প্রবন্ধঃ বহির্বঙ্গে রবীন্দ্রনাটক – মধুসূদন দরিপা

বহির্বঙ্গে রবীন্দ্রনাটক
মধুসূদন দরিপা

রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রভাব যেমন সমগ্র বিশ্বে আজ শতাধিক দেশ জুড়ে প্রবহমান । তেমনই রবীন্দ্রনাথের নাটকও । আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ভাষায় তাঁর নাটকের অনুবাদ ও অভিনয় যেমন হয়েছে, পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন ভাষার বহু নাটকে রবীন্দ্রনাটকের প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে । অন্তর্দেশিয় পরিসরে বহির্বঙ্গে রবীন্দ্র নাটকের বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত নিবন্ধের আলোচনা দুই প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা ও অসম বাদে হিন্দী, গুজরাতি, মলয়ালম ও মরাঠী ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে । বলা বাহুল্য যে, সংশ্লিষ্ট রাজ্য ও তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নিবিড় যোগাযোগ ছিল ।

আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা । বাংলার সঙ্গে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক । দুই প্রতিবেশীর ভাষারীতির সাদৃশ্য ও সংস্কৃতির সামঞ্জস্য মিলে মিশে সাহিত্য জগতে একটি সুদৃঢ় যোগসূত্র নির্মাণ করেছে । বলা বাহুল্য এই মিলনের কান্ডারী স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ । রবীন্দ্রনাথের খুব বেশি নাটক ওড়িয়াতে অনুবাদিত হয়নি । এর মূল কারণ হল শিক্ষিত ওড়িয়া অধিকাংশই বাংলা ভাষা জানেন, ফলত তাঁরা মূল রচনাগুলি পড়ে রস আস্বাদন করেছেন এবং অনুবাদে তাকে ভাষান্তর করার প্রয়োজন বোধ করেননি । তবুও মূলতঃ সাহিত্য অকাদেমির পরিকল্পনায় রবীন্দ্রনাথের নিম্নে উল্লেখিত নাটকগুলি ওড়িয়া ভাষায় অনূদিত হয়েছে ।

১। কাবুলিওয়ালা –প্রাণবন্ধু কর (১৯৫৫)
২। রক্তকরবী — প্রফুল্ল পট্টনায়ক (১৯৫৭)
৩। রাজা — বসন্ত কুমার শতপথী (১৯৫৭)
৪। চিত্রাঙ্গদা — প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (১৯৬১)
৫। ডাকঘর –সুনন্দ কর (১৯৬১)
৬। চিরকুমার সভা –কার্তিক কুমার ঘোষ (১৯৬১)
৭। ঐ —- যতীন দাস (১৯৭৫)
৮। বিদায় অভিশাপ –সচ্চিদানন্দ রাউত রায় (১৯৭৫)
৯। গান্ধারীর আবেদন –ঐ (১৯৭৫)
১০। কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ –ঐ (১৯৭৫)
১১। মুক্তধারা — বৈকুন্ঠনাথ পট্টনায়ক (১৯৭৫)

ওড়িয়া গীতিনাট্যে রবীন্দ্রনাথের ব্যপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন ড. নিত্যানন্দ শতপথী । ‘ কচ ও দেবযানী ‘ কাব্যনাট্যের প্রভাব আছে বৈকুন্ঠনাথ পট্টনায়ক রচিত ‘ উপেক্ষিতা ‘ কাব্যনাট্যে । দেবদত্ত এই নাটকে পড়তে আসে মগধ বিদ্যাপীঠে । সেখানে কর্মরতা শ্রমিককন্যা সপ্তদশী ছায়ার প্রতি সে অনুরক্ত হয় । কিন্তু তাদের মিলন হয় না ।

কমললোচন মহান্তির ‘ মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র ‘ নাটকে রবীন্দ্র প্রভাব আছে । কুলমনি মহাপাত্র লিখেছেন হাস্যরসাত্মক নাটক ‘ বিজ্ঞাপনর অত্যাচার ‘ । রবীন্দ্রনাথের ‘ খ্যাতির বিড়ম্বনা ‘ নাটকের বক্তব্যই পরিস্ফুট হয়েছে এই নাটকে ।

১৯৬৮ সালে জাতীয় গ্রন্থাগার আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের ‘ শুভা ‘ গল্পটি নাট্যরূপ দিয়ে মঞ্চস্থ হয় । শুভার ভূমিকায় অভিনয় করেন প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী অলকা কানুনগো । কার্তিক চন্দ্র রথ রবীন্দ্রনাথের ‘ নৌকাডুবি ‘ উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়ে তাঁরই পরিচালনায় কটক শহরের কলা বিকাশ কেন্দ্র রঙ্গমঞ্চে নাটক মঞ্চস্থ করেন ১৯৭৫ সালের আগষ্ট মাসে । স্থানীয় প্রযোজক দলটির নাম মৌসুমী সাংস্কৃতিক সংস্থা ।

অনুরূপভাবে আর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র অসম । অসমীয়া নাট্যসাহিত্যের সঙ্গে রবীন্দ্র নাটকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা যায় । অসমীয়া ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্র নাটকের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নরূপ ।

১। তপতী –অতুলচন্দ্র হাজারিকা (১৯৬১)
২। বিসর্জন — ঐ (১৯৬৫)
৩। নটীর পূজা — রাম গোস্বামী (১৯৬১)
৪। রক্তকরবী –কেশব মহন্ত ((১৯৬৩)
৫। রাজা — মহেন্দ্র বরা (১৯৬৩)
৬। মুক্তধারা — নবকান্ত বরুয়া ( ১৯৬৩)
৭। গান্ধারীর আবেদন — রত্নকান্ত বরকাকতী (১৯৬৪)
৮। বিদায় অভিশাপ — ঐ (১৯৬৪)
৯। কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ —ঐ (১৯৬৪)
১০। চিরকুমার সভা — সৈয়দ আবদুল মালিক (১৯৬৫)
১১। ডাকঘর — নির্মল প্রভা বরদলৈ (১৯৬৫)

বিশিষ্ট অসমীয়া কবি ও রবীন্দ্র অনুবাদক রত্নকান্ত বরকাকতী অসমীয়া সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব নিয়ে রবীন্দ্রজন্ম শতবর্ষে উৎসর্গিত সন্তোষচন্দ্র সেন সম্পাদিত গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে বিশদ আলোচনা করেছেন ।

লক্ষ্মীকান্ত বেজবরুয়ার একমাত্র পৌরাণিক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের ‘ কচ ও দেবযানী ‘ (১৯১১) নাটকের যথেষ্ট প্রভাব আছে । কাহিনি ও তার বিন্যাস দুই ক্ষেত্রে এক হলেও ড. হরিচন্দ্র ভট্টাচার্য তাঁর ‘ অসমীয়া নাট্য সাহিত্যের জিলিঙান ‘ গ্রন্থের একটি অধ্যায়ে (১৮৯ পৃ: দ্রষ্টব্য ) লিখেছেন :

‘রবি ঠাকুরের কচ দেবযানীর অভিশাপ শুনি শুনি দেবযানীকে আশীর্বাদ করি তেওঁর মনের উদারতা
আরু মহনুভবতার পরিচয় দিলে । কিন্তু বেজবরুয়ার কচ প্রতিশোধ পরায়ণ, দেবযানীর অভিশাপর উত্তরত তেওঁ অভিশাপে রেহে দিলে । ‘

পার্বতিপ্রসাদ বরুয়া-র ‘ লখিমী ‘ গীতিনাট্য রবীন্দ্রনাথের ঋতু নাটকের ঢঙে লেখা । শরতের উপস্থিতিতে প্রকৃতির আনন্দ এবং তার চলে যাওয়ার পর হেমন্তে লক্ষ্মীর আগমন —নাচে গানে ব্যক্ত হয়েছে । গানগুলি অনেকাংশেই রাবীন্দ্রিক ।

অসমীয়া ভাষায় রবীন্দ্রনাথের অনেকগুলি নাটকই অভিনীত হয়েছে । গুণগত মানে সেগুলি বেশ উচ্চ মানেরও বটে । রবীন্দ্রজন্ম শতবর্ষে ধিঙ সাহিত্য সভার উদ্যোগে ৮ই মে ১৯৬১ মঞ্চস্থ হয় ‘ ডাকঘর ‘ নাটক । ‘ মুক্তধারা ‘ ও ‘ মুকুট ‘ নাটক অভিনীত হয় তিনসুকিয়াতে । ‘ মুকুট ‘ নাটকটি অনুবাদ করেন সমরেন শইকিয়া । শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে সম্মানিত হন শশী হাজারিকা । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অসম হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হোলিরাম ডেকা । ১৯৬১ সালের জুন মাসে গুয়াহাটি গণনাট্য শাখা ‘ রক্তকরবী ‘ নাটক অভিনয় করে । ১৯৮৫ সালের ৮ ই মে ড্রামা অ্যাকাডেমি ইন্ডিয়ার নাট্য সমাবেশে কলকাতায় রবীন্দ্রনাটকের যে অনুষ্ঠান হয় তাতে ‘ চিত্রাঙ্গদা ‘ -র অংশ বিশেষ পরিবেশিত হয় অসমীয়ায় । চিত্রাঙ্গদার চরিত্রে ছিলেন লক্ষ্মী মুখার্জী ।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে হিন্দী নাট্যসাহিত্যের সম্পর্ক নির্ণয় করা অত্যন্ত দুরূহ কর্ম । কারণ রবীন্দ্রনাথের প্রায় সব নাটকই হিন্দীতে অগণিতবার অনুদিত হয়েছে । ১৮৯৫ সালে রবীন্দ্রনাথের ‘ চিত্রাঙ্গদা ‘ হিন্দীতে অনুবাদ করেন গোপালরাম গহমরী । যা ভারতীয় ভাষায় সম্ভবত সর্বপ্রথম রবীন্দ্র নাটকের অনুবাদ । হিন্দীতে রবীন্দ্র অনূদিত নাটকের একটি বর্ণানুক্রমিক তালিকা নিম্নে উল্লেখিত হল ।

