ভাঙবে কিন্তু উঠতে পারবা না,বলতে পারবা না,আছি গো,আছি।সেদিন টুপ করে খসে পরবা এই কিনারে।তোমায় দেখে সবাই বুঝবে তুমি আসলে নাই।
বিক্রি শেষে পরের স্টেশনে নেমে যায় আর পিছন ফেরেনা।ওর খড়ি ওঠা ফাটা পায়ের ধুলো মিশে যায় হাজার অচেনা পায়ের রেখায়।ভাবি পেটের বালাই ঝেড়ে ফেলার শিক্ষা ও পেলো কোথায়?এক সুতো জমির জন্য আশেপাশের বটবৃক্ষরা নাগাড়ে ঝগড়া করে অথচ এই শুষনি শাক মহা আনন্দে সর্বস্ব অধিকার ছেড়ে দেয় কি মন্ত্রে?নিঃসঙ্গ রাতের কিনারে বসে দেখি হেঁটে চলেছি দূর দিগন্তে। আমার সর্বস্ব পোঁটলায় বেঁধে উল্টো পথ ধরেছে সময়।দাউদাউ আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যাচ্ছে আমিত্বের অহংকার।ছায়ার মতো নিঃসঙ্গ হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।এই পথ ক্লান্ত হয়ে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দাঁড়ায় জীবনেরএক কামরার টিনের ঘরের সামনে।ভয় পেয়ে ডাকি,জীবন!আমি কি তবে মরে গেছি?ভারি উদাস ভাবে বলে,সবাই মরে আছে।যে বোঝে সে বোঝে।যে বোঝেনা,সে বোঝেনা।আমি ফিরে আসি জল পেরিয়ে।
এত জল কোথা থেকে এসে জমা হয় আমার চেনা পথে কে জানে?মাথা উঁচু করে তারা দেখি।গাছেরা গুণগুণ করে ওঠে।আমার খুব ঘুম পায় বহুদিন পর।যে হেঁটে চলে যায় আমায় ছেড়ে সে আমার কে জানিনা।তবে চেনা ভীষণ চেনা।যেন বহুবার দেখেছি।আমার গা থেকে খসে পরে লোভ,হিংসা,আমিত্ব।কেবল পা দুটোতে মায়ার শেকড় বাড়তে থাকে।যে যায় সে ম্লান মুখে চায়।ফিসফিস করে বলে,চলে গেলাম তবু চিনলে না।আজীবন সাথে সাথে রইলাম তবু অজানা থেকে গেলাম।জীবন কালো ছিরকুটে দাঁতে ভেংচি কাটে।তাচ্ছিল্য করে।মায়া!মায়ার নামে যত লোব।লোবেই শেষ।চিনবা না দেখবাও না।একদিন ফুরুৎ করে উড়ে যাবে।ব্যাস্ সব ফক্কা।
রাতের কিনারে বসলে অসহায় লাগে,তৃপ্ত লাগে,ভয় লাগে আর মুক্তি যাপন করি।চটচটে আঠার মতো দুঃখ গুলো তারার গায়ে ঘষে মেজে তুলে নেওয়াই দস্তুর।ভেসে আসে কানে,আজ জানে কি জিদ না করো।বুকের ভেতরে ঢেউয়ের পাহাড় জমে ওঠে।কোথায় যাব আমি সব ছাপিয়ে?কেন যাব?এই যে আছি।ভীষণ ভাবে আছি,নেই হতে চাই না জীবন!নেই হয়েই আছো গো।কি যায় আসে তুমি না থাকলে।আজ গেলে কাল দুই দিন।তারচে আসো পথ খুঁজি।কোন পথ খুঁজবো?যে পথে নিজেরে চেনা যায়।বেঁচে থাকতেই সব ছেড়ে চলে যাই সবের মধ্যে নেই হয়ে যাই।এই অনুশীলন করতে রোজ নেমে আসি রাতের কিনারে।গভীর অন্ধকারের আশ্রয়ে।
খুব সুন্দর লিখেছেন। বড় ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ জানবেন
ভালো গদ্য। দুঃখটাকে বেচে দিতে পারেন। দেখবেন , হয়তো ভালো লাগবে।
আমার প্রাপ্তি
বেশ ভালো লাগলো ।
অহৈতুকী অনন্ত প্রেম। যার জোড়ে সব ছেড়ে দেওয়া যায়। সব পাপ ক্ষমা পেয়ে যায়। সব সুখ ,দুঃখ, বেদনা – আনন্দ হয়ে যায়।
বড় সুন্দর বললেন