মায়েদের দিন
ভূমিকা গোস্বামী
প্রেসক্রিপশন দেখে ছেলেটি বলল–ম্যাম্ , সব গুলোই পাবেন শুধু তিন নম্বর টা কিন্তু পাওয়া যাবে না। পিউ জানে প্রেসারের এই ওষুধটা সব দোকানে রাখে না। ঈশান কে ওষুধের দোকানে বসতে বলে, ও যে দোকান থেকে সবসময় ওষুধ নেয় সে দিকেই পা বাড়াল।
আকাশ থেকে যেন আগুন ঝড়ছে। মার্চের আজ আট।এখনই এত তাপ ! ব্যাগ থেকে ফোল্ডিং ছাতাটা বের করে খুলল। মনে মনে বলল – এই রোদের মধ্যে ঈশান আসতে পারত না। ভাল হয়েছে দোকানে ফ্যানের নিচে বসে আছে।
পিউর থেকে চোদ্দ বছরের বড় ঈশান এখন আশি ছুঁই ছুঁই। বয়সের থেকে একটু বেশিই বুড়িয়েছে ও।
পিউ ছয়েয় কোঠায় হলেও অত্যন্ত কর্মঠ। ছেলেরা কর্মসূত্রে দূরে যাওয়ার পর থেকে আরও যেন বেশী চটপটে হয়েছে ও।
বিউটি পার্লারের দ্বারস্থ না হয়েও ঘরোয়া সামান্য পরিচর্যাতেই ঝলমলে। নির্মেদ শরীর আর পজেটিভ ভাবনাই বোধহয় ওর এই ঝলমলে থাকার রহস্য।
ওষুধ নিয়ে জোরে পা চালায় পিউ। বাঁ হাত ঘুরিয়ে হাত ঘড়িতে দেখল – সারে এগারো। আজ সকালে ঈশানকে ডাক্তারের কাছে রুটিন চেক আপে আনতে হবে , তাই ব্রেকফাস্ট করেই চলে এসেছে। বাড়ি ফিরে রান্না করতে হবে। মনে মনে ভাবল – কালকের ডাল , পণির ভাপা আর টমেটোর চাটনি আছে ফ্রীজে। বাড়ি ফিরে পোষাক পাল্টে , গায়ে জল ঢেলে তাড়াতাড়ি ভাত বসাতে হবে। আলু ,পটল, বেগুন ভেজে ঈশানকে খেতে দিতে হবে। ডাক্তারবাবু বললেন- একটার মধ্যেই ওকে দুপুরের খাবার দিতে।
দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে পিউ ঈশানকে। ঈশানের সামনে দু-তিনটে লোক।
দোকানের সামনে আসতেই লোকগুলো পিউকে সরাসরি বলল — কী ব্যাপার ম্যাডাম ? একটা বয়স্ক মানুষকে এভাবে বসিয়ে রেখে ঘুরতে বেরিয়েছেন। পড়ে গিয়েছেন। যদি ভাল মন্দ কিছু হত। কেমন স্ত্রী আপনি ? আরো কী কী সব বলছিল । ফ্রীতে বয়স হলে বাচ্চাদের মতো দেখে রাখার পরামর্শও।
কী বলবে পিউ ! বুঝে ওঠার আগেই দোকানের ছেলেটি ধমকে উঠল – থামুন আপনারা। না জেনে শুনে মন্তব্য করছেন। কাকু পান খেয়ে পানের পিক ফেলতে নর্দমার কাছে গিয়ে বসে পড়েছেন। কিছুই হয় নি । আমিই তো তুললাম। এতে কাকিমার কী দোষ ?
পিউ দেখল – দোকানে ঝোলানো ক্যালেন্ডারে আট তারিখটা । লালকালি দিয়ে গোল করে নিচে লেখা মায়েদের দিন।
দারুন, খুব ভালো লাগলো।
খুব ভালো লাগলো
ভীষণ ভাল লাগল গল্পটা।
জীবন থেকে নেয়া এমন অনু বা ছোটগল্প ভাল না হয়ে যায় না। লেখিকা ধন্যবাদার্হ।
গদ্যটি এত ঝরঝরে, ছবিটি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আমার চারপাশ, চারপাশের মানুষজন এবং তাদের নিয়ন্ত্রণহীন ভাবনা।… ভালো লাগলো।
সুন্দর লেখা