১। অচলায়তন (য়া বিপ্লব ) — রূপনারায়ণ পাণ্ডেয় (১৯২৫)
২। অরূপরতন —রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬১)
৩। বিসর্জন —
ক) মুরারীদাস অগ্রবাল (১৯২৪)
খ ) গোপেশ্বর মেহরা (১৯২২)
গ ) নিরজা (১৯২৪)
ঘ ) রামচন্দ্র শুক্ল ( ১৯২৪)
ঙ) পি. সি. ওঝা ( ১৯৬৬)
চ ) ওমপ্রকাশ গুপ্ত (১৯৫৭)
৪। বাঁসুরী —
ক) রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬৪)
খ ) জ্বালাপ্রসাদ কেশর (১৯৬১)
৫। বিদায় অভিশাপ —
ক ) রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬৬)
খ ) শংকরদেব বিদ্যালঙ্কার (১৯৬২)
৬। বাল্মীকি প্রতিভা — রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬৬)
৭। ব্যঙ্গ কৌতুক —
ক ) মহাদেব সাহা (১৯৫৬)
খ ) এলাহাবাদ ইন্ডিয়ান প্রেস (১৯২৪)
৮। বৈকুণ্ঠের খাতা — ওমপ্রকাশ গুপ্ত (১৯৫৭)
৯। চণ্ডালিকা —
ক ) রামচন্দ্র শ্রীবাস্তব (১৯৪০)
খ ) রাধেশ্যাম পুরোহিত (১৯৫৬)
গ ) রাজেশ দীক্ষিত ( ১৯৪৬ )
১০। চিত্রাঙ্গদা —
ক ) গোপালরাম গহমরি (১৮৯৫)
খ ) নবরত্ন (১৯০৯)
গ ) গিরিধর শর্মা (১৯১৯)
ঘ ) মুন্সী আজমেরি (১৯২৮)
ঙ) রাজেশ দীক্ষিত (১৯৫৬)
চ ) শংকরদেব বিদ্যালঙ্কার (১৯৬২)
১১। চিরকুমার সভা —
ক ) নাথুরাম প্রেমী বোম্বাই (১৯২৮)
খ ) রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬২)
গ ) ভারত ভূষণ অগ্রবাল (১৯৬১)
১২। ডাকঘর —
ক ) রামচন্দ্র ও প্রভাস চন্দ্র নন্দী ( ১৯২০)
খ ) নয়ন দত্ত সহগল এন্ড সন্স (১৯৪৯)
গ ) রাধেশ্যাম পুরোহিত (১৯৫৮)
ঘ ) রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬১)
১৩। গান্ধারীর আবেদন —
শংকরদেব বিদ্যালঙ্কার (১৯৬২)
১৪। কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ — ওমপ্রকাশ গুপ্ত (১৯৫৭)
১৫। মুক্তধারা —
ক ) ধর্মেন্দ্র নাথ শাস্ত্রী (১৯২৫)
খ ) রামচরণ (১৯২৫)
গ ) রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬৪)
ঘ ) ওমপ্রকাশ গুপ্ত (১৯৫৭)
১৬। মুকুট — জনার্দন ঝা (১৯২২)
১৭। নটীর পূজা —
ক ) ভগবতী প্রসাদ চন্দোলা (১৯৩৯)
খ ) আগ্রা সাহিত্য রত্ন ভান্ডার ( ১৯৫৩)
গ ) রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬২)
১৮। ফাল্গুনী — রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬৪)
১৯। রক্তকরবী —
ক ) রাজেশ দীক্ষিত (১৯৫৮)
খ ) হাজারী প্রসাদ দ্বিবেদী (১৯৫৮)
গ ) জ্বালাপ্রসাদ কেশর (১৯৬১)
২০। রাজা — এস. এইচ. বাৎস্যায়ন (১৯৬৬)
২১। রাজা ও রাণী —
ক ) মুরারীদাস অগ্রবাল (১৯২৬)
খ ) রূপনারায়ণ পান্ডেয় (১৯৩৩)
গ ) ওমপ্রকাশ গুপ্ত (১৯৫৭)
২২। শ্যামা — রাজেশ দীক্ষিত (১৯৬৬)

রবীন্দ্রনাথ হিন্দী নাট্যসাহিত্যকে প্রবলভাবে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন । জয়শংকর প্রসাদ ( ‘এক ঘুঁট’ , ‘ কমলা’ , ‘ করুণালয় ‘ ) , মৈথিলীশরণ গুপ্ত ( ‘ অনথ ‘ ), সুমিত্রানন্দন পন্ত ( ‘ জ্যোৎস্না ‘, ‘ রজত শিখর’), সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী নিরালা ( ‘ পঞ্চবটী প্রসঙ্গ ‘) , সিয়ারামশরণ গুপ্ত (‘ কৃষ্ণা ‘ ), ভগবতীচরণ বর্মা (‘ তারা ‘ ) , জানাকীবল্লভ শাস্ত্রী ( ‘বাসন্তী ‘ ) , রামকুমার বর্মা, রামধরী সিংহ দিনকর (‘ রশ্মি রথী ‘ ), হংসকুমার তিওয়ারী (‘ কচ ও দেবযানী ‘ ), উদয়শংকর ভট্ট ( ‘মৎস্যগন্ধা ‘ ) প্রমুখ প্রথিতযশা নাট্যকার বিভিন্ন ভাবে রবীন্দ্র নাট্য সাহিত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন ।

