বৈশাখী দিন
শুভ্র কান্তি মজুমদার
এখন আমি একটা পোড়া কাঠ,
ভেতরে ভেতরে ভেঙে চুরমার।
যে সমস্ত বিষয় নিয়ে মানুষ অনেক কথা বলেছে,
সে সমস্ত বিষয়ের আলোচনায় আর কর্ণপাত করিনা।
যে সমস্ত বিষয়ে ইতিমধ্যে অনেক কথা বলে ফেলেছি,
সেই বিষয়ে ও কথা বলিনা আর।
একটা মাথা গোঁজার ঠাই আছে বলে,দীর্ঘদিন একভাবে পড়ে আছি মাথা গুঁজে।
কিছুই ভালো লাগেনা আর, পছন্দের খাদ্য পানীয়, ভ্রমণ,
এসব ইচ্ছে যেন কর্পূরের মত উবে গিয়ে বাতাসে মিশে গেছে।
আলোচনাসভা,চায়ের কাপে তুফান তোলাও এখন যেন বিরক্তিকর।
এখন কেদারায় বসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি পিছনের
বাড়ির গাছের দিকে,কখন সেই চেনা ল্যাজঝোলা পাখিটা এসে
তার প্রিয় ডালে এসে বসবে, নেচে কুঁদে একসা করবে আমাকে
দেখিয়ে দেখিয়ে, যেন বলবে দ্যাখ জীবন কেমন করে উপভোগ করতে হয়।
কখনো কখনো এসবও একঘেয়ে মনে হয়, তখন বেরিয়ে পড়ি, জঙ্গলের দিকে।
আশিঘর মোড় পার হয়ে পেল্লাই কারখানাটাকে ডানদিকে রেখে ,
ঠিক সাহুনদীর সেতুর আগে যে চায়ের দোকান, সেখানে বেঞ্চে
গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসি, গাছটা তখন আমার প্রেমিকা।
আমাকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসে।
আমি চা খেতে খেতে উল্টো দিকে মাকালীর মন্দিরের দিকে মুখ করে
বিগ্রহের দিকে তাকিয়ে থাকি যদি ভক্তি আমাকে গ্রাস করে।
এখানেও দেবী আমাকে প্রত্যাখ্যান করেন, আমি ভক্তিরসেও ভাসতে পারিনা।
বেঞ্চে হেলান দিয়ে চা খেতে খেতে আমার মনে পড়ে তাঁদের কথা,
তিনি লিখেছিলেন চুপ করো! মৌণ হও।
তার কথা শুনেছিলাম, কিছুই বলিনি তার চলে যাওয়া নিয়ে।
বলতামই বা কি? কতটুকুই বা জানি তাঁর কথা, এসব তিনি জানতেন বলেই
যেন আমাকে লিখেছিলেন, চুপ করো! শব্দ কোরোনা,মৌণ হও।
আর মাত্র এক একজন আমাকে বলেছিলেন, তুমি লেখ, তুমি লিখতে পারবে।
তাঁরাই শিখিয়েছেন আমাকে কি ভাবে শুনতে হয় রবীন্দ্রনাথের গান।
শঙ্খ আর শিবেন ঘোষ, এই দুজন
তাঁদের কথা ভাবার পর পরই,আমি কল্পনায় ধরে নিয়ে আসি
মাইকেল জ্যাকসনের সাউন্ড আ্যরেঞ্জারকে।
ওঁর ঘ্যামা সাউন্ড বক্সগুলো বসিয়ে দিই, বৈকূণ্ঠপুর জঙ্গলের আনাচে কানাচে,
সাহুনদীর সেতুর নীচে, আরো কত জায়গায়!
আধুনিক মোবাইল সংযোগ করে দিই সেই সাউন্ড সিস্টেমের সাথে।
সারা বৈকূণ্ঠপুর জঙ্গলে গমগম করে বাজতে থাকে রবি গান।
কখনো মোহন সিংহের কন্ঠে, কখনো বা সুচিত্রা মিত্র,বা আরো কেউ কেউ।
ক্রমে ক্রমে জাগতে থাকে প্রাণ আমারই প্রাণে।
তখন বুঝতে পারি, আসলে যতটুকু বেঁচে আছি মনে,আমার প্রাণভোমরাটি যেন আটকে আছে
রবি ঠাকুরের এমনতরো গানে।
গান শুনতে শুনতে ভাবতে থাকি, আমার যে দিন গেছে ভেসে চোখের জলে,
তারপর মনে মনে তোমাকেই বলি, শেষ গানেরই রেশ নিয়ে যাও চলে, শেষ কথা যাও বলে।
এভাবেই কাটে আমার বৈশাখী দিনের মাঝে আরো একটি পঁচিশে বৈশাখ।
ভীষণ সুন্দর লাগল।এক অপূর্ব চিত্র দেখতে পেলাম।❤️🙂
অমেয় শুভকামনা ও কৃতজ্ঞতা রইলো আপনার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে। 🙏
ভীষণ ভালো লাগল।