চারটি কবিতা
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়
(১)
প্রত্যাখ্যাত কবিতারা
হঠাৎ ভাঙে ঘুম কান্নার শব্দে;
এতো রাত্রে কারা !
বিছানা ছেড়ে রান্নাঘর, বৈঠকখানায় খুঁজি ।
বাড়ির পিছনে নামি,
উঠোনেতে ফিরে ঘামি ।
ভয় জমে, কেউ কোত্থাও নেই ।
অথচ আসছে আওয়াজ ঘর থেকেই ।
আমার সৃজনঘরে, বিজনঘরে থামি,
দেখি কাঁদছে –
ফেরৎ আসা যত অনাদৃত, অপ্রকাশিত আমার কবিতারা ।
বলে প্রতিরাত ঘুমের ওষুধ দিয়ে যেতে ।
(২)
আমক-শ্মশান
স্বর্গারোহণে মতি তবু নিরয়গমনে বাধ্য,
গেছে সাধ্য !
আমি বিদেহী, আমি দৈন্য, আমি গর্হ্য ।
আগের মতই আমি কি?
নাতো !
বুঝি শুধুই চেতনা !
দেখি আমার লাশের ওপর রবাহূত জলৌকা, জিহ্মগ,
শিয়াল, শকুন ছিঁড়ে খাচ্ছে একে একে কলিজা, অন্ত্র ।
তবু নেই ঐন্দ্রিয়ক মন্ত্রণা, নেই ঐহলৌকিক যন্ত্রণা!
পাশে ও দেহ কার?
ও কি বিধর্মী?
না পেয়েছে মুখাগ্নি, না মাটির আদর !
তবে কি নিস্যন্দী পারসিক?
ছিল অপঘাত অপছন্দ !
আমার মতই কতো অব্যক্তরা পায় পরাকৃত পরাশ্রয় ।
আঘাতের দেহান্তর বুঝি স্থাতব্য গর্ভেরও ইচ্ছাধীন,
তাই ঘোরে সন্তানবাসনার ঘরে ঘরে,
নিরন্তর এষণা ।
কতোনা জঠরযন্ত্রণা বলে – “বিদ্বেষ ভালোবেসোনা,
এসোনা এখানে এসোনা ।”
সে দেশনা থাকে অশ্রুতই, দেহ ও দেহাতীতের মাঝে ।
ভাবে আত্মারা আশ্রিত যেন,
তবু চেপে বসে প্রাণপ্রতিষ্ঠার দায়ভার !
দেহাত্মপ্রত্যয় ঘুচিয়ে সে ঘূর্ণির শ্মশানবৈরাগ্য আসে –
কাপালিকের রত্নে, তির্যকযোনির যত্নে, নিরপত্যের স্বপ্নে ।
(৩)
পত্রিকা-শৃঙ্খল
(ক)
কয়েকটা গ্রাম আর দুটো মফঃস্বল, ব্যস?
না পত্রিকা, না;
চাই বঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আনাচ-কানাচ আর ‘বঙ্গদর্শন’ তুল্যতা ।
অক্ষরে ফিরবি তুই আর অক্ষকে আমি: সম্পাদক ।
খ্যাতি হবে এমন যে কবিরাও চাইবে আনুকূল্য ।
যদি ভাবিস এসব দম্ভোক্তি;
তবে হ্যাঁ, আমি সেরকম ।
(খ)
পাতা, তাতে ছাপা অক্ষর, যুক্তির তর্জনীতে হঠাৎ প্রযুক্তির ছোবল !
না বাড়ছে পরিচিতি,
দুরূহ মহানগরকেন্দ্রিক প্রতিযোগ ।
বিনিয়োগ নাহয় হল, বিনিময়ে গ্রাহক, পাঠক ?
বলবে একে আর শুনবে আরেক, তবেইনা রাজযোটক ।
আজ বিভূতি কুড়িয়ে বিনীত হবে শেষ সম্পাদকীয় ।
(৪)
বহির্বিমুখ
সবাই রাজা’র দেশে বিকেন্দ্রীকরণ চাইতে যাওয়া –
কমাতে দায়ভার ।
কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ আর তৎপরতার বাহানায় ।
তারপর আর কি ?
অযোগ্য কর্মী, সমন্বয়ের অভাব, দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি ।
কৈফিয়ত না দিয়েই ফের কেন্দ্রের শরণাপন্ন ।
যেমন সমকেন্দ্রিক বৃত্তের পরিধিতেই আশ্রয় আমাদের,
কয়েকটা জীবন কেন্দ্রের কাছে যায়,
বেশিরভাগই তো দূরে।
আসলে ধূমকেতু; ভাবজগতে ছুটে বেড়ায়-
চেতন-অবচেতন-অচেতন – সেই একই খেলা।
পরমাত্মায়, মানে কেন্দ্রেই ফিরে আসে,
আসতেই হয় ।
উফ! কি দর্শন!
তবু যে মেয়েটা ছোট থেকেই আত্মমগ্ন –
শুধু তার গায়েই আগুন লাগাই বহির্বিমুখতার !
সুন্দর। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।😊