মুক্তগদ্যঃ দোল উৎসব -ভূমিকা গোস্বামী

দোল উৎসব
ভূমিকা গোস্বামী

ফাগুনের নবীন আনন্দে প্রকৃতি সেজেছে। কৃষ্ণচূড়া পলাশ শিমুল আকাশে আবির ছড়িয়েছে। উৎসবের আয়োজন বনে বনে। গাছে গাছে ফুলে ফলে পাতায় পাতায় তার প্রকাশ। প্রকৃতির অংশ প্রতিটি মানুষের মনেও রং এর পরশ।

উৎসব মানেই মিলন। আর দোল উৎসব হল মিলনের উৎসব। আনন্দের উৎসব।
এটাই মানুষের স্থিতি। ক্রোধ , হিংসা, রেষারেষি করতে করতে ক্লান্ত মানুষকে প্রকৃতি মা স্বরূপ চেনাতে এমন করে বনে বনে আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে রাঙিয়ে দেন। আর যেন ডেকে ডেকে বলেন– ওরে আমার শ্রেষ্ঠ বাছারা দ্বার খুলে একবার বাইরে এসে দাঁড়া। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখ — সব ভেদাভেদ ভুলে ভালবাস।

দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে দোল খেলেছেন গোপীদের সাথে।

এই উৎসব সকলের কাছে পৌঁছে গিয়েছে প্রেমের ঠাকুর শ্রী চৈতন্য দেবের জন্য। পাঁচশো বছর আগে ১৪৮৬ খৃষ্টাব্দে দোল পূর্ণিমায় সন্ধ্যায় নবদ্বীপে জগন্নাথ মিশ্রের ঘরে বিশ্বম্ভরের জন্ম হয়। শচীমায়ের কোল আলো করে এলেন প্রেম বিলাতে গৌরহরি। এত প্রেম তিনি পেলেন কোথায় ?

কৃষ্ণ সুখৈক তাৎপর্য হল রাধারাণী। রাধারাণীর হৃদয়ে শ্রীকৃষ্ণের জন্য রাখা সমস্ত প্রেম লুট করে রাধারাণীর অঙ্গকান্তি নিয়ে গৌরহরি এসেছেন। জনে জনে বিলাতে হবে যে। দ্বারে দ্বারে। মধুর হরিনামের মধ্যে দিয়ে ।

চৈতন্য চরিতামৃত -তে সেদিনের বর্ণনা দিয়ে কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন–

চৌদ্দশত সাত শকে, মাস সে ফাল্গুন।
পূর্ণমাসীর সন্ধ্যাকালে হৈল শুভক্ষণ।।

4 thoughts on “মুক্তগদ্যঃ দোল উৎসব -ভূমিকা গোস্বামী

  1. সত্যি, শ্রীগৌরাঙ্গ তথা শ্রীচৈতন্যদেব ভিন্ন আজকের বাংলার মানুষ এই বর্তমান ঐক্যবদ্ধ সহনশীল সমত্ববোধের ও সকল মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর উন্নত মানসিকতা সহ এই জায়গায় পৌঁছতে পারতো কিনা সন্দেহ হয়। জয় গৌর।

  2. দিওয়ালির মতো আলোর উৎসব প্রাচীন ইহুদি জাতিতেও প্রচলিত আছে। কিন্তু দোলের মতো রঙের উৎসব পালন অন্যত্র বিরল। দোল পালন ভারতীয়দের বৈশিষ্ট। এ আমাদের গর্বের। আমরা যেন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত পৃথিবীতে আমাদের উদার ভালোবাসার রং ছড়িয়ে দিতে পারি। তবেই দোলের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সার্থক হবে বলে মনে করি। সুন্দর লেখার জন্যে লেখিকাকে ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *