মুক্তগদ্যঃ দক্ষিণে আছেন দক্ষিণ রায়, বনবিবিরা – রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

দক্ষিণে আছেন দক্ষিণ রায়, বনবিবিরা
রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

একবার সুন্দরবন লঞ্চ যোগে বেড়ানোর সুযোগ হয়েছিল। দুদিনের জন্য। মাঝপথে চালক নির্ধারিত পথে না গিয়ে ভুল পথ ধরেছিলেন। আমরা মরিচঝাঁপি, সাত মোহনায় চলে গিয়েছিলাম। উত্তর মুখী জোয়ারের টানে শুধু বাঁদিকে ডাঙ্গা, অন্য সবদিকে শুধু জল আর জল। একটাও কাক পক্ষী কোথাও নেই। বাঁদিকে কাদা মাটিতে কিছু পর পর বাঁশ বা গাছের ডালে গেঞ্জির বা গামছার বা কাপড়ের টুকরো বাঁধা দেখতে পেয়ে বুঝলাম, সংলগ্ন দ্বীপে কোন বাঘ মানুষ মেরেছে, সেটা বোঝাতেইএই সব চিহ্ন। সাবধান, বাঘ সক্রিয় এখানে। সতর্ক দৃষ্টি ছিল তাই। সত্যিই কিছু দূরে বাঘ দেখা গেল। লঞ্চের ভটভট আওয়াজ আর ‘ বাঘ বাঘ ‘ আমাদের চেঁচামেচিতে আমাদের দিকে এক লহমা তাকিয়েই বাঘটি পাশের বনে পালিয়ে গেল। আরও একটা বাঘকে দেখেছিলাম আমাদের দিকে এক লহমা তাকিয়ে বনের মধ্যে অদৃশ্য হতে।
তাহলে সুন্দরবনে মানুষরা সাক্ষাৎ মৃত্যুর সঙ্গে বাস করেন কিসের বা কার ভরসায়?

মনে পড়ে যায়, দক্ষিণে আছেন বনবিবি আছেন দক্ষিণ রায় এরকম অনেক লৌকিক দেবী ও দেবতা, যেখানে প্রকৃতির তৈরী হিংস্র বাঘ ঘুরে বেড়ায়। জল জঙ্গল পরিবেষ্টিত এই অঞ্চলের মানুষববা জীবিকার সন্ধানে মোম, মধু, কাঠ, বুনো হাঁসের ডিম, নদী-খাড়িতে মাছ-চিংড়ি-কাঁকড়া ধরার বিচিত্র পেশায় নিয়োজিত সারা বছর ধরে পূজা-হাজোত দেন দক্ষিণ রায়কে। পূজার স্থান যেখানে সেখানে বা কোন গাছ তলায় বা মন্দিরে বীর যোদ্ধার মূর্তির প্রতি পুজো দিয়ে এই সব মানুষ কয়েক শ বছর ধরে জীবিকার সন্ধানে বের হন। বেশির ভাগ থানে দক্ষিণ রায়ের সঙ্গে তাঁর মা নারায়ণীকে দেখা যায়। ধপধপি গ্রামের দক্ষিণ রায়ের মন্দিরের খুব খ্যাতি আছে।

এই মা নারায়ণীই মা বনবিবি নামে প্রচারিত। মা ও ব্যাটার পূজা না দিয়ে অধিবাসীরা সাধারণত সুন্দর বনের জঙ্গলে প্রবেশ করেন না। ব্যাঘ্র দেবতা দক্ষিণ রায় ‘ বারা ঠাকুর ‘ নামেও পূজিত হন। জানা যায় মধ্য যুগে এক শত বারা বা পঞ্চাশ জোড়া বারা বা মুণ্ড মূর্তি পূজার প্রচলন ছিল। সেই থেকে শতবারা বা বারাশত বা বারাসত শব্দটি প্রচলিত হয়েছে, মনে করা হয়।

এই দুই দেবী ও দেবতা ছাড়া সুন্দরবন অঞ্চলে আছেন মৎস্য দেবতা মাকাল ঠাকুর, যিনি এই অঞ্চলের প্রথম সারির দেবতা। কথায় আছে :-
” ভাত মাছ খেয়ে বাঁচে বাঙালি সকল।
ধান ভরা ভূমি তাই মাছ ভরা জল।।”
(বিজয় গুপ্ত)
এছাড়া, এই অঞ্চলে পূজা পান পাঁচু ঠাকুর যিনি শিশু সন্তান রক্ষা করেন। অনেক মা সম্ভবা মহিলা সন্তান জন্ম দেবার আগেই গর্ভে সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এই মৃতবৎস্যা মায়েরা পাঁচু ঠাকুরের মানত করে সুস্থ সবল সন্তান লাভ করেন বলে গ্রামের মানুষের বিশ্বাস।

কালু রায় হলেন কুমীর দেবতা যাঁর হাতে টাঙ্গি ও কোমরে অন্যান্য অস্ত্র শস্ত্র আর পীঠে তীর ধনুক। বনঝাউ ফুলের নৈবেদ্য সাজিয়ে পুজো দেয়ার রীতি ছিল।

আটেশ্বর দেবতা হলেন বাদাবনের গ্রামের রক্ষক দেবতা। বীর যোদ্ধার মতো এই লৌকিক দেবতা যাঁর মাথায় পাগড়ি, ঘাড়ের নীচ পর্যন্ত বাবরি চুল, মালকোচা মেরে পরা কাপড়, বাঁহাত মুষ্টিবদ্ধ, ডান হাতে মুগুর যাতে শিকড় বাকড়ের অমসৃণ কাঁটা কাঁটা অংশ থাকে। একে ছাটা-মুগুর বলা হয়। বাঘের আক্রমণ প্রতিরোধে জঙ্গলে প্রবেশকারীরা ছাটামুগুর সঙ্গে নিয়ে থাকেন আটেশ্বর দেবতার অনুকরণেই।
গ্রাম্য ছড়া এখনও শোনা যায়:-
” জয় বাবা আটেশ্বর।

হুঁকো ছেড়ে কলকে ধর।।”

বাবাঠাকুর পঞ্চানন্দ লৌকিক দেবতার প্রচার আজও আছে। ধর্মঠাকুর বা ধর্মরাজ ঠাকুরের সঙ্গে এঁর অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বীর পুরুষের চেহারায় মিশ্রিত দেবতাকে সাজানো হয়েছে।

জ্বরনাশক জ্বরাসুর। এঁর বিচিত্র দেহাবয়ব। গায়ের রঙ ঘন নীল, তিনটি মাথা, নয়টি চোখ, ছয়টি হাত, তিনটি পা নিয়ে অসংখ্য থানে শীতলা, মনসা, দক্ষিণ রায়, আটেশ্বর, পঞ্চানন্দ, বসন্ত রায়, ধর্মঠাকুর প্রভৃতি লৌকিক দেবদেবীর মত শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রচুর পূজা পেয়ে থাকেন।
বসন্ত রায় ব্যাধি নিয়ন্ত্রক দেবতা রূপে পূজার প্রচলন আছে। কার্তিকের মত সৌন্দর্য নিয়ে এই লৌকিক দেবতার পূজা হয় বিভিন্ন শীতলা থানে। কামলা, গলগণ্ড, কোরণ্ড, সন্নিপাত, বাত, উদরি, ফোঁড়া, গোদ, কুষ্ঠ, পীলে, হাম, বসন্ত প্রভৃতি রোগে এই লৌকিক দেবতার স্মরণ করা হয়। শীতলার বাৎসরিক পূজায় তাঁর পুত্ররূপে বসন্ত রায়েরও পূজা করা হয়।

শীতলা দেবী বহুল প্রচলিত দেবী। এই সুন্দরবন ছাড়িয়ে তাঁর প্রচার গ্রামে শহরে পক্স বা বসন্ত রোগে ভুক্তভোগীমাত্রই শীতলা দেবীকে মান্য করে থাকেন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় বিশেষ ভাবে এই দেবীর প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।এখন এই অঞ্চলের অধিবাসীরা বিশ্বাস করেন মা শীতলা সর্ব ব্যাধি নিরাময়কারী। নিত্য পূজায় পূজা করেন কুলবধূরাই। দুপুরে অন্যান্য দেবী ও দেবতাদের পূজার মত নৈবেদ্য, মিস্ট দ্রব্য ও সন্ধ্যাকালে ভেজনো ছোলার সঙ্গে গুড়ের বাতাসা সাজিয়ে দেয়া হয়। মাহাত্ম্য প্রচার মূলক শীতলা পালা বা জাগরণ গান গায়েনরা পরিবেশন করেন। অনেক জয়গায় এই পূজা উপলক্ষে মেলাও বসে।

সর্পদেবী মনসাকে মনসামঙ্গল কাব্যে শিবকন্যা পদ্মাবতী বলা হয়। একসময় সাপের বিষ হরণ করেন বলে এঁকে বিষহরি নামেও পূজা করা হোত। ঘটে বা মূর্তিতে প্রতি ভাদ্রমাসে মনসার ভাসান, মনসা মঙ্গল, পদ্মপুরাণ পাঠের প্রচলন জানা যায়। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে বার্ষিক পূজা করা হয়। অনেকেই এই দিনে রান্নাপূজা পূজার আয়োজন করেন।

কৃষি দেবতা বেনাকি, আকৃতিতে সরিসৃপের মত। লোক বিশ্বাস, বেনাকি হলেন শস্য দেবী লক্ষ্মীর সহচর দেবতা। এঁর মূর্তি চিৎ হয়ে শোয়ানো, চারটি পা ও একটি লম্বা লেজ সহ। আরও জানা যায়, মূর্তির দুদিকে কাদা দিয়ে তৈরি গোলাকার পিণ্ড, তাদের উপরে ছোট লম্বা পিণ্ড। গ্রামীণ মানুষের বিশ্বাস, প্রাচীন শষ্যের দেবী দুর্গার কনিষ্ঠ পুত্র গণেশের মুণ্ড কাটা পড়লে অদৃশ্য হয়ে এক সরিসৃপের কাঁধে চেপে বেনাকি ঠাকুরের সৃষ্টি হয়েছিল। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তির দিন বেনাকি ঠাকুরের পূজাকে ‘ হালকাটা’ পূজা বলা হয়।

ধর্মরাজ বা ধর্মঠাকুর বিশাল আকারের হন। বুদ্ধদেবের মত সৌম্য মূর্তি ছাড়াও কূর্মাকৃতি শিলায়, যাঁকে ধর্মশিলা বলা হয়, তাতে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমায় ধর্মরাজ ঠাকুরের জাঁতাল পূজা উপলক্ষে মেলা বসে, ধর্মের গাজন উৎসব পালন করা হয়। কুলবধূরা মাটির সরাতে পাকা খেজুর, তালশাঁস, লিচু, জাম, জামরুল ইত্যাদি ফলের সঙ্গে জিবেগজা, সন্দেশ, নকুল দানা, বাতাসা, পাটালি নৈবেদ্য সাজিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে ধর্মঠাকুরের সামনে নিবেদন করতে এগিয়ে যান। কেউ কেউ ওল, মানকচু, শামুক চূণ, শ্বেত চামর দিয়ে নৈবেদ্য সাজান। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন ধর্মঠাকুর পূজার রীতি দেখে অনেকে প্রচ্ছন্ন বুদ্ধপূজা মনে করেন।

গ্রামের দেবতা রাখাল ঠাকুর গ্রামের মানুষেদের কাছে এক আদরের দেবতা বলে মান্য করা হয়। কৃষ্ণ কথায় আছে – ব্রজের রাখাল, গোপবৃন্দপাল,চিত্তহারী বংশীধারী ” বা – দামোদর বৃন্দাবন গোবৎস রাখাল “। রাখাল ঠাকুর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার লোকধর্মে শ্রীচৈতন্য সময় থেকে পূজিত হয়ে আসছেন। মাহিষ্য, করণ, ধোবা, সদগোপ, রাজবংশী, কাওরা, বাগ্দী সম্প্রদায়ের অনেক মানুষের মধ্যে তাঁর পূজা হয়ে আসছে গোচারণ ভূমিতে বা অনাড়ম্বর মাটির ঘরে।

মা বিশালাক্ষী কৃষিজীবি, জলজীবি আর জঙ্গল জীবিদের মধ্যে। বিশেষ করে কৃষক, ধীবর, মউলে বা মউলি ও বাউলে সম্প্রদায়ের মানুষরা সঙ্গে পূর্ব বঙ্গ থেকে ও মেদিনীপুর থেকে আসা মানুষরা বিশালাক্ষী দেবীর পূজা করেন সঙ্গে থাকেন সুন্দরবনের অন্যান্যরাও। জানা যায়, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের ‘বৃহৎ তন্ত্রসার’ গ্রন্থ ছাড়া অন্য কোনো প্রাচীন শাস্ত্রে বিশালাক্ষী, বাঁশুলী নাম পাওয়া যায় না। বজ্রযান বা সহজা যানীদের উপাস্য বৌদ্ধদেবী পরে গুপ্ত আমলে ব্রাহ্মণ্যধর্মের সঙ্গে যুক্ত হন। পিতলের বা কাঠের বা মাটির বা শিলাখণ্ডে যন্ত্রমূর্তিতে পূজা হয়ে থাকে। পূজাকে কেন্দ্র করে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে সারা জেলায় ধূমধাম চলে। দেবীর পূজা সাধারণত, পৌন্ড্র, কাওরা, বাগ্দী, নমঃশূদ্র, মাহিষ্য, জালিয়া কৈবর্ত, গোয়ালা, নাপিত, ধোপা, মুচি, হাড়ি, কামার, দলুই প্রভৃতিদের মধ্যে চোখে পড়ে। জানা যায়, গঙ্গাসাগর তীর্থ যাত্রীদের কাছে এক সময়কার দানশীল প্রবাদপুরুষ হিসাবে খ্যাত ঈশান চন্দ্র কামার একটি মন্দির নির্মাণ করে দেন। আরও কয়েকটি মন্দিরের অস্তিত্ব আছে এই জেলায়। দেবীকে জঙ্গল জননী নামেও আখ্যা দেয়া হয়।

বিবিগাজী পীরপিরানী হলেন বাদাবনের অধিষ্ঠাত্রী বনবিবি । হিন্দুদের কাছে ইনি মায়ের আসনে শত শত বছর ধরে পুজো পেয়ে থাকেন থানে, মন্দিরে। অন্য ধর্মের চিত্তও জয় করেছেন এই লৌকিক দেবী। অভিজাত মুসলমানী এই দেবী একজন বিলাসিনী। তিনি উচ্চ কোটির আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পন্না মহীয়সী মাতৃমূর্তির মহিমায় মুগ্ধ আপামর হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে কৃষিজীবি, সাধারণ ক্ষেতমজুর, বাউলি, মউলি, শিকারী, নিকারী, বুনো পাটনী নিত্য স্মরণ করেন মা বনবিবিকে। লোককবি গেয়েছেন :-
” আঠার ভাটির মাঝে আমি সবার মা।
মা বলি ডাকিলে তাঁর বিপদ থাকে না।
বিপদে পড়ি যেবা মা বলি ডাকিবে।
কভু তারে হিংসা না করিবে।”
বনবিবির মাহাত্ম্য মূলক কয়েকটি মুসলমানী কাব্যের রচনা করেছেন মুন্সী মোহাম্মদ খাতের, মোহাম্মদ মুন্সী সাহেব, মুন্সী বয়নদ্দীন যাঁর রচিত ‘ বোনবিবির জহুরনামা ‘ বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছিল। এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এই দেবীর বাবা ছিলেন এব্রাহিম ফকির, মা গুলালবিবি, ভাই শা জাঙ্গলি। লোক সংস্কৃতির একটা বিশেষ জায়গা জুড়ে আছেন বনবিবি।

বড় খাঁ গাজী একসময় ইসলাম প্রচারক। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হলেও বনবিবি, দক্ষিণ রায়, নারায়ণী, শা জাঙ্গলীদের সঙ্গে সুন্দরবনের সব ধর্মের সাধারণ মানুষের কাছে পূজা পেয়ে থাকেন। ‘ রায় মঙ্গল ‘ কাব্যে দক্ষিণ রায়ের সঙ্গে বড় খাঁ গাজীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়ে পরে সন্ধিচুক্তি হয় আর তাতে মৈত্রীর উদ্ভব হয়। কোন ভেদাভেদ সুন্দরবনের সাধারণ মানুষের মধ্যে আর নেই।

এছাড়াও ঘুটিয়ারী শ‍রীফের পীর মোবারক গাজী, ভাঙ্গর পীর, বিবিমা সাত বোন, নয় বিবিমা, দক্ষিণ বারাসতের শতর্ষা গাজী, রায় নগরের রক্তা খাঁ, তাজপুরের বামন গাজী, নালুয়া গ্রামের তাতাল গাজী, গৃহপালিত পশুরক্ষক মানিক পীর, মথুরাপুরের বরখান গাজী, মাদারপাড়ার নূরমহাম্মদ বিভিন্ন অলৌকিক শক্তিধর পীর সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি ভালোবাসায় নির্ভয় থাকেন সুন্দরবনের অগণিত মানুষ। ধর্মের ভেদাভেদ, জাতি বর্ণ বৈষম্য হীন সব তুচ্ছ করে সুন্দরবনের সব মানুষ সাক্ষাৎ মৃত্যু রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে এড়িয়ে জলে জঙ্গলে জীবনযাত্রা এগিয়ে নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। একত্রে মিলেমিশে থাকায়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলায় অভ্যস্ত সুন্দরবনের তথা সমগ্র দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মানুষেরা থাকেন ভয়হীন হয়ে। তাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁদের সঙ্গে রক্ষা করার জন্য আছেন একান্ত নিকট জনের মত লৌকিক দেবতা ও দেবীরা।

দুদিনের পর্যটন সাঙ্গ করে আমাদের লঞ্চ এসে থামল বসিরহাট স্টেশনের কাছাকাছি। পেছনে ফিরে দেখলাম ইছামতি নদীর এদিকে অজস্র ভারতীয় পতাকাসহ লঞ্চ নৌকার যাতায়াত আর পূর্ব দিকে ওপাড় ঘেঁষেও অজস্র নৌকা লঞ্চের যাতায়াত চলছে বাংলাদেশের পতাকা সহ। পেছন থেকে আমাদের ক্যাপটেন প্রলয়দা তাড়া দিলেন — বারাসতের লাস্ট ট্রেন কিন্তু ছেড়ে চলে যাবে। তাড়াতাড়ি পা চালাও সবাই।”

সূত্র ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার : দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার লৌকিক দেবদেবী-বিবিগাজী-পীরপিরানী ও লোকসমাজ। রচনা – ধূর্জটি নস্কর (লোক সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব গবেষক)। তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ‘ পশ্চিমবঙ্গ ‘ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা সংখ্যা, ১৪০৬। ১৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি এবং ৩, ১০ ও ১৭ মার্চ ২০০০।

3 thoughts on “মুক্তগদ্যঃ দক্ষিণে আছেন দক্ষিণ রায়, বনবিবিরা – রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

  1. অনেক অজানা কথা জানলাম। এই ধরনের লেখা পড়তে খুব ভালো লাগে।

    1. জানার আছে। নিম্নবর্গের মানুষের জীবন এবং যন্ত্রণা থেকে গজিয়ে ওঠা দেবতার পুজোর উপাচার, আচার, পাঁচালী, লৌকিক ইতিহাসের এক অনন্য উপাদান। শুধু ইতিহাস কেন, মানবীয় ভূগোলের‌ও অমূল্য সম্পদ। এ বিশদ গবেষণার বিষয়। ফলে নাল্পে সুখমস্তি।

Leave a Reply to Soma Sengupta Mukherjee Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *