বাবার আঙুল
পৃথ্বীশ দত্ত
আমাদের পড়শি গ্রামে নদীর তীরে
ফি-বছর বসতো বারুণি মেলা
যেকোন উৎসবাচার নিয়ে এত উচ্ছাস
এত প্রমোদ এত আহ্লাদ
বাৎসল্য বশত বাবা তাতে ইন্ধন দিতেন
—আজ মেলায় যাবো ।
মেলাপালা নিয়ে গ্রামীণ আনন্দ আদিখ্যেতা
জনজোয়ারে ভেসে যেত মনুতট,
বাবা স্নেহ তর্জনি এগিয়ে দিয়ে বলতেন–
ধর, ছাড়বি না ।
হারিয়ে যাওয়ার ভয়কে আঙুল দেখিয়ে
ভিড় ঠেলে বাবার সঙ্গে বারুণি পরিক্রমা,
বাহারি দোকান খেলনা, মাটির পুতুল–
বাঘ ঘোড়া হরিণের মৌন আকর্ষণ,
ময়রার অস্থায়ী দোকান থেকে জিলিপির গন্ধ,
ত্রিপাল বাঁধা মণ্ডপ থেকে মেলা সিংহের
পদাবলীর পংক্তিমালা,
সাথে তার দুই মেয়ে দোহারী,
তখনও বালিকার প্রতি পূর্ণগ্রাস গহ্বর জন্মায় নি !
সেদিকে আমি মনাবিষ্ট নই,
তালপাতার সেপাই নাচিয়ে যে ছেলেটা
চলে গেছে পাশ দিয়ে,
ঘাড় ঘুরিয়ে আমি দেখতে চাইছি
ছেলেটিকে নয়, তালপাতার সেপাই ।
বাবার সতর্কবাণী মুহুর্মুহু– আঙুল ছাড়বি না,
আমি, না বাবা, কে বেশি ভীতু !
যে তর্জনি অনুশাসনে ভয়ংকর
সেই তর্জনি নিরেট নিরাপত্তা হয়ে ওঠে
বারুণির মাঠে ।
অথচ আজ শত শত হাত প্রসারিত
(আঙুলও যে উঠছে না, এমন নয় ! ),
আমি তবু একটি আঙুল আজও খুঁজে বেড়াই
বাবার তর্জনির মতো বিশ্বস্ত ।
“সেই তর্জনি নিরেট নিরাপত্তা হয়ে ওঠে” এই সত্যানুভূতি মন ছুঁয়ে দিলো
বাবা – নিরাপত্তা ভরসার নাম। চমৎকার….
কী ভালো যে লাগল লেখাটা!! সেই আঙুলের বাঁধন ছেড়ে গেছে ভাবলেই কষ্ট হয়।
অপূর্ব প্রকাশিত কবির মন ছুঁয়ে যাওয়া কবিতায়। সত্যি ভালো লাগলো কবিতাটা।