কবিতাঃ গাছ পাখির সিনেমা – অনিরুদ্ধ সুব্রত

গাছ পাখির সিনেমা
অনিরুদ্ধ সুব্রত

একটা গাছ, গাছে ডালপালা
একদিন এক পাখি এসে বসল তাতে
খুব ভাব হলো গাছটার পাখির সাথে,
জ্যোছ্নায় ভেজে চরাচর
পাখি গান শোনায় রাতভর, গাছটাকে
সারাদিন ডানা ঝাপটায়, ঠোঁট ঘসে
গাছের গায়
একটা পাখি আর একটা চিরহরিৎ গাছ
ক্রমে মিশে যায় ।
ক্লোরোফিলে আর কাকলিতে
নভনীলে উড়ন্ত সেই প্রত্ন স্বপ্ন
গাছটা নতুন করে দেখতে পায়
পালকের নৃত্য, সংগীত বাজে শাখা প্রশাখায়
তবু যে তারপর…
সেই অরণ্য ভূমিতে আসে
প্রবল গ্রীষ্ম, গ্রীষ্মাচার
সোজা হয়ে পড়ছে তখন প্রচণ্ড সূর্য
দাহ খুঁজছে শুকনো পত্র, যন্ত্রণার স্ফুলিঙ্গ
তারও পর…
একদিন দাবানলের সম্ভাবনা ঘনায়
বাতাসে লু বয়ে যায়
কেঁপে ওঠে বিটপ, শিকড় কান্ডময়
পাখি কষ্ট পায় ।
একদিন ভোর হতে পাখি উড়ে চলে যেতে চায়
সে কথা সে বলে গাছকে ডেকে
সবুজ পাতায় ঠোঁট রাখে, বলে গাছ তুমিও ওড়ো
চলো দোসর দূরে, যতদূরে নেই এ দগ্ধ ভয়
গাছ বলে, কিন্তু আমার ডানা কোথায় ?
চুপ করে থাকে পাখি
খোঁজে ডানা গাছময়
বলে পাতাদেরই ডানা করো মহাশয়
তারপর এই আমার মতো ওড়ো,
মৃদু ম্লান গাছ হাসে, নিজেকে ছুঁয়ে যেতে যেতে
পাখিকে বলে, দ্যাখো পাতারা গজায়
পাতারা মরে
আমার ক্ষুদ্র এ সহস্র ডানার সাধ জাগা
না-ডানারা স্বপ্ন দেখে, ঝরে
পাখি মানে না তবু, ভাবে পাতারাও একদিন
ঠিক সমবেত ডানা হবে
শাখায় সাঁতরাবে গাছ ,এই অরণ্য পেরিয়ে
বন্ধু গাছ পাখির সঙ্গে যাবে।
ভালবেসে তাই পাখি
আরও আরও দিন আরও আরও রাত্রি
অপেক্ষা করে
গাছকে সে গ্রীষ্ম প্রান্তর ছাড়িয়ে
বহুদূর দেশে নিয়ে যাবে—
সে দেশ নাতিশীতোষ্ণ, শান্ত, শীর্ণ নদীর পার
সে বসন্ত দেশে সারা দুপুর পাখি গাছ দোহের দোসর।
সারা বিকেল কথা কবে
সারারাত আকাশ সাঁতারাবে।
অথচ বিলম্বিত সে অবকাশে
এগিয়ে আসছে লেলিহান বাতাসে
অনতি দূর দাবানল
আগুন আসছে ধেয়ে,
পাখি উদ্বিগ্ন, তৎপর, ঠোঁটে তার দুরন্ত টান
প্রিয়তম গাছকে আপ্রাণ সে উড়তে শেখাবে ।
কিন্তু তারপর…
তারপর যা হওয়ার, তা-ই হবে
অগণিত থেকে একটি পাখি আর অরণ্যের একটি গাছ
এ তাদের সর্বনাশের খবর,
মানুষের না জানলেও চলবে।

2 thoughts on “কবিতাঃ গাছ পাখির সিনেমা – অনিরুদ্ধ সুব্রত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *