ভালোবাসার মেঘ ঘনিয়ে আসে…
সুধন্যা
আরও একটা ছন্দহীন দিন! আজ যখন ভোর এলো কোকিলটার সঙ্গে আমিও জেগে… ক্লান্ত দুজনে ই, সে কুহুতানে আর আমি স্তব্ধতায়! আকাশের কোলে তখন রঙিন কারসাজি ধরতে শুরু করেছে… রাতের তারার গলিপথ দিনের আলোর গভীরতার অভিমুখে….
সকাল থেকে বেলা ,বেলা গড়িয়ে দুপুর, দুপুরে থেমেছে বিকেলে… এখন সন্ধ্যে ভেজাচ্ছে রাতের পায়ের পাতা! বাড়ির কাজকর্ম, টিভির আপডেট, সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুতা, ফোনের আলাপ প্রলাপ ছাপিয়ে দেখা হয়ে যায় দুটো বিনুনি করা এক কিশোরীর সঙ্গে! এক সময় তার আর আমার ঠিকানা এক ছিল; এখন সে প্রবাসে… সুদূর পরবাসে! গল্পের বইয়ের ভাঁজে তার এলোমেলো চশমা, আলগোছে কবিতার লাইন, হাতের মুঠোয় বন্ধুদের আড্ডার স্পন্দন,প্রচুর প্রচুর বলতে চাওয়া আর কিচ্ছুটি না বলতে পারার আক্ষেপ আর স্বপ্ন ভেজা দুটো চোখ…. আমার একলা মুহূর্তগুলোতে সে ড্রইংরুমের করিডোর দিয়ে হেঁটে বেড়ায়! আত্মবিশ্বাস তার শরীরের কানায় কানায়, অবসাদ তাকে কখনও স্পর্শ ই করতে পারেনি! পুতুল নাচের ইতিকথার কুসুম তাকে সাহস যোগায়, অপু দুগ্গা র আগাছার জঙ্গল তাকে হাতছানি দেয়, নিতাই কবিয়াল তাকে ছন্দ শেখায়….
আজ যখন কিছু মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না বলে বিবর্ণতার ভাঁজে মলিন, কিছু মানুষ ঘরে ফিরতে চেয়ে অসহায়… কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবির চ্যালেঞ্জে মেতে উঠেছে, কেউ তার বিপক্ষে প্রতিবাদে মুখর… আমি ঠিক করতে পারিনা কাকে সমর্থন করবো, আর কাকেই বা না! আসলে আমরা তো কেউই ভুল নই… সকলে নিজের মতো করে ভয়ের খোলস থেকে বের হতে চাইছি; চাইছি থমকে যাওয়া সময় টা কে একটু এগিয়ে দিতে… আসলে আমরা সবাই তো ঘর হারা; কেউ রাস্তায়, কেউ বাড়িতে ঘর খুঁজেই চলেছি….
আর যে মেয়েটির গল্প এতক্ষণ ধরে বললাম, তার কিন্তু একটা ঘর ছিল, নিজের মতো ঘর, ছিমছাম গোছানো! সে আমার সামনে দিয়ে হেঁটে চলেছে… অথচ তাকে ছুঁতে পারছি না… আর ওই যে বললাম, ঠিকানাটাও না হারিয়ে ফেলেছি… কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না, কিছুতেই না….