রবীন্দ্রনাথের কত নাটক কতবার হিন্দীতে অভিনীত হয়েছে তার হিসেব করা অসম্ভব । দিল্লীর আই. পি. টি. এ রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রযোজনা করে ‘ রক্তকরবী ‘ নাটক । ১৯৭৬ সালে বোম্বাইয়ের ‘ নাট্যশিল্পী ‘ প্রযোজিত ‘ রক্তকরবী ‘ নাটক পরিচালনা করেন সুদর্শন শর্মা । তিনি নাটকে অধ্যাপকের ভূমিকায় অভিনয় করেন । রাকা ভাদুড়ি নন্দিনীর ভূমিকায় অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দেন ।

রবীন্দ্রনাথের ১২৫ তম জন্মজয়ন্তীতে ‘ সংগীত কলা মন্দির ‘ অনবদ্য সাফল্যের সঙ্গে পরিবেশন করেন ‘ রক্তকরবী ‘ ( ‘লাল কনে ‘ ) নাটক । পরিচালনায় ছিলেন কুমার রায় । রাজার ভূমিকায় প্রতাপ জয়সয়াল ও নন্দিনীর ভূমিকায় উমা মেহতা এবং বিশু পাগলের ভূমিকায় অশোক সিং বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন ।

এলাহাবাদ রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদযাপন সমিতির উদ্যোগে দুটি রবীন্দ্র নাটক হিন্দীতে প্রযোজিত হয় । ‘ পুরস্কার ‘ (ব্যালে ) ও ‘ তাস নগরী ‘ । পরিচালনায় ছিলেন অনুকূল বন্দ্যোপাধ্যায় ।

রবীন্দ্রনাথের ‘ গোরা ‘ হিন্দীতে উপস্থাপিত করে দুঃসাহসের পরিচয় দেন প্রয়াগ রঙ্গ মঞ্চ । নাট্যরূপ দেন জীবনলাল গুপ্ত । পরিচালনায় ছিলেন সত্যব্রত সিনহা । যিনি গোরার ভূমিকায় অভিনয় করেন । ‘ নষ্টনীড় ‘ উপন্যাস ‘ চারুলতা ‘ নামে নাট্যরূপ দেন কমলেশ্বর । ১৯৬১ সালে দিল্লীতে এই নাটক প্রযোজনা করেন লিটল থিয়েটার গ্রুপ অফ দিল্লী । পরিচালনায় ছিলেন শিবেন্দ্র সিনহা । ভূপতি ও চারুর ভূমিকায় অভিনয় করেন রাজেশ্বর নাথ ও প্রতিমা বৈষ্ণব । অমল চরিত্রে অভিনয় করেন ডি. ভি. নন্দ । ১৯৭১ সালে দিল্লী দূরদর্শন থেকে এই নাটক সম্প্রসারিত হয় ।

শ্যামানন্দ জালানের পরিচালনায় কৌশিক দত্ত শর্মা অনুদিত হিন্দী ভাষায় ১৯৮৭ সালে কলকাতায় মঞ্চস্থ হয় ‘ ক্ষুধিত পাষাণ ‘ নাটক । ‘ কাবুলিওয়ালা ‘ নাটক ১৯৬১ সালে বোম্বাইয়ের জুহু আর্টস থিয়েটার প্রযোজনা করেন । নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন প্রখ্যাত অভিনেতা বলরাজ সাহনী । ১৯৬১সালে অনামিকা নাট্য সংস্থার প্রযোজনায় কলকাতায় অভিনীত ‘ ঘরে বাইরে ‘ (ঘর ঔর বাহার ) উপন্যাসের নাট্যরূপ দেন প্রতিভা অগ্রবাল । ‘ মুক্তধারা ‘ অনুবাদ করেন কবি ভারতভূষণ অগ্রবাল । প্রয়োগ সংস্থা, দিল্লী প্রযোজিত ও এম. কে. রায়না পরিচালিত এই নাটক ১৯৭৭ সালে অভিনীত হয় ভূপালে । চিত্রতারকা বৈজয়ন্তীমালার প্রযোজনা ও অভিনয়ে একাধিক প্রদর্শনী হয় ‘ চণ্ডালিকা ‘ নৃত্যনাট্য ।

১৯৯১ সালে এলাহাবাদের রূপকথা গোষ্ঠী মঞ্চস্থ করে ‘ ডাকঘর ‘ নাটক । হিন্দী অনুবাদ করেন অসীম মুখার্জী । পরিচালক পরিমল দত্ত । ১৯৯৭ সালে বোম্বাইয়ের পৃথ্বী থিয়েটারে মকরন্দ দেশপান্ডের পরিচালনায় ‘ চিত্রা ‘ মঞ্চস্থ হয় । চিত্রাঙ্গদার ভূমিকায় অভিনয় করেন সঞ্জনা কাপুর ।

গুজরাতের সাহিত্যে ও নাটকে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে । গুজরাতের বরেণ্য লেখক উমাশংকর জোশী এবং প্রখ্যাত নাট্যকার শিবকুমার জোশী তাঁদের বিভিন্ন গ্রন্থে ও লেখায় রবীন্দ্রনাথের অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন । মূলতঃ গান্ধীজীর প্রয়াসেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গুজরাতের প্রথম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে । গান্ধীজীর একান্ত অনুগত সঙ্গী মহাদেব দেশাই ১৯১৫ সালে সর্বপ্রথম নরহরি পারিখের সহযোগিতায় অনুবাদ করেন ‘ চিত্রাঙ্গদা অণে বিদায় অভিশাপ ‘ । ১৯২৪ সালে গিরিধারী কৃপালিনী ‘ অচলায়তন ‘ নাটকের অনুবাদ করেন । ১৯৩২ সালে ‘ রাজা ‘ নাটকের অনুবাদ করেন স্বামী সেবানন্দ । এগুলি ছাড়া নিম্নে গুজরাতি ভাষায় অনূদিত আরো কিছু রবীন্দ্র নাটকের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা উল্লেখিত হল ।

১। ডাকঘর –মঞ্জু লাল যমনাদাস দভে (১৯১৬)
২। মুক্তধারা — কর্ষণদাস মানেক (১৯২২)
৩। বে বালে নাটকো — ঐ (১৯২৪)
৪। ঐ — নহনালাল নাথভাই শাহ (১৯২২)
৫। মালিনী — নরসিং রামভাই ভক্ত (১৯২৪)
৬। বিসর্জন —নগীনদাস পারিখ (১৯২৪)
৭। নটীনী পূজা –ঐ (১৯৬১)
৮। লক্ষ্মীণী পরীক্ষা — ঐ (১৯৩২)
৯। গৃহপ্রবেশ — ঐ (১৯৩২)
১০। মফতিয়া জলপানি (বিনি পয়সার ভোজ) –ঐ (১৯৩২)
১১। অন্ত্যেষ্টি সৎকার —ঐ (১৯৩২)
১২। বিসর্জন — বাচুভাই শুক্ল (১৯২৪)
১৩। একাংকী নাটকো —- রমনিলাল জয়চাঁদ দলাল (১৯৫০)
চিত্রা, সন্ন্যাসী, রাজা রাণী, মালিনী, রথযাত্রা, বলিদান
১৪। হাস্যকৌতুক অণে ব্যঙ্গকৌতুক — রমণলাল সোনী (১৯৪৫)
১৫। কচ অণে দেবযানী — জীবনলাল অমরশী মেহতা (১৯৪৫)
১৬। চার একাংকী —চন্দ্রকান্ত মেহতা (১৯৩২)
শাস্তি > সজা }
শেষের রাত্রি > মাসী }
শ্যামা } রেডিও নাট্য রূপান্তর
ফাল্গুনী }
১৭। চিরকুমার সভা (কৌমার অসম্ভবম ) —হকুমত দেশাই ( ১৯৫৫)

গুজরাতি নাট্য সাহিত্যের ওপর রবীন্দ্রনাথের প্রভাব বহু ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট । উমাশংকর জোশির ‘কর্ণকৃষ্ণ ‘(১৯৪০), ‘ গান্ধারী ‘ (১৯৪৩), ‘১৯ মা দিবসনু প্রভাত ‘ (১৯৪২), ‘রতি মদন ‘ (১৯৪৩) প্রভৃতি রচনা অনিবার্যভাবে পাঠককে মনে করিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথের কথা ।

বিশিষ্ট গুজরাতি লেখক কৃষ্ণলাল শ্রীধরাণী শান্তিনিকেতনের ছাত্র ছিলেন । তাঁকে প্রতীকবাদী নাটকের প্রথম লেখক বলা হয় । তাঁর ‘ বড়লো ‘ (১৯৩১ / বট গাছ ), ‘ মোরণা ইন্ডা’ (১৯৩৪), ‘ ‘সোনা পরী ‘ প্রভৃতি নাটকে রবীন্দ্র প্রভাব পাওয়া যায় । সনাতন বুচ রচিত কচ-দেবযানীর কথা নিয়ে পৌরাণিক নাটক ‘ সঞ্জীবনী ‘ -তে রবীন্দ্রনাথের ‘ বিদায় অভিশাপ ‘ নাট্যকাব্যের প্রভাব আছে ।

গুজরাতে রবীন্দ্রনাথের নাটক খুবই জনপ্রিয়, বিশেষত নৃত্য নাটক । শান্তিনিকেতনের ছাত্র বাচুভাই শুক্ল শান্তিনিকেতনী রীতিতে নৃত্যনাট্য গুজরাতে জনপ্রিয় করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা নেন । ১৯৩১ সালে বোম্বাইয়ের শহরতলী ভিলে পার্লেতে অবস্থিত পিউপিলস ওন স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা গুজরাতিতে ‘ ফাল্গুনী ‘ নাটক অভিনয় করে । ত্রয়োদশী ইন্দিরা গান্ধী এই নাটকে অভিনয় করেন ।

বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী মৃণালিনী সারাভাইয়ের পরিচালনায় ‘ দর্পণ ‘ নাম্নী নৃত্যনাট্য সংগীত প্রতিষ্ঠান ১৯৫৭ সালে ‘ চিত্রাঙ্গদা ‘ ও রবীন্দ্রজন্ম শতবর্ষে ‘ তাসের দেশ ‘ প্রযোজনা করেন । ভারতনাট্যম রীতিতে গ্রথিত ‘ ভানুসিংহের পদাবলী ‘ তাঁদের একটি অভিনব প্রযোজনা । ১৯৮৬ সালে রবীন্দ্রনাথের ১২৫ তম জন্মজয়ন্তীতে কলকাতায় গুজরাতি ভাষায় অনুদিত নাটক ‘ রক্তকরবী’ , ‘ বিসর্জন ‘ , ‘ রথের রশি ‘ ( মহাকালনী রথ ) অভিনয় হয় ।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কেরলের সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ । কবিগুরুর আকর্ষণে কেরালার মানুষেরা শান্তিনিকেতনে আসতেন । বিশ্বভারতীর প্রভাব কেরলের মালয়ালী ছাত্রদের ওপর ছিল বেশ ভালো রকমই । রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং দক্ষিণ ভারতের সনাতন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অনুরাগী ছিলেন । শান্তিনিকেতনে তিনি কথাকলি নৃত্যের প্রবর্তন করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর কিছু নাট্য প্রযোজনায় কথাকলির বিশেষ প্রয়োগ দেখা যায় । এই প্রসঙ্গে কবির সঙ্গে মহাকবি বল্লত্তোলের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য উল্লেখনীয় ।

১৯১৮ সালে মলয়ালম ভাষায় রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘ চিত্রাঙ্গদা ‘ প্রথম অনুবাদ করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র অনুরাগী বাংলা ভাষায় সুদক্ষ ভি. উন্নিকৃষ্ণণ নায়ার । কেরালা সাহিত্য অকাদেমি মলয়ালম ভাষায় রবীন্দ্র সাহিত্য অনুবাদ কার্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে । নিম্নে রবীন্দ্র নাটক অনুবাদ কর্মের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা উল্লেখিত হল ।

১। চিত্রাঙ্গদা –ভি. উন্নিকৃষ্ণণ নায়ার (১৯১৮)
২। কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ — ঐ (১৯২৬)
৩। ডাকঘর ( তিরুভেলুত্তু) –কে. সি. পিল্লা (১৯৩৫)
৪। নর্তকী পূজা — এম. নারায়নন (১৯৫২)
৫। চিত্রাঙ্গদা (সাফল্যম ) — এনড্রুস চেরিয়ান (১৯৫৭)
৬। কাবুলিওয়ালা — এ পি পি নামপুতিরি (১৯৬১)
৭। চিত্রা — মলয়েশ কে রামকৃষ্ণ পিল্লা ( ১৯৬১)
৮। ঐ — কে. ভি. মনলিককর (১৯৬৭)

এগুলি ছাড়াও ‘ বিসর্জন ‘ , ‘ বিদায় অভিশাপ ‘ , ‘ চিরকুমার সভা ‘ , গান্ধারীর আবেদন ‘ , ‘ হাস্যকৌতুকম ‘ , ‘ মুক্তধারা ‘ , ‘ রক্তকরবী ‘ , ‘ রাজা ‘ নাটক বিভিন্ন সময়ে মলয়ালম ভাষায় অনুদিত হয়েছে ।

মলয়ালম ভাষার প্রতীকী নাটক, গীতিধর্মী নাটক বা ভাবধর্মী নাটকে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । বিশিষ্ট মলয়ালম লেখক কবি কুমারণ আসান তাঁর ছাত্রজীবনের বেশ কয়েক বছর কলকাতায় ছিলেন । তাঁর রচিত দুটি নাট্যধর্মী আখ্যান কাব্য ‘ নলিনী ‘ (১৯১১) ও ‘ লীলা ‘ (১৯১৪) এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম পর্যায়ের লেখা ‘ কবি কাহিনী ‘ (১৮৭৭)-র সাদৃশ্য ও প্রভাব আছে ।

কৈনিক্কর কুমার পিল্লা রবীন্দ্রনাথের ‘ মোহমুক্তি ‘ অবলম্বনে প্রতীকধর্মী নাটক রচনা করেছেন । তাঁর ‘ মহাভূম মুক্তিয়ূম ‘ (১৯৫১) অনুরূপ একটি সৃষ্টি । কবি নাট্যকার জি. শঙ্কর কুরুপ আর একজন গভীর রবীন্দ্র অনুরাগী । তাঁর প্রতীকাশ্রয়ী ও রূপকধর্মী নাটক ‘ সন্ধ্যা ‘ ‘ ইরুট্টিনুমুমপু ‘ (অন্ধকারের আগে )-এ রবীন্দ্রনাথের প্রবল প্রভাব লক্ষ্যণীয় । রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা ও কেরলের কথাকলি এই দুয়ের মিশ্রণে এন. ভি. ওয়ারিয়রের ‘ আট্ট কথা ‘ (নৃত্য নাট্য ) ‘চিত্রাঙ্গদা আট্টকথা ‘ (১৯৬২) ১০টি দৃশ্যে বিন্যস্ত এক অনুপম সৃষ্টি ।

রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন নাটক মলয়ালম ভাষায় অভিনীত হয়েছে । ১৯৬১ সালে মাদ্রাজের মিউজিয়াম থিয়েটারে অভিনীত হয় ‘ মাস্টার মশাই ‘ । প্রযোজক সংস্থা ছিলেন কেরালা সমাজ । ১৯৮৬ সালে কলকাতায় ‘ রাজা ‘ নাটকের অংশ বিশেষ উপস্থাপিত করেন মারিয়াম কোশী । রবীন্দ্রনাথের ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কলকাতায় অনুষ্ঠিত রবীন্দ্র নাট্য সভায় কেরালার তরুণ শিল্পী জোস চিরামেল বিস্ময়কর দক্ষতার সঙ্গে ‘ বিনি পয়সার ভোজ ‘ ( ওসিয়িল ওরু ভিরুনতু ) অনুবাদ, প্রযোজনা ও অভিনয় করেন । ঐ বছরই ‘ চিত্রাঙ্গদা ‘ ভি. উন্নিকৃষ্ণণ নায়ারের মলয়ালম অনুবাদে মঞ্চস্থ হয় । অভিনয়ে অংশ নেন অর্জুন –এন এম জন এবং চিত্রাঙ্গদা — বিজয়লক্ষ্মী নায়ার । কথাকলি নৃত্য আঙ্গিকে ‘ শ্যামা ‘ নৃত্য নাট্য দিল্লী, কেরল, কলকাতা ইত্যাদি দেশের বহু স্থানে অভিনীত হয় ।

ঊনবিংশ শতক থেকেই বাংলা ও মহারাষ্ট্রের মধ্যে একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । রবীন্দ্রনাথ বোম্বাই গেছেন অনেকবার । তিনি মরাঠী সাহিত্যের রস আস্বাদন করেছেন । তাদের বীর ও বীরাঙ্গনাদের নিয়ে মহারাষ্ট্রে বসে লিখেছেন ‘ প্রকৃতির প্রতিশোধ ‘ এবং ‘ রাজা ও রাণী ‘ । মরাঠী লোকগীতির উপাদান নিয়ে ‘ সতী ‘ কাব্যনাট্য রচনা করেছেন ।

১৯২৪ সালে মরাঠী ভাষায় সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথের নাটক ‘ মুক্তধারা ‘ অনুবাদ করেন শিবরাম গোবিন্দ ভাবে । মরাঠী ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্র নাটকের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে উল্লেখিত হল ।

১। মুক্তধারা –শিবরাম গোবিন্দ ভাবে (১৯২৪)
২। ঐ — কৃষ্ণজী লক্ষ্মণ সোমন (১৯২৬)
৩। চিত্রাঙ্গদা —
ক ) চিত্রা — হেমচন্দ্র (১৯২৬)
খ ) কৃষ্ণ মুকুন্দ উজলম্বকর (১৯৬৪)
৪। বিসর্জন —
ক) অর্জুন সীতারাম কেলুসকর (১৯৪৪)
খ ) ভার্গবরাম বিঠঠল (মামা) ওয়রেরকর (১৯৪৪)
গ ) ‘মাতেতুলা কায় হবয় ‘ –জি.কে.ভট্ট (১৯৪৪)
ঘ ) ‘অনন্ত্যাচা আরাধনেত আনি যজ্ঞ ‘ — ডি.ভি. তেন্ডুলকর (১৯৪৪) ( এতে আছে বিসর্জনের গদ্য একাংকরূপ, ৩৬ পাতা )
৫। ডাকঘর —
ক ) কাশীনাথ বিনায়ক ভাগবত (১৯৩০)
খ ) রত্নাকর মতকরী (১৯৬০)
৬। কাবুলিওয়ালা —
ক ) হনুমন্তরাও গো. মোর (১৯৫৭)
খ ) নারায়ণ গো শুক্ল (১৯৬১)
৭। মালিনী — ডি. এল. অডোনি (১৯৬২)

এগুলি ছাড়াও ‘ মুকুট ‘ , ‘ রক্তকরবী ‘ , ‘ রাজা ‘ ‘ কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ ‘ , ‘ গান্ধারীর আবেদন ‘ , ‘ বিদায় অভিশাপ ‘ নাটকগুলি অনূদিত হয়েছে ।

মরাঠী নাটকে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব কম বেশি প্রত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষ ভাবে পাওয়া যায় । কবি শশাঙ্ক রচিত ‘ শশীকলা ‘ নাটক রবীন্দ্রনাথ অনুসরণে লেখা । রবীন্দ্রনাটকের বিখ্যাত অনুবাদক মামা ওয়ারেরকর ‘ ভূমিকন্যা সীতা ‘ (১৯৫০) নাটক লিখতে প্রেরণা লাভ করেছেন ‘ কাবে উপেক্ষিতা ‘ থেকে । তিনি স্বয়ং সে কথা স্বীকার করেছেন : ” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরাণী ‘কাব্যান্তীল উপেক্ষিতা ‘ যা লেখান্ত উর্মিলেচা উল্লেখ কেলা আহে আনি তিচ্যাবদ্দল সহানুভূতি প্রদর্শিত কেলী আহে । ” অনুরূপ দৃষ্টান্ত বসন্ত কানেটকর, পু. ল. দেশপান্ডে প্রমুখ লেখক নাট্যকার । প্রথিতযশা নাট্য ব্যক্তিত্ব বিজয় তেন্ডুলকর তাঁর ‘ অঞ্জী ‘ নাটকে নায়কের মুখে রবীন্দ্রকবিতার ব্যবহার করেছেন ।

মরাঠী রবীন্দ্রনাটকের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিনয় হয়েছে । ১৯৫৫ সালে ‘ কাবুলিওয়ালা ‘ নাটক মঞ্চস্থ হয় । কাবুলিওয়ালার ভূমিকায় অভিনয় এবং নাটক পরিচালনা করেন নাট্যকার স্বয়ং হনুমন্তরাও গো মোরে । সরোজিনী কমতনুরকর অনূদিত নাটক ‘ মালিনী ‘ প্রযোজনা করেন আনন্দ বিলাস সংগীত নাটক মন্ডলী মহারাষ্ট্র । বোম্বাইতে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজনে অভিনীত হয় রঙ্গায়ন গোষ্ঠীর রত্নাকর মতকরী কৃত ‘ ডাকঘর ‘ নাটকের মরাঠী অনুবাদ ‘ রাজাচে পত্র ‘ । পরিচালক বিজয় মেহতা । অমলের ভূমিকায় অভিনয় করেন সুরেশ পধ্যে । রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে ‘ বিসর্জন ‘ নাটক মঞ্চস্থ করে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল থিয়েটার । অধ্যাপক জি. কে. ভট্ট নাটক অনুবাদ করেন ‘ মাতে, তুলা কায় হবয় ? ‘ (মা তুমি কি চাও ) । বোম্বাইতে বিড়লা থিয়েটারের ঘূর্ণায়মান মঞ্চে নাটকটি মঞ্চস্থ হয় । প্রবীণ মরাঠী অভিনেতা নানাসাহেব ফাটক রঘুপতির ভূমিকায় অভিনয় করেন । পরিচালক ছিলেন আত্মারাম ভেন্ডে । ১২৫ তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সংগীত কলামণ্দির আয়োজিত অনুষ্ঠানে অধ্যাপিকা বীণা আলাসে অনূদিত ‘ কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ ‘ পরিবেশন করেন মরাঠী সাহিত্য মন্ডলের অরুণ হোসিং ও অরুণা হোসিং । সংগীত নাটক অকাদেমি আয়োজিত অনুরূপ উৎসবে দিল্লীতে সুলভা দেশপান্ডের পরিচালনায় বোম্বাইয়ের ‘ আবিষ্কার ‘ সংস্থা প্রযোজিত মরাঠী ভাষায় অনূদিত নাটক ‘ ডাকঘর ‘ । অমলের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেন প্রণতি প্রধান ।

ভারতবর্ষ বহু ভাষা বহু সংস্কৃতির দেশ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন এক অলোকসামান্য কিংবদন্তী স্বরূপ মহীরুহ সাহিত্য ব্যক্তিত্ব, যে তাঁর অনন্য সাহিত্যের
প্রভাব দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক । সুতরাং এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, উপরে উল্লেখিত কয়েকটি রাজ্য তথা ভাষার গন্ডির বাইরেও এক বিশাল রবীন্দ্র প্রভাবিত এলাকা আছে, যেসব স্থানের সংশ্লিষ্ট আলোচনার বহুলাংশে অবকাশ থাকলেও সঙ্গত কারণে স্থানাভাবে সম্ভব হল না ।

2 thoughts on “প্রবন্ধঃ বহির্বঙ্গে রবীন্দ্রনাটক – মধুসূদন দরিপা

  1. ওড়িয়া, আসামী, হিন্দি, গুজরাটি, মালয়ালাম, মারাঠি, ইত্যাদি ভাষায় রবীন্দ্র নাটকের চর্চা সংবাদ এবং তথ্যগুলি এভাবে পরিবেশন করা অত্যন্ত ধন্যবাদ যোগ্য উদ্যোগ।

Leave a Reply to Krittika Bhaumik Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *